শিবালয়ে মাটিবাণিজ্য : হুমকির মুখে ফেরি-লঞ্চ ঘাট

স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ পাটুরিয়া ফেরি ঘাটের উত্তর পার্শ্বে যমুনা তীরবর্তী বিআইডব্লিউটিএ’র অধিভূক্ত স্থান থেকে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষকের নেতৃত্বে কতিপয় লোকজন অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এহেন ‘মাটি বানিজ্যের’ সাথে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান জড়িত থাকায় শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও সচেতন মহলে নানা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে দায়সাড়া গোচের ভূমিকা নেয়ায় জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জানা গেছে, প্রতি বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকে এ এলাকা থেকে দেশী পদ্ধতির ড্রেজিং মেশিন বসিয়ে হাজা-মজা পুকুর, নিচু জমি, ভিটি-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট ভরাট, ইট ভাটা ও ঠিকাদারদের নিকট চুিক্ততে মাটি বিক্রি করে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি চক্র লক্ষ-লক্ষ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া, নদী তীর শুকিয়ে গেলে এ স্থান থেকে প্রত্যহ এস্কেবেটর, বেলচা-কোদাল ইত্যাদি দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক, লড়ি, ট্রাক্টর, নছিমনযোগে বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেয়া হয়। পূর্ণ মওসুম চলায় বর্তমানে এ স্পট থেকে হাজার-হাজার ঘন মিটার মাটি বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করা হচ্ছে। পলি, ভিটি বালু, এঁটেল-বেলে-দোআঁশ মাটি ইত্যাদি প্রকার ভেদে উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে, এ স্থানে ড্রেজার বসিয়ে মাটি কেটে নিয়ে দূরবর্তী স্থানের ডোবানালা, নিচু জমি ভারাট করে বিপুল অর্থ কামিয়ে নেয়া হচ্ছে। এহেন অবৈধ ভাবে মাটির ব্যবসার সাথে স্থানীয় এক উচ্চ বিদ্যালয়ে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট মহলে নানা বিতর্ক জন্ম দিয়েছে। এহেন ব্যবসায় জড়িত থাকায় তিনি প্রত্যহ বেশির ভাগ সময় বাহিরে দৌঁড়ঝাঁপ পারায় বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত ও ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের ১২ মার্চ আরিচা থেকে পাটুরিয়ায় ফেরি ঘাট স্থানান্তর হয়। এ সুবাদে পাটুরিয়া এলাকায় ব্যবসায়-বানিজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।
যাতায়াত ব্যবস্থা সুবিধা থাকায় পাটুরিয়া ঘাটের উত্তর দিকে জেগে উঠা পলি মাটি কতিপয় শিক্ষকের নেতৃত্বে একটি চক্র ব্যবসার উদ্দেশ্যে কেটে অন্যত্র বিক্রি করছে। সচেতনমহল মত দিয়েছেন, উক্ত প্রধান শিক্ষক ও সহযোগীরা দলীয় প্রভাবশালী নেতা-কর্মী ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে দীর্ঘ দিন যাবৎ এ ভাবে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বিআইডব্লিউটিএ’র আরিচা নদী বন্দর, পাটুরিয়া ফেরি ঘাট, জাফরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত বিশেষ করে পদ্মা-যমুনা তীরবর্তী এলাকায় মালপত্র উঠানামর জন্য প্রতি বছর ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। এতে নদী তীরবর্তী সিকস্তী বা পয়স্তী স্থান থেকে মাটি কেটে নেয়ার কোন বিধান নেই। কিন্ত, এ ক্ষেত্রে অবাক করার মতো ঘটনা হচ্ছে- পাটুরিয়া ঘাটের উত্তর দিকে যে স্থান থেকে এ যাবৎ লক্ষ-লক্ষ ঘনমিটার মাটি কাটা হয়েছে তাতে আগামী বর্ষা মওসুমে পানিতে ঘুর্ণাবর্ত সৃস্টি হলে ফেরি ও লঞ্চ ঘাটের একাংশ বিলিন হওয়ার আশংকা রয়েছে। ফেরি ও লঞ্চ ঘাট এলাকা ভাঙ্গনের মুখে পড়লে দেশে দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপর্যয় হয়ে পড়বে। উল্লেখ্য, গত বর্ষা মওসুমে এহেন কারনে দৌলতদিয়া ফেরি ঘাট ভাঙ্গনের কবলে পরায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটে। এছাড়া, ঘাট স্থনান্তর ও মেরামতে সরকারের কোটি-কোটি টাকা ব্যয় হয়। আরিচা বন্দর ও পরিবহণ কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, পাটুরিয়া ও পার্শ্ববর্তী এলাকার নদী তীরবর্তী স্থান থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেয়ার বিরুদ্ধে যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করলেও কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন না করায় একটি চক্র ক্রমেই বেপড়োয়া হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে নালী-বড়রিয়া কেসি উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মোঃ মোন্তাজ আলী নদী তীরবর্তী স্থান থেকে এহেন মাটি কাটার পক্ষে বৈধতা প্রমান ও স্বপক্ষে কোন যুক্তি দেখাতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.