ভারত-পাকিস্তানকে অস্ত্র সরবরাহ করে যারা

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর দু’দেশ এখন যুদ্ধংদেহী অবস্থায়। এ উত্তেজনার মধ্যে ফ্রান্সের কাছ থেকে কেনা ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান নির্ধারিত সময়ের আগেই হাতে পেতে চায় ভারত। অন্যদিকে, বরাবরের মতো পাকিস্তানের পাশে রয়েছে চীন। পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তানকে যেসব দেশ অস্ত্র সরবরাহ দশদিগন্ত পাঠকদের জন্য তার বিবরণ উল্লেখ করা হল। সুইডেনভিত্তিক ‘দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সিটিউট’ ২০১৪ সালে বিশ্বের কোন কোন দেশ পাকিস্তান ও ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করেছে তার তালিকা করে। এতে দেখা যায়- প্রধান অস্ত্র আমদানিকারক ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের নাম। ২০১৫ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ ভারত। অন্যদিকে, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে সামরিক অস্ত্র খাতে ১২০০ কোটি ডলার ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।
ইন্সটিটিউটের রিপোর্টে অনুসারে, কিছু দেশ আছে যারা দু’দেশকেই অস্ত্র সরবরাহ করে। এসব দেশ হচ্ছে- যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, সুইডেন, ইউক্রেন ও ব্রাজিল। অথচ পাকিস্তান এবং ভারত হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রতিবেশী দেশ। যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতকে রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারত আমেরিকার সমর্থন পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, কথিত সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইয়ে পাকিস্তানকে সঙ্গী হিসেবে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের অন্যতম দুই প্রধান অস্ত্র রফতানিকারক দেশ ফ্রান্স ও রাশিয়া ভারত-পাকিস্তানে অস্ত্র রফতানির দিকটাই প্রধানত বিবেচনায় নেয়; রাজনীতির বিষয়টি তেমন প্রাধান্য পায় না। তবে মজার বিষয় হল, অন্য প্রধান অস্ত্র রফতানিকারী দেশগুলো দু’দেশকেই অস্ত্র দিতে আগ্রহী নয়। দ্য স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, তুরস্ক, সার্বিয়া, চীন ও জর্ডান শুধু পাকিস্তানকে অস্ত্র দেয়। এসব দেশ ভারতকে অস্ত্র দিতে রাজি নয়। অন্যদিকে, ইসরাইল, কানাডা, স্পেন, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, পোল্যান্ড,
কিরগিজিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া শুধু ভারতকে অস্ত্র দেয়; পাকিস্তানকে দেয় না। পাকিস্তান হচ্ছে এ মুহূর্তে চীনা অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। চীনের অস্ত্র রফতানির ৬৩ ভাগই করা হয় পাকিস্তানে। পাঁচ বছর আগে পাকিস্তানের আমদানি করা অস্ত্রের ৩৯ ভাগ সরবরাহ করতো আমেরিকা এবং চীন করতো ৩৮ ভাগ। কিন্তু বর্তমানে চীন এককভাবে দেশটিকে ৬৩ শতাংশ অস্ত্র সরবরাহ করছে। একই সঙ্গে আমেরিকার কাছ থেকে আমদানি করা অস্ত্রের পরিমাণ কমে ১৯ শতাংশে গিয়ে ঠেকেছে। বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকার মতে, চীন মনে করছে ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগর হবে সম্ভাব্য প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র। এ সন্দেহ থেকে চীন বাণিজ্যিক ও সামরিক বন্দর তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে যাতে ভারতকে ঘিরে ফেলা যায়। চীন ও ভারত সীমান্তের বেশকিছু ভূখণ্ড নিয়েও দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছে। ধারণা করা হয়, এ কারণে চীন ভারতকে কোনো অস্ত্র সরবরাহ করে না। মজার বিষয় হল বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অস্ত্র রফতানিকারক দেশ জার্মানি শুধু ভারতকে অস্ত্র সরবরাহ করে; পাকিস্তানের কাছে তারা কোনো অস্ত্র বিক্রি করে না।
২০০২ সালের তুলনায় ২০১২ সালে ভারত ও জার্মানির মধ্যে বাণিজ্যও বেড়েছে তিনগুণ হয়েছে। ২০১৬ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করছে ভারত। ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান এ তালিকায় রয়েছে দশম স্থানে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ত্র আমদানিতে শীর্ষে ও বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সৌদি আরব। অস্ত্র আমদানির তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এর পরের অবস্থানে রয়েছে মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, চীন, ভিয়েতনাম, গ্রিস ও পাকিস্তান। ২০১৫ সালে চীন পাকিস্তানের কাছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। আর আমেরিকার কাছ থেকে পাকিস্তান অস্ত্র আমদানি করেছে ছয় কোটি ৬০ লাখ ডলারের। ভারতের কাছে সবচেয়ে বেশি ১৯৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে রাশিয়া। এছাড়া ভারত ইসরাইলের কাছ থেকে ৩১ কোটি ৬০ লাখ ও আমেরিকার কাছ থেকে ৩০ কোটি ২০ লাখ ডলারের অস্ত্র কিনেছে বলে এসআইপিআরআই জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.