এবার বিতর্ক দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর

টিম কেইন, মাইক পেন্স
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের তীব্র বাদানুবাদের ডামাডোলে অনেকে হয়তো লক্ষই করেননি, কাল মঙ্গলবারই এই দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর রানিং মেট, মাইক পেন্স ও টিম কেইন তাঁদের একমাত্র নির্ধারিত মুখোমুখি বিতর্কে অবতীর্ণ হবেন। কেউ অবশ্য আশা করে না তাঁদের এই বিতর্কের ফলে নির্বাচনের গতি-প্রকৃতি বদলাবে। ট্রাম্প-হিলারির বিতর্ক শুধু যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় সোয়া আট কোটি লোক দেখেছে। পেন্স-কেইনের বিতর্কে এত দর্শকের আশাও কেউ করছে না। তবে এই বিতর্কের গুরুত্ব নেই, সে কথাও কেউ বলে না। ট্রাম্প-হিলারি বিতর্কে কাদা ছোড়াছুড়ির কারণে নীতিগত প্রশ্নে কোনো অর্থপূর্ণ আলোচনা হয়নি। পেন্স ও কেইন সে অভাব পুষিয়ে দেবেন বলে ভাবা হচ্ছে।
দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর বৈচিত্র্যময় পরিচিতির তুলনায় দুই ভাইস প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী তাঁদের মেজাজে ও লোক পরিচিতিতে রীতিমতো পানসে। মাইক পেন্স ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের চলতি গভর্নর, তিনি মার্কিন কংগ্রেসেও বেশ কয়েক বছর কাটিয়েছেন। শান্ত মেজাজের, কথা বলেন নিচু গলায়, ভুলেও কোনো নোংরা কথা বলেন না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এমন লোক বাছাই করা হয়, যাঁর প্রধান কাজ হয় প্রতিপক্ষকে কথায় ঘায়েল করা। যেমন: বারাক ওবামা বেছে ছিলেন জো বাইডেনকে। কিন্তু পেন্স ট্রাম্পের ‘অ্যাটাক ডগ’-এর ভূমিকা পালনে অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনিও পেন্সের কাছ থেকে তেমন ভূমিকা আশা করেন না। হিলারির রানিং মেট ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইনও সাদাসিধে ও পাক্কা ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। ক্যাথলিক খ্রিস্টান কেইন নিজের ধর্মবিশ্বাসকে তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে উল্লেখ করতে ভালোবাসেন। ডেমোক্রেটিক পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর কেইন চেষ্টা করেছেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দু-চার কথা বলতে, কিন্তু সে কথায় রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর গায়ে আঁচড়টুকুও লেগেছে বলে মনে হয় না। এখন পর্যন্ত মাইক পেন্সের প্রধান দায়িত্ব ছিল ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর ও অতিকথন অগ্রাহ্য করে ধীর-স্থিরভাবে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর রাজনীতি ব্যাখ্যা করা।
অনেক ব্যাপারেই পেন্স তাঁর নেতা অর্থাৎ ট্রাম্প থেকে ভিন্ন। যেমন: রক্ষণশীল হলেও অভিবাসন প্রশ্নে পেন্স মুসলিমদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিপক্ষে। তিনি সব ধরনের নেতিবাচক রাজনৈতিক প্রচারণারও বিপক্ষে। ট্রাম্প যে তাঁর মতো বাক্যবাগীশ ও অনভিজ্ঞ রাজনীতিকের বদলে এমন একজন প্রমাণিত ও অভিজ্ঞ রক্ষণশীল লোককে তাঁর রানিং মেট হিসেবে বেছে নিয়েছেন, রিপাবলিকান নেতৃত্ব ও সমর্থকেরা তাতে আশ্বস্ত। একজন সিনেটর মন্তব্য করেছেন, এখন পর্যন্ত এটাই ট্রাম্পের একমাত্র বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে, হিলারি দীর্ঘ বিচার-বিবেচনার পর মাইক পেন্সকে বেছে নেন তাঁর অভিজ্ঞতা ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্বের জন্য। হিলারি নিজে বলেছেন, তিনি এমন একজন রানিং মেট চান, যিনি প্রয়োজনে এক মুহূর্তের নোটিশে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম হবেন। অন্য কারণ, তিনি এমন একজনকে খুঁজছিলেন, যিনি জনপ্রিয়তায় তাঁকে ছাড়িয়ে যাবেন না। ঠিক এই কারণেই উদারপন্থী হিসেবে পরিচিত ও দলের তরুণ সমর্থকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনকে বাছাই করেননি। মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সময় রাত নয়টায় (অর্থাৎ ঢাকায় বুধবার সকাল সাতটায়) এই বিতর্ক শুরু হবে। এটি অনুষ্ঠিত হবে ভার্জিনিয়ার ফার্মভিলে অবস্থিত লংউড বিশ্ববিদ্যালয়ে।

No comments

Powered by Blogger.