ট্রাম্পকে নিয়ে দলীয় বিভাজন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন দলীয় ডেলিগেটরা। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান সম্মেলনে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করেছেন অনেকেই। চার দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথমদিনেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি করেন ট্রাম্পবিরোধীরা। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্রুুদ্ধ স্লোগানে ফেটে পড়েন তারা। এমতাবস্থায় আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ডেমোক্রেটের বিরুদ্ধে রিপাবলিকান ঐক্য নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খবর এএফপির।
সোমবার রিপাবলিকান সম্মেলনে হাজির হন কয়েক হাজার ডেলিগেট। তাদের অনেকেই যে কোনো মূল্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রার্থিতা ঠেকানোর আহ্বান জানান। চিৎকার করে বলেন, আমাদের দল থেকে এমন কোনো প্রার্থী হতে পারেন না, যিনি মেক্সিকানদের ধর্ষক বলেছেন, মুসলমানদের নিষিদ্ধের হুমকি দিয়েছেন। ভার্জিনিয়া থেকে আগত ডায়ানা শোরিস নামের একজন ডেলিগেট বলেন, ‘আমাদের কথা শুনতে হবে। কারণ এটা জনগণের সম্মেলন।’ এ সময় ট্রাম্পের সমর্থক ডেলিগেট হইচই করে তাদের থামাতে চেষ্টা করেন। ট্রাম্প সমর্থকরা ‘লজ্জা, লজ্জা’ বলে স্লোগান দেন। পরবর্তীতে ট্রাম্পবিরোধীরা মেঝেতে বসে প্রতিবাদ জানান। সম্মেলনের আগের দিন রোববার সিবিএস টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প স্বীকার করেন, তার মনোনয়নের প্রশ্নে দলে বিভক্তি রয়েছে। এই বিভক্তি কাটিয়ে উঠতে এবং রক্ষণশীলদের মধ্যে তার সমর্থন জোরদার করতেই তিনি ইন্ডিয়ানার গভর্নর মাইক পেন্সকে নিজের রানিং মেট হিসেবে নির্বাচন করেছেন। ট্রাম্পকে নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও দলীয় ডেলিগেটদের সমর্থনে তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
ট্রাম্পের সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই রণেভঙ্গ দিয়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের প্রাইমারি নির্বাচনে ট্রাম্প বিপুল ভোটে জয়ী হন। ট্রাম্প সমর্থকরা বলেন, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের প্রতি ডেলিগেটদের শ্রদ্ধা জানানো উচিত। এবারের সম্মেলনে প্রাইমারি আর ককাসের পর ২৪৭২ জন নির্বাচিত ও মনোনীত ডেলিগেটস ছাড়াও ২৩০০ বিকল্প ডেলিগেটস, ৫০ হাজার কর্মী ও কয়েক হাজার গণমাধ্যম প্রতিনিধি উপস্থিত থাকছেন। বিবিসি জানিয়েছে, প্রথমদিনের সম্মেলনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো প্রার্থী দাঁড় করানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অনেকে এ জন্য রিপাবলিকান শীর্ষ নেতৃত্বকেও দোষারোপ করেন। এ ছাড়া রিপাবলিকান সম্মেলনে আগত প্রতিনিধির মধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে বিভেদও ছিল লক্ষণীয়। প্রথমদিনের অধিবেশনে বক্তৃতা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া। সম্মেলনের প্রথমদিন স্লোগান ছিল-‘মেক আমেরিকা সেফ এগেইন (আমেরিকাকে আবার নিরাপদ করুন)’, দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারের স্লোগান- ‘মেক আমেরিকা ওয়ার্ক এগেইন (আমেরিকাকে আবার কর্মক্ষম করুন)’। সম্মেলনে বক্তাদের আক্রমণের প্রধান টার্গেট ছিলেন ডেমোক্রেট দল থেকে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। রিপাবলিকান নেতারা বলেন,
বিশ্বনেতা যুক্তরাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে হিলারি অযোগ্য। বিশেষ করে, হিলারির সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন আইওয়া রাজ্যের রিপাবলিকান দলের সিনেটর জোনি আর্নস্ট। এই জোনিকে প্রথম দিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিং মেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করার কথা ছিল। কিন্তু তার স্থানে এখন আসছেন মাইক পেন্স। জোনি আর্নস্ট ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নেতৃত্ব দেয়ায় ব্যর্থতার অভিযোগে হিলারি ক্লিনটনকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, হিলারি তার নিজের কথাই ভাবেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের কথা ভাবেন না। উল্লেখ্য, জোনি যখন বক্তব্য রাখেন তখন কনভেনশন হল আস্তে আস্তে খালি হয়ে যেতে থাকে। ওদিকে ট্রাম্পবিরোধী ডেলিগেটদের সম্মেলনে যোগ দিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। রিপাবলিকান সম্মেলন ঘিরে কড়া নিরাপত্তা নিয়েছে ক্লিভল্যান্ডের পুলিশ বিভাগ। শহরটিতে নিবন্ধিত অস্ত্র বহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় সশস্ত্র পুলিশ দেখা যায়। এবার রিপাবলিকান জাতীয় সম্মেলন ক্লিভল্যান্ডে অনুষ্ঠান হওয়া নিয়ে অনেক স্থানীয় অধিবাসী বিস্ময় প্রকাশ করেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামা বিপুল ভোট পান, ১৯৬৪ সালের পর থেকে কোনো ডেমোক্রেট প্রার্থীর জন্য যা ছিল সর্বোচ্চ।

No comments

Powered by Blogger.