রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে কি?

থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত গণভোটের মাধ্যমে অনুমোদন দেয়া হয়েছে দেশটির সামরিক সরকারের মনোনীত কমিটির তৈরি নতুন সংবিধানটি। ফলাফলে জানা গেছে, সেনা সমর্থিত সংবিধান প্রনয়নের পক্ষে ব্যাপক ভোট পড়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, থাইল্যান্ডের ৯০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। এদের মধ্যে ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে নয়া সংবিধানকে অনুমোদন দেয়ার পক্ষে। খবর এএফপি ও বিবিসির। স্থানীয় সময় রোববার সকাল থেকে দেশজুড়ে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। গণভোটকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে দুই লাখ পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোথাও কোনো প্রতিবাদ বা গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
কয়েক মাস ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিক্ষিপ্ত সহিংসতা চলার পর ২০১৪ সালে থাই সামরিক বাহিনী রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ?্যমে ক্ষমতা দখল করে। পুরনো সংবিধান বাতিল করে জান্তা সরকার। এই গণভোট জান্তা সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচার জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের প্রথম বড় পরীক্ষা ছিল। যিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দু’বছর ধরে দেশটির রাজনৈতিক কার্যকলাপ দমন করে রেখেছেন। এ জয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৭ সালে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে। তবে ভবিষ্যৎ সরকারকে সামরিক বাহিনীর নির্দেশিত পথেই দেশ চালাতে হবে বলে জানিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা। জান্তা সরকার দাবি করেছে, গণভোটে নতুন সংবিধান অনুমোদিত হওয়ায় পূর্ণ গণতন্ত্রে ফেরার জন্য তা একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু প্রচারণার ওপর বিধিনিষেধ থাকায় আগে থেকেই গণভোটকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে অভিহিত করে সরকারবিরোধীরা। গণভোটের আগেই দেশটির প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নতুন সংবিধান প্রত্যাখ্যান করে। গণভোট শুরুর আগে প্রায়ুথ জানিয়েছিলেন, জনগণ নতুন সংবিধান প্রত্যাখ্যান করলেও তিনি পদত্যাগ করবেন না। আগামী বছর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।
২০১৪ সালে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ড। সেনা সরকারের তৈরি করা সংবিধান অনুমোদন করা না করার প্রশ্নে দেশটিতে রোববার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। জনগণের ভোটের রায়ে নয়া সংবিধানের অনুমোদন পেয়েছে। গণভোটের আগে সেনা সরকারের দাবি করেছিল, নতুন সংবিধান প্রণীত হলে আবারও গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করবে থাইল্যান্ড। ‘সেনাস্বার্থ সংবলিত সংবিধান’ বাস্তবায়ন হওয়ায় আদৌ কি থাইল্যান্ডে গণতন্ত্র ফিরবে, নাকি নির্বাচিত সরকারের আড়ালে থেকে সেনা সরকারই ক্ষমতা চালাবে; সেই প্রশ্ন এড়ানো যাচ্ছে না। জান্তা সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, নতুন সংবিধান অনুমোদিত হোক বা না হোক আগামী বছর নির্বাচন আয়োজন করা হবে। তবে ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চ্যান-ওচার আগেও বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা রাখেননি। সেক্ষেত্রে তার নতুন এই প্রতিশ্রুতি কতটুকু বাস্তবায়িত হবে রয়েছে সে প্রশ্নও। সব মিলে এই গণভোটের মধ্য দিয়ে নয়া সংবিধানের অনুমোদনে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক সংকটের অবসান হবে কিনা, সেটাই সব থেকে জরুরি প্রশ্ন আকারে হাজির হয়েছে। ১৯৩০ সালের শুরুর দিকে থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকে নতুন সংবিধানসহ থাইল্যান্ডে এ পর্যন্ত ২১টি সংবিধান প্রণীত হয়েছে।
রাজতন্ত্র-পরবর্তী থাইল্যান্ড অনেকগুলো সেনা অভ্যুত্থান, বেসামরিক শাসন, পাল্টা অভ্যুত্থান এবং বিক্ষোভ দেখেছে। এ পর্যন্ত দেশটিতে ১২টি সফল সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে সংবিধানও। ‘আপনি কি সংবিধানের খসড়া অনুমোদন করছেন?’ এ প্রশ্নটিতে হ্যাঁ অথবা না ভোট দিয়েছেন থাইল্যান্ডবাসী। এ গণভোটে ৫ কোটি মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। শতকরা ৯০ ভাগ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকের ‘হ্যাঁ’ ভোটের মাধ্যমে অনুমোদিত নতুন খসড়া সংবিধানকে চূড়ান্ত সংবিধান হিসেবে গ্রহণ করবে থাই জান্তা সরকার। সেনাবাহিনী গত দশকে থাইল্যান্ডের রাজনীতিতে অস্থিতিশীলতার জন্য দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের দায়ী করে থাকেন। সেনাবাহিনীর দাবি, নতুন সংবিধানটি দুর্নীতি নির্মূল করবে এবং রাজনীতিবিদদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করবে। তবে সমালোচকদের দাবি, থাইল্যান্ডের বিভাজন নিরসনে নতুন এ সংবিধান নামমাত্রই ভূমিকা রাখবে। বরং এ সংবিধান সেনাবাহিনীর ক্ষমতার প্রসার ঘটাবে এবং আইনসভার ওপর এলিটদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হবে বলে সমালোচনা করেছেন তারা।

No comments

Powered by Blogger.