ইউএসএ টুডে’র সম্পাদকীয়: ট্রাম্পের কড়া সমালোচনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কড়াভাষায় সম্পাদকীয় লিখেছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা ইউএসএ টুডে। ডেমোক্রেট দলীয় নারী সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্রান্ডকে (নিউ ইয়র্ক) নিয়ে প্রেসিডেন্টের নোংরা ইঙ্গিতবাহী মন্তব্যের পর এই সম্পাদকীয় ছেপেছে পত্রিকাটি।
এক টুইটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সিনেটর কার্স্টেন সম্পর্কে লিখেন, এই মহিলা নিজের ‘নির্বাচনী তহবিলে অর্থ পেতে যে কোনো কিছু করতে প্রস্তুত।’ প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স অবশ্য বলেছেন, প্রেসিডেন্ট এটি বোঝাননি যে, ওই নারী সিনেটর টাকা পেতে নিজের দেহ বিলিয়ে দেবেন। কারণ, ট্রাম্প অনেক পুরুষের ব্যাপারেও একই কথা বলেছেন। কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ ইউএসএ টুডে। পত্রিকাটির মতে, ‘নারী ও পুরুষের ব্যাপারে একই শব্দ ব্যবহার হলেও, তার অর্থ আলাদা হয়।
প্রার্থী থাকাকালে ট্রাম্প যখন এক নারী সাংবাদিককে বলে বসেন, তার ‘কিছু একটা দিয়ে’ রক্ত বের হচ্ছে, তখন তিনি ‘কিছু একটা’ মানে ওই নারীর নাককে বোঝাননি, এটা নিশ্চিত।’
ইউএসএ টুডে সম্পাদকীয়তে আরও লিখেছে, ‘যেই প্রেসিডেন্ট একজন সিনেটরকে পতিতা হিসেবে ইঙ্গিত করতে পারে, তিনি ওবামার (সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট) প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরির টয়লেট পরিষ্কার করা কিংবা জর্জ ডব্লিউ বুশের (আরেক প্রেসিডেন্ট) জুতা মোছারও যোগ্য নন।’ ইউএসএ টুডের সম্পাদকীয় পর্ষদ আরও লিখেছে, ট্রাম্প নিজের ওই মন্তব্যে স্পষ্টতই এই ইঙ্গিতই দিয়েছেন যে, গিলব্রান্ড নিজের নির্বাচনী তহবিলে অর্থ পেতে যৌনতায়ও লিপ্ত হতে প্রস্তুত।
সম্পাদকীয়তে প্রেসিডেন্টককে বলা হয় ‘অসুস্থ মনমানসিকতাধারী জঘন্য’ এক ব্যক্তি। এবং, তার ওই টুইটটি ছিল তার মানদ-েও অত্যন্ত নীচু একটি কাজ।
ট্রাম্পের পুরো টুইটটি ছিল এমন: ‘লাইটওয়েট সিনেটর কার্স্টেন গিলিব্রান্ড হলো চাক শুমারের (নিউ ইয়র্কের সিনিয়র সিনেটর) চাটুকার। কয়েকদিন আগেও প্রায়ই আমার অফিসে আসতো। তার নির্বাচনী তহবিলে টাকা দিতে আমার কাছে ‘অনুনয়’ করতো। এই টাকা পেতে সে যে কোনো কিছু করতে পারবে। আর এখন কিনা সে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে লড়ছে।’
তার এই টুইটের পর খুব দ্রুতই প্রতিক্রিয়া জানান গিলিব্রান্ড ও তার সমর্থকেরা। তিনি বলেন, ট্রাম্পের এসব কথা শুনে তিনি চুপ হয়ে যাবেন না। তার মতে, এই লোকটা ওভাল অফিসের জন্য কলঙ্ক বয়ে এনেছে।
নিজেদের প্রতিক্রিয়ায় ইউএসএ টুডে পত্রিকা বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেছে, যেখানে ‘ট্রাম্প নীতি- নৈতিকতা ও সাধারণ মানবিকতা বিবর্জিত’ আচরণ করেছেন।
সম্পাদকীয়তে পত্রিকাটি নিজের এই কড়া অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়ে লিখেছে, ‘নীতিনির্ধারনী সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মতপার্থক্য থেকে নয়। এই মতপার্থক্য সব প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই আমাদের হয়েছে। তাদের কিছু সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ হয়েছি। ওবামা ও বুশ উভয়েই অনেক দিক থেকে ব্যর্থ। তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে, অসত্য বলেছে। কিন্তু তাদের মৌলিক শিষ্টাচার নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না।’
পত্রিকাটি আরও লিখেছে, ‘গিলিব্রান্ডের ওপর তার আক্রমণের ধরণ দেখে কারও বিস্মিত হওয়া উচিত নয়। নির্বাচনী প্রচ্র চলাকালে যখন যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে, তখন তিনি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা নারীদের চেহারা নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন। অক্টোবরে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি জেসিকা লিডসকে কখনই চেপে ধরতেন না, কারণ, তার ভাষায়, ‘বিশ্বাস করুন, সে আমার প্রথম পছন্দ হতো না, আমি এটা বলতে পারি। পিপল ম্যাগাজিনের সাবেক প্রতিবেদক নাতাশা স্টোনফের অভিযোগ খণ্ডাতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘তার ফেসবুক চেক করে দেখুন। আপনি বুঝবেন।’ অনেক সেলেব্রেটি ও রাজনীতিকরাও এই ধরণের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কিন্তু কেউই এতটা নীচ হয়ে বলেননি যে, তাদের যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার উপযুক্ত ছিলেন না ওই অভিযুক্ত নারীরা।’

No comments

Powered by Blogger.