নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধি দলের কাছে রোহিঙ্গা বর্বরতার চিত্র তুলে ধরবে বাংলাদেশ by মিজানুর রহমান

রোহিঙ্গা নিধন নিয়ে স্বীকারোক্তি মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের
রাখাইন ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরজমিন দেখতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে আসা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধি দলের কাছে বর্মী নৃশংসতার করুণ চিত্র তুলে ধরবে ঢাকা। তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে এটি তুলে ধরা হবে। নিরাপত্তা পরিষদ বরাবরই রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরব। সেখানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের জন্য পশ্চিমা বিশ্ব প্রস্তাব আনলেও চীন ও রাশিয়ার আপত্তিতে তা আটকে যায়। এবারের প্রতিনিধি দলের চীন-রাশিয়াসহ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিই থাকছেন। তাদের কাছে ঢাকার অবস্থান ও চাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। একই মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বভূমে টেকসই প্রত্যাবাসনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতা ও স্বাধীন অনুসন্ধানের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হবে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ সংখ্যক নির্যাতিত নারী-পুরুষ ও শিশুর সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময়ের আয়োজন থাকছে। সেখানে তারা ভিকটিমদের মুখ থেকে সরাসরি বর্মী বর্বরতার লোমহর্ষক ঘটনাগুলো শুনতে পারেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন- কক্সবাজারের উখিয়াস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ছাড়াও নো-ম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের বাসিন্দাদের অবস্থাও সরজমিন দেখানো হবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের। পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন এবং অস্থায়ী ১০ সদস্যের দূতরা আগামী ২৯শে এপ্রিল বাংলাদেশে পৌঁছাবেন। তারা এখানে দু’দিন কাটাবেন। সেগুনবাগিচার কূটনীতিকরা জানিয়েছেন- প্রতিনিধি দলের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বা স্থায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও দেশগুলোর এ অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কূটনীতিকদের অনেকে ওই সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন। সফরের প্রথম দিনেই (২৯শে এপ্রিল) তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও নো-ম্যান্সল্যান্ডের কাছাকাছি এলাকা সরজমিন ঘুরে দেখবেন। ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের সাক্ষাৎ-বৈঠক ও মতবিনিময় হবে। ৩০শে এপ্রিল সেই সব বৈঠকাদি হওয়ার সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। ওই দিন সরকার প্রধান তার পূর্বনির্ধারিত অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরবেন। আর তার সঙ্গে বৈঠকের জন্যই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের প্রস্তাবিত ঢাকা সফর দু’দিন পেছানো হয়েছে। পূর্বের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২৭-২৮শে এপ্রিল সফরটি হওয়ার কথা ছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিউ ইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঢাকায় আসার আগে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ইরাক সফর করবেন। ২৬শে এপ্রিল থেকে তাদের যাত্রা শুরু হবে। যা শেষ হবে ১লা-২রা মে মিয়ানমার সফরের মধ্য দিয়ে। নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি (এপ্রিলের জন্য) জাতিসংঘে নিযুক্ত পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত গুস্তাভো মেজা-সুআদ্রা চলতি মাসের শুরুতে রাখাইন ও কক্সবাজার সফরের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এই সময়ে ইরাক সফরের কথাও জানান। সভাপতি সুআদ্রা সেই সময় সাংবাদিকদের বলেন, সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিষয়টি তাদের সফরের মূল ফোকাস। নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদের মিয়ানমার সফরে অং সান সুচি সরকার সবুজ সংকেত দিয়েছে জানিয়ে সুআদ্রা সে সময় বলেন- পরিষদ সদস্যরা রাখাইন রাজ্য সফরে আগ্রহী। কিন্তু মিয়ানমার সেই সুযোগ দেবে কি-না? তাদেরকে সেই অনুমতি দেয়া হবে কিনা- তা তখন নিশ্চিত হয়নি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো মেজা সুয়াদ্রা গণমাধ্যমকে এ-ও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা আশা করছেন তারা মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইন রাজ্য সফর করতে পারবেন। মিয়ানমার সরকার তাদের অনুমতি দেবে। ওই রাজ্যে বিদ্রোহীদের দমনের নামে বর্মী সেনারা বর্বর কায়দায় যে অভিযান চালিয়েছে তা থেকে প্রাণে বাঁচতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে এখনো কিছু রোহিঙ্গা রয়েছেন। সেই সময়ে নিরাপত্তা পরিষদ সভাপতি বলেন, রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি দেখার চেয়ে তাদের সফরে ভালো কিছু আর হতে পারে না। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই সফরকে আয়োজন করছে বৃটেন, কুয়েত ও পেরু।

No comments

Powered by Blogger.