এবার সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় লাগাম!

তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর সেনাবাহিনীর ক্ষমতায় লাগাম টানতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। সামরিক আইনে সংস্কার এনে সেনাপ্রধানকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করা হতে পারে। এছাড়া সেনাবাহিনীর বাজেট ও পদমর্যাদার যাবতীয় সিদ্ধান্তে পার্লামেন্টকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেয়ার পরিকল্পনা চলছে। স্থানীয় সময় বুধবার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগানের বৈঠক হওয়ার কথা। ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, এই প্রাথমিক পদক্ষেপ ঘোষণা করতে পারেন এরদোগান। নিরাপত্তা কাউন্সিলের সঙ্গে বৈঠকের আগে এরদোগান জানিয়েছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত’ আসছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সেনাবাহিনীর ওপর বেসামরিক সরকারের প্রভাব প্রতিষ্ঠা তুর্কি রাজনীতির দীর্ঘদিনের বিতর্কিত বিষয়।
তিনি জানান, জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে সেনাবাহিনী সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ তুরস্কে ধর্মনিরপেক্ষতার রক্ষক মনে করা হয় সেনাবাহিনীকে। বিগত দশকগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষ চেষ্টার অজুহাতে বেশ কয়েকবার বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা নিয়েছে সামরিক বাহিনী। তবে ধীরে ধীরে সেনাবাহিনীর সেই ক্ষমতা অনেকটাই কমে এসেছে। সর্বশেষ সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থানের চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করেছে তুর্কি জনগণ। ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর দেশটির ৫০ হাজারের বেশি সেনা সদস্য, পুলিশ, বিচারক ও সরকারি কর্মকর্তা বরখাস্ত ও আটক হয়েছে। সরকারের এ ব্যাপক ধরপাকড়ে সমালোচকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট এরদোগান কর্তৃত্ববাদী শাসন পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন। ওয়াশিংটন ইন্সটিটিউট ফর নিয়ার ইস্ট পলিসির তুরস্কবিষয়ক বিশ্লেষক সোনের কাগাপতে বলেন, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় এরদোগান ‘একমুখী জানালা’ খুলতে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্টের হাতে সর্বময় ক্ষমতা নিয়ে তুরস্ককে ‘একদলীয় রাষ্ট্রের’ দিকে অগ্রসর করাবেন।
গণভোট ছাড়া তুরস্কের সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে পার্লামেন্টে ৩৬৭ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হয়। আর গণভোটের আয়োজন করতে হলে প্রয়োজন ৩৩০ এমপির ভোট। বর্তমানে তুর্কি পার্লামেন্টে এরদোগানের একে পার্টির ৩১৭ জন এমপি রয়েছেন। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিলের তুরস্কবিষয়ক বিশ্লেষক আরোন স্টেইন বলেন, সামরিক বাহিনীর ওপর বেসামরিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অন্তর্নিহিত কোনো ভুল নেই। তবে তারা কোন মডেল উপস্থাপন করছে ও সংস্কারের কেমন খসড়া নির্ধারণ করছে তার ওপর ফলাফল নির্ভর করছে। ওবামা-এরদোগান ফোনালাপ : তুরস্কে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুর্কি নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনের জড়িত থাকার ‘প্রমাণ’ দিয়েছে আঙ্কারা। গুলেনকে দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আলোচনা করেছেন। এ সময় তুরস্কের গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতে জড়িত সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তে মার্কিন সহায়তার আশ্বাস দেন ওবামা। তবে তাড়াহুড়া না করে পরিস্থিতি মোকাবেলায় এরদোগানকে সংযমী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট এসব কথা জানিয়েছেন। খবর আল জাজিরার। জোশ আর্নেস্ট বলেন, তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেনকে নিয়ে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন দুই নেতা। অভ্যুত্থানে গুলেনের ভূমিকা নিয়ে মার্কিন সরকারকে ইলেকট্রিক ডকুমেন্টস সরবরাহ করেছে আঙ্কারা।
ওয়াশিংটন এসব নথি খতিয়ে দেখছে। হোয়াইট হাউস মুখপাত্র আরও জানান, তুরস্ক আনুষ্ঠানিকভাবে গুলেনকে ফেরত চেয়েছে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ পর্যালোচনা করে দুই দেশের চুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন। মঙ্গলবার তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বিনালি ইলদিরিম বলেছেন, আবার কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালালে তার বিরুদ্ধে কঠোর হাতে দমন করা হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বসে এক ধর্মীয় নেতা (গুলেন) দেশে কাপুরুষোচিত ঘটনা ঘটিয়েছে। বিনালি ইলদিরিম বলেন, জনগণের শক্তির চেয়ে ট্যাংকের শক্তি বেশি হতে পারে না। এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সবাইকে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। ‘হিজমেত মুভমেন্ট’ নামের আন্দোলনের প্রধান তাত্ত্বিক নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন। শনিবার এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে তিনি সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট এরদোগান আমার ওপর যে অভিযোগ করেছে, আমি তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি না।’ তিনি তুরস্কের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জন্য এরদোয়ানকেই দায়ী করেন। সাংবাদিকদের গুলেন বলেন, ‘এই সম্ভাবনা রয়ে যায় যে, এটি সম্ভবত একটি সাজানো ক্যু। এরদোয়ানের একেপি পার্টিই তা আয়োজন করেছে। আর এর মধ্য দিয়ে তারা গুলেনপন্থী এবং সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করার সুযোগ পাবে।’

No comments

Powered by Blogger.