যেভাবে চাঞ্চল্যকর স্কুলছাত্র হাসানকে খুন করে এরশাদ

অপমানের প্রতিশোধ নিতে পারিবারিক বিশ্বস্ত গাড়িচালকই খুন করে হাসানকে। হাসানের কটুকথা আর চড় থাপ্পড়ের প্রতিশোধের ক্ষোভেই এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবেই একাই এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটায় গাড়িচালক এরশাদ। গতকাল বিকালে মৌলভীবাজার পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের ঘটনাটি তুলে ধরেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পিবিআই) মো. শাহাদাত হোসেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন  মামলার তদন্তকারী (পিবিআই) কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক শিবিরুল ইসলাম ও পুলিশ পরিদর্শক (পিবিআই) আতিকুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় মৌলভীবাজারের বড়লেখায় স্কুলছাত্র আব্দুল্লাহ হাসান (১৫) হত্যার ঘটনায় জড়িত তাদের ব্যক্তিগত গাড়িচালক এরশাদ মিয়া আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ঘটনার প্রায় পৌনে চার মাস পর সূত্রবিহীন চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মৌলভীবাজারের কর্মকর্তারা। জানা যায় হত্যাকাণ্ডের প্রায় তিন মাস আগে হাসান তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চালক এরশাদকে চড় মারে। আব্দুল্লাহ হাসান সিলেটের মোগলাবাজার থানাধীন মনির আহমদ একাডেমিতে ৮ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করত। এরশাদ তাকে ওই স্কুল থেকে আনানেয়া করত। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে বড়লেখা হতে আব্দুল্লাহ হাসানকে মনির আহমদ একাডেমিতে নিয়ে যাওয়ার পথে গোলাপগঞ্জ থানাধীন চন্দরপুর পেট্রোল পাম্পের পাশের দোকান থেকে কেক ও ড্রিংকস কেনার জন্য গাড়ি থামায়। তখন গাড়ি দাঁড় করাতে গিয়ে এরশাদ হাসানের ডান পায়ের উপর গাড়ির চাকা উঠিয়ে দিলে তার পা ছিলে যায়। এ নিয়ে হাসান গাড়ি চালক এরশাদের সঙ্গে কথাকাটির একপর্যায়ে থাপ্পড় মারে। এ নিয়ে হাসানের উপর এরশাদের প্রচণ্ড রাগ হয় এবং তাকে হত্যার প্রতিজ্ঞা নেয়। পরে এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য হাসান গাড়ি চালকের নিকট কয়েকবার ক্ষমাও চায়। কিন্তু এরশাদ ক্ষমা করেনি। ঘটনার প্রায় তিন মাস পর সুযোগ বুঝে তাকে হত্যা করে এ অপমানের প্রতিশোধ নেয় এরশাদ।
যেভাবে হাসানকে খুন করে এরশাদ: ঘটনার কিছুদিন পূর্বে তার পিতা মাতার অসুস্থতার অজুহাতে এরশাদ হাসানদের বাড়িতে থাকা তার পরিবারকে ঢাকার পাঠিয়ে দেয়। ঘটনার দিন ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখ বাজারে গিয়ে এরশাদ হাসানকে অনুসরণ করতে থাকে। হাসান তখন মোহাম্মদ নগর বাজারে ছিল। সন্ধ্যার পর এরশাদ জ্যাকেটের ভিতর খাসিয়া দা’ কোমরে গুঁজে মান্নার দোকানে বসে থাকে। পরবর্তীতে সে হাসানের পিছু নেয়। রাত অনুমান সাড়ে নয়টায় বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসানের বন্ধু জাবের, তারেক, জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে সে বিদায় নেয়। হাসান বাড়ির দিকে যেতে থাকলে এরশাদ হাসানকে বলে ভাতিজা তোমার সঙ্গে আমার জরুরি কথা আছে। চলো আমরা একটু সামনে যাই। মোবাইলের আলোতে তারা দুইজন আরব আলীর টিলায় ওঠে। তখন এরশাদ বলে ভাতিজা তোমার কি মনে আছে সিলেটে যাওয়ার সময় তুমি আমাকে চড় থাপ্পড় মেরেছিলে? হাসান বলে, চাচা তখন আমার মাথা ঠিক ছিল না। এরশাদ তখন রাগান্বিত হয়ে বলে যে, আমি তোমাদের ড্রাইভার বলে কি পচে গেছি? হাসান ভয় পেয়ে টিলা হতে চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়ালে এরশাদ তাকে চড় থাপ্পড় মারতে থাকে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে এরশাদ তার নিজের কাছে থাকা দা দিয়ে এলোপাথাড়ি ৪-৫টি কোপ মারে। কোপের তোড়ে সে টিলার ঢালুতে জাপানি লতায় পেঁচিয়ে নিচে পড়ে গুঙ্গাতে থাকে। ওখানেই সে মারা যায়। তার মৃত্যু নিশ্চিত হলে ওখান থেকে এরশাদ চলে যায়। ওই ঘটনার কয়েক মাস পর সে চাকরি ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে ছদ্ম বেশ ধারণ করে।

No comments

Powered by Blogger.