মালিকানায় আকস্মিক পরিবর্তনে আতঙ্কিত ব্যাংকার আমানতকারীরা

বিদায়ী বছরে দেশের বড় দু’টি ব্যাংকের মালিকানায় আকস্মিক পরিবর্তন হয়েছে। নানা অনিয়মের ঘটনায় আরো দু’টি ব্যাংকের মালিকানায় পরিবর্তন এসেছে। বড় ধরনের এসব পরিবর্তনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে ব্যাংকাররা। একই সাথে আস্থার সঙ্কটে ভুগছেন আমানতকারীরাও। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যাংকাররা। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত ব্যাংকারর্স সভায় ব্যাংকাররা এ সহায়তা কামনা করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে দেখবে বলে আশ্বাস দিয়েছে বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে এ সভায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন ডেপুটি গভর্নর, উপদেষ্টা, নির্বাহী পরিচালক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এবিবির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার, আল-আরাফা ইসলাম ব্যাংকের এমডি মো: হাবিবুর রহমান, এবি ব্যাংকের এমডি মসিউর রহমান চৌধুরী ছাড়াও অন্য সব ব্যাংকের এমডি ও তাদের প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে এবিবি প্রেসিডেন্ট বলেন, সভায় অনুৎপাদনশীল খাতে ঋণ না দিয়ে উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণের তাগিদ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ আমানতের অনুপাত কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছর কিছু ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের আকস্মিক পরিবর্তন হয়েছে। এতে ব্যাংকাররা ও আমানতকারীরা অনেকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে তারা বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণের লাগাম টেনে ধরতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে বিদ্যমান ঋণ আমানতের অনুপাত কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ইসলামি ব্যাংকগুলো ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারে। কিন্তু কোনো কোনো ব্যাংক আগ্রাসী ব্যাংকিং শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেয়া সীমা অনেকেই লঙ্ঘন করেছে।
ফলে তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে গতকালের সভায় ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। একই সাথে ঋণ আমানতের অনুপাত কমিয়ে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জন্য ৮০ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য ৮৮ শতাংশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোকে এ জন্য প্রস্তুত থাকতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এ দিকে ব্যাংকগুলো তাদের রেমিট্যান্স হাউজের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরণ করে থাকে। ব্যাংকভেদে প্রতিটি লেনদেনের জন্য ১৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা পর্যন্ত ফি নেয়া হয়, যেখানে হুন্ডি বা অন্য পন্থায় রেমিটারদের কোনো সার্ভিস চার্জ দিতে হয় না। এ অবস্থায় বৈঠকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে সার্ভিস চার্জ সর্বোচ্চ ২০ টাকায় নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ব্যাংকাররা কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন থেকে ব্যাংকারদের অহেতুক হয়রানি করার অভিযোগ করেন। দুদকে হাজিরা দিতে দিতে ব্যাংকাররা অনেকটা হাঁপিয়ে উঠেছেন। এতে ব্যাংকিং কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। অনেক কর্মকর্তাই আর দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন না। অনেকটা দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। পরিস্থিতি উন্নতি করতে ব্যাংকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছেন। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অন্যায়ভাবে কাউকে হয়রানি করলে সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, অনেক ব্যাংক আমদানি ঋণপত্রের বিপরীতে স্বীকৃতমূল্য যথাসময়ে পরিশোধ করছে না। কোনো কোনো ব্যাংকের জরিমানা করা হচ্ছে। যার দায় পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়াসহ পুরো দেশের ভাবমর্যাদা নষ্ট হচ্ছে। গতকালের বৈঠকে যথাসময়ে আমদানি ঋণপত্রের বিপরীতে স্বীকৃত বিলের মূল্য যথাসময়ে পরিশোধ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.