কয়েদির অভাবে বন্ধ হচ্ছে কারাগার

নেদারল্যান্ডসের একটি কারাগার। এএফপি।
যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ যেখানে কারাগারে কয়েদিদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে নেদারল্যান্ডসের সমস্যাটা ঠিক বিপরীত। কারাগারে ভরে রাখার মতো কয়েদির বড়ই অভাব। এ জন্য গত কয়েক বছরে ১৯টি কারাগার বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী বছর বন্ধ হবে আরও কয়েকটি। এমন অবস্থা হলো কীভাবে? সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে নেদারল্যান্ডসের একটি কারাগারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কারাগারটি দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নরগারহেভেনে। সেখানে রয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। সেখানে কারাকক্ষের দরজার ওপাশ থেকে পেঁয়াজ ভাজার সুবাস আসছিল। রান্নাঘরে কয়েদিরা তাঁদের রাতের খাবার তৈরি করছেন। একজনকে ছুরি দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে সবজি কাটতে দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘আমি ছয় বছর ধরে এই কাজ করছি। দিন দিন এ কাজে দক্ষতা বাড়ছে।’ ছুরিগুলো শিকল দিয়ে আটকে রাখায় কাজ করার সময় শব্দ হচ্ছিল। এ ব্যাপারে নরগারহেভেনের ডেপুটি গভর্নর জ্যান রয়েলফ ভ্যান দের স্পয়েল বলেন, ‘আটকানো থাকায় এই ছুরিগুলো কয়েদিরা নিয়ে যেতে পারে না। তবে পাস থাকলে তারা ছোট ছুরিগুলো ধার নিতে পারে। এতে বোঝা যায়, কার কাছে ছুরি রয়েছে।’ কয়েদিদের কেউ কেউ সহিংসতার দায়ে কারাগারে বন্দী। তাই ছুরি বহন করার বিষয়টিকে সতর্কভাবে দেখা হয়।
নরগারহেভেন কারাগারের লাইব্রেরি। এএফপি
রান্নাবান্না করার মতো কাজ মুক্তির পর বন্দীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সহায়তা করে। ডেপুটি গভর্নর রয়েলফ বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকের দিকেই আলাদা নজর দিই। কেউ যখন মাদক সমস্যা নিয়ে আসে, তখন তার আসক্তির চিকিৎসা করি। যখন কেউ ক্ষুব্ধ থাকে, আমরা তা দমানোর চেষ্টা করি। কারও অর্থসংক্রান্ত অপরাধ থাকলে তাকে ঋণ-বিষয়ক পরামর্শ দিই। দের অপরাধের কারণগুলো আমরা দূর করার চেষ্টা করি। সংশোধন হতে কয়েদিদের নিজেদের ইচ্ছাও থাকতে হবে। আর আমাদের সংশোধন প্রক্রিয়াগুলো খুব কাজে আসে। গত ১০ বছরে আমাদের কাজ দিনে দিনে আরও উন্নত হয়েছে।’ কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই লোকদের নিজেদের কর্মস্থলে রেখে, পরিবারের সঙ্গে রেখে অন্যভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। একই এলাকার এসারহেমে কারাগারে গেলে দেখা যায়, সেখানে প্রচুর খোলামেলা জায়গা। শরীরচর্চার জায়গাটি অনেক বড়। সেখানে আছে ওকগাছ, পিকনিক টেবিল ও ভলিবল খেলার নেট। ডেপুটি গভর্নর রয়েলফ বলেন, খোলা বাতাস কয়েদি ও কারাগারের কর্মীদের দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনে। বন্দীরা একা পাঠাগার, ক্লিনিক বা ক্যানটিনে যেতে পারেন। এই স্বাধীনতা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সাহায্য করে। এক দশক আগেও বন্দীর সংখ্যার দিকে ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর একটি ছিল নেদারল্যান্ডস। কিন্তু এখন সেটা সর্বনিম্ন বলে দাবি করা হয়।
নেদারল্যান্ডসের একটি কারাগার। এএফপি।
প্রতি এক লাখে ৫৭ জন সেখানে বন্দী রয়েছে। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে সেখানে প্রতি লাখে ১৪৮ জন বন্দী। ২০০৫ সালে নেদারল্যান্ডসে ১৪ হাজার ৪৬৮ জন বন্দী ছিল। এখন তা আট হাজার জনে নেমে এসেছে, যা আগের চেয়ে ৪৩ শতাংশ কম। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর লিডেনের অপরাধ আইন-বিষয়ক অধ্যাপক পলিন স্কুয়াটের মতে, শুধু পুনর্বাসন কর্মসূচির কারণেই নেদারল্যান্ডসে কারাবন্দীর সংখ্যা কমে আসেনি। ২০০৫ সালের দিকে কোকেনসহ মাদকদ্রব্য বহনকারীদের ব্যাপকভাবে ধরার পর তা কার্যকরভাবে কমে আসে। পুলিশ এখন মাদকদ্রব্যের দিক থেকে নজর সরিয়ে মানব পাচার ও সন্ত্রাসবাদ রোধের দিকে মনোযোগ বাড়িয়েছে। এর বাইরে নেদারল্যান্ডসে বিচারকেরা অপরাধীদের বিকল্প শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকেন। সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কমিউনিটির বিভিন্ন কাজে লাগানো হয়, জরিমানা করা হয় এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁদের কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.