মাইকেল জ্যাকসনের গান মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায় by মোশাররফ রুমী

দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেছে আটটি বছর। তিনি নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। সংগীত দুনিয়ার শীর্ষে থাকা অবস্থাতেই অপার জনপ্রিয়তাকে দূরে ঠেলে মাত্র ৫০ বছর বয়সে পরপারে পাড়ি জমান এই কীার্তিমান। কিন্তু বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে আছেন উজ্জ্বল তারা হয়ে। তিনি মাইকেল জ্যাকসন। পপস¤্রাট। সংগীতের এক কিংবদন্তি। পপগানে যার অনবদ্য সৃষ্টি বিশ্বের অন্য কোন সংগীত তারকারই ছিল না, এখনও নেই। তার রেখে যাওয়া গান-নাচ-স্মৃতি নিয়েই গত আট বছর ধরে ভালবাসা ও চোখের জলে একাকার করে তার ভক্তরা পালন করছেন প্রিয় পপ স¤্রাটের মৃত্যুবার্ষিকী। আজ দিনব্যাপী ভক্তদের আয়োজনেই বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে তার স্মরণ আয়োজন। ১৯৫৮ সালের ২৯শে আগস্ট আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় জন্ম মাইকেল জ্যাকসনের। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিলেও সংগীত বিষয়টি ছিল তার পরিবারের মধ্যেই। খুব ছোট থাকতে বাবার আগ্রহ এবং ইচ্ছাতেই গানে হাতেখড়ি হয় মাইকেলের। এরপর সেই বয়সেই তার পারফরমেন্স দেখে অবাক হয়েছেন সবাই। তখন ধারণা করা হয়েছিল মাইকেল একদিন অনেক দূর যাবেন। হয়েছেও তাই। নিজের অসাধারণ সব গানের মাধ্যমে সারা বিশ্বে সফলতা ও জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চ চূড়ায়  পৌঁছেন তিনি। নিজের নজরকাড়া সংগীত-পারফরমেন্সের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি শ্রোতা-দর্শককে মাতিয়ে গেছেন নিয়মিত। অ্যালবাম, স্টেজসহ সব দিক দিয়েই মাইকেল ছিলেন সবার শীর্ষে। তার সফলতাও ছিল আকাশছোঁয়া। তার প্রকাশিত সবক’টি অ্যালবাম ছিল ব্লকবাস্টার। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ নিজের শরীরের রঙটাকে তুলে ধরেছিলেন তিনি। নিজের রূপ, গান এবং পারফরমেন্সের মাধ্যমে বর্ণবাদীদের মুখভাঙা জবাব দিয়েছেন । জীবিত অবস্থায় সংগীতের বাইরেও মাইকেলের প্রতিটি কাজের প্রতিই ছিল ভক্তদের ব্যাপক  আগ্রহ। তার কনসার্টে এসে প্রিয় মাইকেলকে দেখতে পেয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন অনেকে, আবার আনন্দে হাউমাউ করে কেঁদেছেন কেউ কেউ। এমনটা মাইকেলের ক্ষেত্রে ঘটেছে হরহামেশাই। তার কনসার্টগুলোর ভিডিও দেখলেই ভক্তদের এসব দৃশ্য চোখে পড়ে। এ ধরনের ঘটনা খুব একটা ঘটতে দেখা যায়না বিশ্বের অন্য কোনো তারকার ক্ষেত্রে। এখানেই মাইকেলের বিজয়। সংগীতের বাইরেও নিজের মানবিক গুণ, মেধা, ব্যবহারে অন্য সবার থেকে নিজেকে একেবারেই ভিন্নসত্তা হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। আটটি বছর পেরিয়ে গেলেও মাইকেলের জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাটা পড়েনি। বিভিন্ন জরিপে সংগীত ইতিহাসের এক নম্বর তারকা এখনও তিনি। মাইকেল জ্যাকসনের গান মানুষকে স্বপ্ন দেখতে শেখায়, শেখায় ভালবাসতে এবং প্রতিটি মানুষকে সমান অধিকার দিতে। সাধরণ ভক্তদের মতো বিশ্বের জনপ্রিয় বিভিন্ন তারকারও আইডল তিনি। এদের মধ্যে রয়েছেন জেনিফার লোপেজ, ব্রিটনি স্পিয়ার্স প্রমুখ। নারী হয়েও পারফরমেন্সের ক্ষেত্রে তারা মাইকেলের অনেক স্টাইলই অনুসরণ করেন বলেও জানিয়েছেন। হালের সংগীত ক্রেজ জাস্টিন বিবারের পারফরমেন্সেও মাইকেলের অনেক অঙ্গভঙ্গির ছাপ লক্ষ্যণীয়। এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্ম, সবার কাছেই মাইকেল হয়ে উঠেছিলেন অনবদ্য স্টাইল আইকন। গত সাত বছরের মতো আজও মাইকেলের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি পালিত হচ্ছে বড় আয়োজনেন আমেরিকায় পপ স¤্রাটের জ্যাকসন স্ট্রিটের বাড়িটিতে। নিজের শৈশবকাল এই বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন মাইকেল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মাইকেল ভক্ত আজ জড়ো হয়েছেন এখানে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একসঙ্গে মোমবাতি জালিয়ে কান্না ভেজা চোখে নীরবতা পালনের মধ্যে চলবে মাইকেলকে স্মরণ। মাইকেলের প্রতিকৃতিতেও ফুলেল শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন ভক্তরা। পাশাপাশি বিভিন্ন সংগীত শিল্পীর কণ্ঠে পরিবেশিত হচ্ছে মাইকেলের গান।

No comments

Powered by Blogger.