ট্রাম্পকে নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের উদ্বেগ প্রকাশ

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা মাল্টায় তাঁদের বিশেষ শীর্ষ সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, বিশ্বের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ইউরোপের ঐক্যবদ্ধ তৎপরতা প্রয়োজন। উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া থেকে শরণার্থী ও অভিবাসীদের ব্যাপকহারে সমুদ্রপথে ইতালিতে প্রবেশ ঠেকাতে ইইউর ২৮টি দেশ একটি পরিকল্পনায় সর্বসম্মত সমর্থন দিয়েছে। এর আওতায় ওই জনস্রোত রুখতে লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনীকে ইইউ ২১ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের সমমূল্যের সহায়তা দেবে। তবে ইইউর এ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডই বাকি সব আলোচনা ছাপিয়ে গেছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, যুক্তরাজ্যের ইইউ ছেড়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্য করেছেন। ইইউর ব্যাপারে তাঁর নাক গলানো উচিত নয়। অন্য নেতারা বলেছেন, তাঁরা আটলান্টিকের অপর পারের সঙ্গে সুসম্পর্ক অটুট রাখতে চান। তবে ইইউ থেকে আরও দেশের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে এবং ন্যাটোকে ‘সেকেলে’ বলতে পারেন, এমন একজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কাজ করার ব্যাপারে বাস্তবমুখী হতেই হয়। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ট্রাম্পের সঙ্গে নিজেদের আলাপের অভিজ্ঞতা জোটের অন্য নেতাদের সঙ্গে বিনিময় করেছেন। মে তাঁর সাম্প্রতিক ওয়াশিংটন সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, ন্যাটো জোটের প্রতি ট্রাম্প ‘শতভাগ অঙ্গীকারবদ্ধ’ আছেন। ইইউর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাস্ক বলেছেন, দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে ইইউর জন্য প্রধান প্রধান হুমকির মধ্যে রাশিয়া, চীন এবং ইসলামি কট্টরপন্থার পাশাপাশি ট্রাম্পও রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ককে ইইউ সবচেয়ে বেশি রাজনৈতিক অগ্রাধিকার দেয়। তবে ইউরোপীয়দের এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ সাময়িক নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ট্রাম্প ইউরোপে বিশেষ উদ্বেগ তৈরি করেছেন। সম্মেলনে উপস্থিত অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর ক্রিস্টিয়ান কার্ন বিষয়টিকে ‘অত্যন্ত সমস্যাসংকুল’ আখ্যা দিয়েছেন। আর বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী শার্ল মিশেল টাইম সাময়িকীকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইইউর এখন খুব জোরদার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। গত কয়েক মাসে ব্রেক্সিট, ট্রাম্পের বিজয় প্রভৃতি বড় পরিবর্তন ঘটেছে। এর মানে, এবার ইউরোপকে নড়েচড়ে বসতে হবে। অভিবাসী ও শরণার্থীদের নিয়ে ইইউর সংকট এখনো রয়ে গেছে। মাল্টা সম্মেলনে ইউরোপীয় নেতারা লিবিয়া হয়ে নৌপথে অভিবাসীদের আগমনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। ভূমধ্যসাগরের ওই পথে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় গত বছর অন্তত ১ লাখ ৮১ হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়েছে। ইইউর পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিবাসীদের আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় পৌঁছানোর আগেই আটকানোর জন্য লিবিয়ার উপকূলরক্ষী বাহিনীকে আরও বেশি সামর্থ্য অর্জনে সাহায্য করতে হবে। ইতালি ইতিমধ্যে লিবিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করেছে।

No comments

Powered by Blogger.