৯/১১ হামলার ১৫ বছর নতুন সন্ত্রাস, নতুন হুমকি

নিউইয়র্কে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার ১৫ বছর পেরিয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ওরকম সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্র রুখতে যুক্তরাষ্ট্র এখন যথেষ্ট কঠোর হলেও সেখানে ছোটখাটো হামলার ঝুঁকি রয়ে গেছে। আর দেশের ভেতরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীরাই এখন হুমকি। নানা রকম হামলার চক্রান্ত খুঁজতে এবং জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) ও আল-কায়েদার সমমনা লোকজনের তৎপরতা নস্যাৎ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাস দমন বিভাগ। কারণ, এসব জঙ্গিগোষ্ঠী এখন নতুন নতুন যোগাযোগপ্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে। ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের পরিচালক নিক রাসমুসেন চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটনে বলেন, ‘আমাদের কাজটা দিন দিন কঠিনতর হচ্ছে। কট্টরপন্থীরা এখন নানা উপায়ে পারস্পরিক যোগাযোগের কাজটা সেরে নিতে পারে। অনেকে জনপ্রিয় স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই তথ্য বিনিময় করছে। এতে তারা মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীর আওতার বাইরে থাকার সুযোগ পাচ্ছে।’
৯/১১ হামলার পর সন্ত্রাসবিরোধী মার্কিন লড়াইয়ের (ইউএস ওয়ার অন টেরর) যাত্রা শুরু হয়। প্রথমদিকে এটা আল-কায়েদা ও তালেবানের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছিল। তবে ১৫ বছর পর তাদের লক্ষ্য আরেকটি সংগঠন, আইএস। এরা সিরিয়া ও ইরাকের একটা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। পাশাপাশি ইউরোপ-আমেরিকায় অভ্যন্তরীণভাবে গড়ে ওঠায় হামলা এবং সে রকম পরিকল্পনায় ইন্ধন জোগানোর সামর্থ্য রাখে আইএস। এসব হামলা ৯/১১-র তুলনায় ছোট মাত্রার হলেও ভয়ংকর এবং স্থানীয় লোকজনের মনোবল ভেঙে দিতে পারে। এদিকে, সাবেক নেতা ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার পরও আল-কায়েদা টিকে আছে। সমমনা অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীকে নিয়ে তারা শত্রুপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ফিলিপাইন থেকে শুরু করে পশ্চিম আফ্রিকা অঞ্চল পর্যন্ত তারা সন্ত্রাসী হামলার জটিল ধরনের হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে।
জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সাইবার অ্যান্ড হোমল্যান্ড সিকিউরিটির পরিচালক ফ্র্যাংক সিলাফো বলেন, ইরাক-সিরিয়া অঞ্চল থেকে ওই সন্ত্রাসী কার্যক্রম অন্যদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। হুমকি অব্যাহত আছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধিকতর জটিল অবস্থায়। যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বেড়ে ওঠা সহিংস কট্টরপন্থীরা বেশ কয়েকটি আকস্মিক হামলা চালিয়েছে। ফলে বিদেশি হুমকির চেয়ে এখন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর এসব অভ্যন্তরীণ হামলাকারীদের দিকেই বেশি। এদের মধ্যে ২৯ বছর বয়সী আমেরিকান-আফগান বংশধর এক ব্যক্তি গত জুনে অরল্যান্ডোয় সমকামীদের একটি নাইট ক্লাবে গুলি চালিয়ে ৪৯ জনকে হত্যা করেন। তিনি কট্টর ইসলামপন্থীদের সমমনা ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। এ ছাড়া গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রী ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্দিনোয় বড়দিনের অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা করেন। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে এ রকম ১০২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যাদের অপরাধের সঙ্গে আইএসের যোগসাজশ রয়েছে। আর তাদের অনেকে অনলাইনের মাধ্যমে এসব কার্যক্রমে জড়িয়েছে।
রাসমুসেন বলেন, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার হিসাবে কট্টরপন্থীদের সক্রিয়তার এক হাজারের বেশি ঘটনা রয়েছে। এ ছাড়া এখন চক্রান্ত তৈরি ও বাস্তবায়ন হচ্ছে অনেক বেশি দ্রুততায় এবং গুটি কয়েক লোকের মাধ্যমে। ফলে এদের সময়মতো খুঁজে বের করাটা গোয়েন্দাদের পক্ষে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, আইএস ইরাক-সিরিয়া অঞ্চলে পরাজিত হবে বলে তাঁরা আশাবাদী। কিন্তু এতে সন্ত্রাসী হামলার হুমকির সামগ্রিক অবসান হবে না। আইএস ভেঙে গেলেও সারা বিশ্বে গোপনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তাদের সমমনা লোকজন নতুন করে সক্রিয় হয়ে নীরবে ষড়যন্ত্র ও হামলা চালানোর সামর্থ্য রাখে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের পরিচালক জেমস কোমি মনে করেন, আইএসের ‘খিলাফত’ ভেঙে দেওয়ার পরও সন্ত্রাসী হামলার হুমকি আগামী পাঁচ বছর ধরে বহাল থাকবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা আরও বলেন, হুমকির উৎস খুঁজে বের করতে ইউরোপীয় গোয়েন্দাদের দুর্বলতাও সন্ত্রাস দমনের পথে একটি বড় বাধা। কাজেই বিভিন্ন দেশের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে হবে। লড়াইয়ের মূলে রয়েছে একটা আদর্শ। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন সামান্য। এ কারণেই আইএস এবং আল-কায়েদার প্রতি সহানুভূতিশীল লোকজন সুযোগ পাচ্ছে। প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লেইডোসের বিশেষজ্ঞ মাইকেল লেইটার বলেন, এ ক্ষেত্রে সত্যিকারের সাফল্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল অবলম্বন করতে হবে। মুসলিমদের নিষিদ্ধ করে কোনো সুফল মিলবে না।

No comments

Powered by Blogger.