জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি করছে

ক্রসফায়ারের কারণে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে জনমনে সন্দেহের সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন আইন ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এসব ঘটনায় অপরাধের বিচার ও তদন্ত প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে বলেছেন, মনে হচ্ছে রাষ্ট্রের আইন ও সংবিধান কোনভাবেই কাজ করছে না। একজন মানুষকে রিমান্ডে নেয়া হলো জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। রিমান্ড মানে তো আদালতের কাস্টডি। সে তো বিচারাধীন। সেখান থেকে তাকে অস্ত্র উদ্ধারের জন্য নেয়া হলো আর ক্রসফায়ারের নামে গুলি করে মেরে ফেলা হলো। এটা অবিশ্বাস্য। বিশিষ্ট এই নাগরিক বলেন, আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, যারা ক্রসফায়ারে নিহত হচ্ছে তাদেরকে ধরতে কত কষ্ট করতে হয়েছে। জনগণ তাদেরকে হাতেনাতে ধরে দিলো। আর সেই লোকটা মারা গেল! এটা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করছে। এবং অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, এর মাধ্যমে মূলত বিচার প্রক্রিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে। বরাবরই নাগরিক সমাজ সমালোচনা করে আসছিলেন এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের। কিন্তু, তাতে কোন কাজ হয়নি। বরং, ক্রসফায়ারের হার বেড়ে যাচ্ছে। গত ১৩ দিনে ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে অন্তত ১৭ জন। ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত বলেন, আদালত এই হত্যাকাণ্ডের জবাব চাইতে পারে। জবাব না চাইলে, এই অবস্থা চলতেই থাকবে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, ‘আমার তো মনে হয় দেশে কারও কোন সন্দেহ নাই যে, পুলিশ তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে ফেলছে। বাংলাদেশে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনজীবী বা পরিচিত কারও উপস্থিতির বিধান রয়েছে। কিন্তু, সেই নিয়মটি মোটেও মানা হচ্ছে না। ড. শাহদীন মালিক বলেন, ২০০৪-০৫ সালে হয়তো  কেউ কেউ ক্রসফায়ারের কিস্‌সা বিশ্বাস করতো, এখন কেউ এটা বিশ্বাস করে না। বিষয়টি নিয়ে একটি সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। বলেন, তদন্ত না হলে এ ধরনের ঘটনা চলতেই থাকবে। ফলে পুলিশের আসল অপরাধীকে ধরার যোগ্যতা কমে যাবে।’ তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্ন ছিল, কী ধরনের তদন্ত হওয়া উচিত? তিনি বলেন, একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের উচ্চপদস্থ কোন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা, একজন আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট চার-পাঁচ জন সদস্যের সমন্বয়ে একটি কমিটির অধীনে তদন্ত হওয়া দরকার। ক্রসফায়ারের ঘটনাগুলো মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। এ ঘটনাগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত হওয়া দরকার। এর পাশাপাশি সার্বিক ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সমস্যা নিয়েও একটি কমিশন হওয়া জরুরি বলে তিনি মত দেন। তিনি বলেন, আমাদের বিচার ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। পুলিশ ব্যর্থ হচ্ছে। আমাদের দেশে যত মামলা হয়, তার অন্তত ৯০% মামলায় আসামিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, ওই সব অপরাধে ভুক্তভোগীর ক্ষতি হয়েছে। কেউ না কেউ তো অপরাধ করেছে। অথচ তাদের বিচারের আওতায় আনা যাচ্ছে না। নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলার ক্ষেত্রে তো খালাস পাচ্ছে ৯৮%। এসব বিষয় নিয়েও গুরুত্বসহকারে তদন্ত হওয়া দরকার।

No comments

Powered by Blogger.