এ মাটি মানবতার

শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রবেশমুখে রঙিন মুখোশ। মিলনায়তন পর্যন্ত যেতে যা কিছু চোখে পড়বে তার সবই উৎসবসজ্জার অংশ, বাকিটা ওই আটপৌরে আঙিনা। সুবচন নাট্য সংসদের প্রধান সম্পাদক আহমেদ গিয়াসকে দেখা যায় দলের ছেলেদের নিয়ে ব্যস্ত সেখানে। দলে দলে নাট্যকর্মী, মহড়াকক্ষ থেকে কখনো নামানো হচ্ছে ট্রাংক বোঝাই নট-নটীদের পোশাক। সেগুলো যাচ্ছে দোতলার পরীক্ষণ থিয়েটারে, মূল মঞ্চের সাজঘরে, কখনো আবার ছাদের স্টুডিও থিয়েটারে। উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে প্রায় হাজার চারেক নাট্যকর্মী। প্রতিদিন তাঁদের শখানেক কর্মীর বিচরণে জায়গাটা জেগে থাকে। এ রকম একটা উৎসবের ব্যয় প্রায় লাখ পঁচিশ টাকা। সারা পৃথিবীতে এ ধরনের উৎসবে টাকার জোগান দিতে এগিয়ে আসে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলীর প্রত্যাশা, ‘আমাদের দেশেও আসবে।’ নাট্যকর্মীরা বলতে ভালোবাসেন, ‘নাটক সমাজ বদলের হাতিয়ার’। প্রতিনিয়ত সমাজটা নানা দিক থেকে বদলে যাচ্ছে। মানুষ উদ্দীপ্ত হচ্ছে মানবতার পক্ষে, প্রতিবাদী হচ্ছে জঙ্গিবাদ ও দেশবিরোধী নানা চক্রান্তের বিরুদ্ধে। বিপর্যয়ের দিনগুলোতে দলবেঁধে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে মানুষ। যেমনটা হয়েছিল রানা প্লাজার ধসের সময়,
যেমনটা হয়েছিল গণজাগরণ মঞ্চের সময়। একটু পেছনে ফিরলে দেখা যাবে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা তারও আগে মুক্তিযুদ্ধের সময়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়ে কবর নাটকটি তো রীতিমতো বাংলার নাট্য ইতিহাসের এক বিপ্লব। এ বছরের জাতীয় নাট্যোৎসবে দেখানো হচ্ছে ৫৮টি নাটক। যৌথভাবে এ উৎসবের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সহযোগিতা করছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শুরু হয়েছে গত ২৮ সেপ্টেম্বর, চলবে ১১ অক্টোবর পর্যন্ত। উৎসবের মূল প্রতিপাদ্য হলো, এ মাটি নয় জঙ্গিবাদের, এ মাটি মানবতার। ঢাকার বাইরে থেকে আসছে ২৬টি দল। বিভিন্ন বিভাগের বাছাই করা নাটকগুলো থেকে সেরাগুলো তোলা হচ্ছে উৎসবমঞ্চে। জেলা শহর থেকে রওনা দিয়ে সারা রাত ভ্রমণ করে ঢাকায় আসছেন তাঁরা। দিনে ছোট ছোট মহড়ার পর সন্ধ্যায় মঞ্চায়ন। যদিও বা থাকতে হয় গাদাগাদি করে, সেও তাঁদের জন্য পরম আনন্দের। এই আনন্দের জন্য, সমাজ বদলের স্বপ্ন নিয়েই তো তাঁরা শুরু করেছিলেন, আসছেন নতুনেরাও। নিজেদের ভেতরকার উদ্দীপনাটা উৎসবের রঙে দর্শকদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। উৎসবের টিকিটঘরে দাঁড়ালে বিচিত্র অভিজ্ঞতা হবে।
একজন এসে জানতে চাইলেন, ‘কী ধরনের নাটক আছে, কমেডি না ট্র্যাজেডি?’ প্রত্যুত্তরে অন্য একজন বলছেন, ‘বাংলা নাটক আর ওইখানে পড়ে নেই, দেখে আসেন।’ একজন হয়তো খুচরা টাকা বের করে উদাস কণ্ঠে জানতে চাইছেন, এক শ টাকার নিচে টিকিট আছে কি না। কেউ আবার একসঙ্গে কিনছেন দশটা টিকিট। শিক্ষার্থীদের জন্য এই টিকিটই ২০ টাকা। উৎসবে দর্শক ততটা না থাকলেও আগের থেকে তাঁদের অংশগ্রহণ বেড়েছে বলে মনে করছেন আয়োজকেরা। বেইলি রোডের নীলিমা ইব্রাহীম মঞ্চেও চলছে উৎসবের নাটক। নাট্যকর্মী জিয়াউল হক নিজেই টিকিট বিক্রি করছেন সেখানে। প্রথম দিনে ৭০ ও দ্বিতীয় দিনে ৬০ জন এসেছিলেন নাটক দেখতে। অবশ্য শুক্রবারের দর্শকসংখ্যা খানিকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। তবে অনুযোগ করেছেন সাজসজ্জার কমতিতে।

No comments

Powered by Blogger.