খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খারাপ: স্বজনরাও সাক্ষাৎ করতে পারেননি -ফখরুল

কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি তার স্বজনেরা। বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে দেয়নি বলে জানিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা আমাদের চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারাগারে গেলেও চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের তারা বলেছেন, ম্যাডাম উপর থেকে নিচে নামতে পারছেন না। ফলে তার শারীরিক অবস্থা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। আমাদেরও দেখা করতে দেয়া হয়নি। কারা কর্তৃপক্ষের কাছে ম্যাডামের এই অবস্থার কথা শুনে পরিবারের সদস্য ও স্বজনেরা খুবই উদ্বিগ্ন বলে আমাকে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরাও উদ্বিগ্ন। এর আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার বোন সেলিনা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দারের ছেলে অভি, বড় ছেলে তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানু ও তার মেয়ে শাহিনা খান জামান বিন্দু গতকাল বিকাল ৪টার দিকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান। প্রতি শুক্রবার পরিবার ও স্বজনদের সাক্ষাতের নির্ধারিত সময়সূচি থাকলেও এবার তার ব্যত্যয় ঘটে। কারা কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গেলেও তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে, এ ব্যাপারে কারা কর্তৃপক্ষের তরফে কোনো বক্তব্য আসেনি। এর আগে ১৫ই এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।
এদিকে সন্ধ্যায় নয়াপল্টনে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, আমরা গত কয়েক দিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের বিষয়ে অবহিত করেছি। আজ (শুক্রবার) বিকালে তাঁর পরিবারের সদস্যরা কারাগারে দেখা করতে গেলে গুরুতর অসুস্থ থাকায় বেগম জিয়া তাদের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। তার পা, হাঁটুসহ সারা শরীরে ব্যথা এতটাই তীব্র হয়েছে যে, তিনি তাঁর জেল কক্ষ থেকে ওয়েটিং রুম পর্যন্তও আসতে পারেননি। আজ বিকেল সোয়া চারটা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করার পর কারা কর্তৃপক্ষের লোকেরা পরিবারের লোকজনদেরকে জানায় বেগম জিয়া অসুস্থতার কারণে দেখা করতে পারবেন না। সুতরাং কারা কর্তৃপক্ষও স্বীকার করলো যে, বেগম জিয়া অসুস্থ। আমরা দেশনেত্রীর অসুস্থতার বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও গড়িমসি নিয়েও বারবার অবহিত করেছি। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোন সাড়া দেয়নি। বরং দেশনেত্রীকে নিয়ে সরকারের অশুভ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। সরকার নির্দেশিত মেডিকেল বোর্ডও বেগম জিয়াকে অর্থোপেডিক বেড দেয়ার জন্য যে সুপারিশ করেছিল সেটিও কারা কর্তৃপক্ষ সরবরাহ করেনি। এই ঘটনায় সরকার প্রধানের এক সর্বব্যাপী প্রতিহিংসা ও বিদ্বেষের প্রতিফলন ফুটে উঠছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থতার খবর দেশের আপামর জনসাধারণকে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন ও ব্যথিত করে তুলেছে। কেন ব্যক্তিগত চিকিৎসকদেরকে দেশনেত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য দেখা করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না? কেন দেশনেত্রীর পছন্দ মতো ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পত্র নিয়ে যাবার পরও কোন অজ্ঞাত কারণে গতকাল বিএনপি উচ্চ পর্যায়ের তিনজন নেতাকে দেখা করতে দেয়া হয়নি? সব মিলিয়ে এক গভীর ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের আভাস পাচ্ছি আমরা। উল্লেখ্য, গত ৮ই ফেব্রুয়ারি কারাগারে নেয়ার পর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালতে নেয়ার কথা থাকলেও অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তাকে আদালতে নেয়া হয়নি। পরে ২৯শে মার্চ খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা আলমগীরের নির্ধারিত সাক্ষাৎটিও বাতিল করা হয় অসুস্থতার কারণে দেখিয়ে। এ ঘটনার পর কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি জানার চেষ্টা ও সুচিকিৎসার দাবিতে সোচ্চার হয় বিএনপি। পরে সরকার খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে এবং তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ৭ই এপ্রিল বিএসএমএমইউতে এনে এক্স-রে করা হয় তার। চার সদস্যের এই বোর্ডের সদস্যরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ‘গুরুতর নয়’ মন্তব্য করলেও জানান, তার ঘাড়ে ও কোমরে সমস্যা রয়েছে। তারা কারাগারে খালেদা জিয়ার জন্য অর্থপেডিক বেডের পরামর্শও দেন। বিএনপির তরফে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাতের সুযোগ ও তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির দাবি আসে। বিএনপির আবেদন-নিবেদনের পরও ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সাক্ষাৎ এবং তাদের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ মেলেনি খালেদা জিয়ার। কিন্তু কয়েকদিন আগে তার দুই জন ব্যক্তিগত চিকিৎসককে অনানুষ্ঠানিকভাবে ডেকে পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ। তবে, একইদিন দলের মহাসচিবসহ তিন সিনিয়র নেতার নির্ধারিত সাক্ষাৎটি বাতিল করে দেয়। গতকালও কারা কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের স্বজনদের সাক্ষাতের সুযোগ দেয়নি।

No comments

Powered by Blogger.