ফোর-জির সিমের জন্য গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা

চতুর্থ প্রজন্মের (ফোর-জি) টেলিযোগাযোগ সেবার সিম বদলে দিতে গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে মোবাইল ফোন অপারেটররা। এই অর্থ নিতে অপারেটরদের যুক্তি হলো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী সিম প্রতিস্থাপন কর হিসেবে এ অর্থ নেওয়া হচ্ছে। সিম প্রতিস্থাপনের এনবিআর নির্ধারিত ১০০ টাকার পাশাপাশি গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি ১০ টাকা নিচ্ছে এক অপারেটর। আবার এই অর্থ আদায়ে গ্রাহকভেদে বৈষম্যও করছে তারা। বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত গ্রাহকের কাছ থেকে এ বাবদ কোনো টাকা নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব গ্রাহক ফোর-জি ব্যবহারের জন্য সিম বদলাচ্ছেন তাঁরা ইতিমধ্যেই এ বাবদ সব ধরনের কর দিয়েছেন। এতে সিমের মালিকানাও পরিবর্তন হচ্ছে না। একই ব্যবহারকারী শুধু পুরোনো প্রযুক্তি থেকে উন্নত প্রযুক্তির সেবা নিতে সিমটি বদলাচ্ছেন। এ জন্য প্রতিস্থাপন কর হিসেবে ১০০ টাকা আদায় করা অযৌক্তিক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফোর-জি সিম প্রতিস্থাপন করতে গ্রামীণফোন সাধারণ গ্রাহকের কাছ থেকে ১১০ টাকা করে নিচ্ছে। রবি আজিয়াটা ও বাংলালিংক নিচ্ছে ১০০ টাকা। তবে তিন অপারেটরই তাদের বিশেষ গ্রাহকের কাছ থেকে সিম প্রতিস্থাপনের টাকা নিচ্ছে না। এ ধরনের গ্রাহকের মধ্যে রয়েছেন গ্রামীণফোনের স্টার, রবির ধন্যবাদ ও বাংলালিংকের প্রিয়জন প্যাকেজের গ্রাহকেরা।
এসব গ্রাহক মাসে কমপক্ষে ৫০০ টাকা মোবাইলে খরচ করেন। এসব গ্রাহকের পক্ষে অপারেটররাই সিম প্রতিস্থাপন কর সরকারকে দিচ্ছে। অপারেটররা বলছে, যেসব গ্রাহক বেশি খরচ করেন ব্যবসায়িক কৌশলের অংশ হিসেবে তাঁদের একটু বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণফোনের হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স মাহমুদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের পক্ষে অপারেটররা গ্রাহকের কাছ থেকে ১০০ টাকা সিম প্রতিস্থাপন কর আদায় করছে। বাড়তি যে ১০ টাকা নেওয়া হচ্ছে এ জন্য গ্রাহকেরা দেড় গিগাবাইট ইন্টারনেট ডেটা বিনা মূল্যে পাচ্ছেন, যার বাজারমূল্য ১৪০ টাকা। এর সঙ্গে আছে গ্রাহকসেবার পরিচালন ব্যয়। সব মিলিয়ে কোনোভাবেই গ্রাহকের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে না। টেলিযোগাযোগবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান লার্ন এশিয়ার জ্যেষ্ঠ গবেষক আবু সাইদ খান প্রথম আলোকে বলেন, সিম প্রতিস্থাপনে যেভাবে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হচ্ছে তাতে একধরনের শ্রেণি-বৈষম্য রয়েছে। যিনি ধনবান তাঁকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে, আর যিনি স্বল্পবিত্তের তাঁকে জরিমানা করা হচ্ছে। এ ধরনের নীতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট গ্রাহককে বিশেষ ছাড় দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে গ্রাহকের মধ্যে বৈষম্য তৈরির কোনো নীতিই সমর্থনযোগ্য নয়। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আমি বিটিআরসিকে বলব।’ সিম প্রতিস্থাপন করের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, যে কর এনবিআর আরোপ করেছে, তা পুনর্বিবেচনা করতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.