দুই সন্দেহভাজনের খোঁজে পুলিশ

ব্রাসেলসের একটি সড়কে মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী হামলার শিকার
ব্যক্তিদের অস্থায়ী স্মারকের সামনে গতকাল এক মিনিট
নীরবতা পালন করে শ্রদ্ধা জানায় সাধারণ মানুষ। রয়টার্স
বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে মঙ্গলবারের হামলায় জড়িত সন্দেহভাজন দুজনকে ধরতে চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে দেশটির পুলিশ। এর মধ্যে একজন ম্যালবিক মেট্রো স্টেশনে (পাতালরেল) আত্মঘাতী হামলার স্থানে শনাক্ত হয়। অপরজনকে শনাক্ত করা হয়েছে জাভেনতেম বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে। এদিকে হামলায় অংশ নেওয়া দুই ভাইয়ের নাম পুলিশের খাতায় ছিল এবং তাঁদের একজনকে এর আগে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী যোদ্ধা’ হিসেবে তুরস্ক বহিষ্কার করে নেদারল্যান্ডসে পাঠায়— এমন তথ্য প্রকাশের পর কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছে ইউরোপের নিরাপত্তাবিষয়ক কর্তৃপক্ষগুলো। ব্রাসেলসের কৌঁসুলি ফ্রেডরিক ভন লিউ গত বুধবার বলেন, জাভেনতেম বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নেন ইব্রাহিম আল বকরাউয়ি (২৯)। মেট্রো স্টেশনে হামলায় অংশ নেন তাঁর ভাই খালিদ আল বকরাউয়ি (২৭)। পুলিশ সূত্র বলেছে, বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নেওয়া আরেকজনের নাম নাজিম লাশরাউয়ি (২৫)। পুলিশ বিমানবন্দরে হামলায় অংশ নেওয়া তৃতীয় ব্যক্তির খোঁজে অভিযানে নেমেছে গতকাল। সিসিটিভির ফুটেজে ইব্রাহিম ও নাজিমের পাশে তাঁকে হ্যাট ও জ্যাকেট পরা অবস্থায় দেখা যায়। অন্য দুই আত্মঘাতী হামলাকারীর বিস্ফোরক-ভর্তি লাগেজ বিস্ফোরিত হলেও তার লাগেজটির বিস্ফোরক ফাটেনি। পাশাপাশি মেট্রো স্টেশনের হামলায় অংশ নেওয়া সন্দেহভাজন আরেক ব্যক্তির অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা বলছেন, বিমানবন্দরের সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়া তিনজনেরই ফ্রান্সের প্যারিসে গত নভেম্বরের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। ওই হামলার দায় স্বীকার করে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। এতে করে ইউরোপীয় দেশগুলো কতটা হুমকির মধ্যে রয়েছে, তা আবার সামনে এসেছে। ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন প্রশ্ন উঠেছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের বুধবারের এক বক্তব্যের পর। তিনি সেদিন বলেছেন, ব্রাসেলস হামলায় অংশ নেওয়া একজনকে তাঁরা গত বছরই গ্রেপ্তার করে এবং বহিষ্কার করে নেদারল্যান্ডসে পাঠিয়েছিল। এরদোয়ানের এ কথার পরে তুরস্কের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, বিতাড়িত ওই ব্যক্তিই ইব্রাহিম আল বকরাউয়ি। তবে বেলজিয়ামের বিচারমন্ত্রী কোয়েন গিনস ভিআরটি টেলিভিশনকে বলেন, ইব্রাহিম তখন বেলজিয়ামে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। সাধারণ অপরাধের ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়ে প্যারোলে মুক্ত ছিলেন। কিন্তু ব্রাসেলস হামলার আগে থেকেই ইব্রাহিম ও তাঁর ভাই খালিদকে খুঁজছিল বেলজিয়ামের পুলিশ। অপরাধের দীর্ঘ অতীত রেকর্ড থাকা এই দুই বেলজীয়কে খোঁজা হচ্ছিল প্যারিস হামলায় জড়িত বলে সন্দেহভাজন সালাহ আবদেসালামের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার ধারণা থেকে। আবদেসালামকে গত শুক্রবার ব্রাসেলসের একটি গোপন আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে আবদেসালামের আইনজীবী সভেন মেরি বলেছেন, তাঁর মক্কেল ব্রাসেলসের হামলা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। ফরাসি নাগরিক আবদেসালামকে প্যারিস হামলার তদন্তের স্বার্থে সে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এত দিন এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালাচ্ছিলেন আবদেসালাম। তবে এখন তিনি প্যারিস যেতে রাজি। মঙ্গলবারের হামলায় অন্তত ৩১ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি ২৭০ থেকে ৩০০ জন আহত হন বলে গতকাল জানিয়েছে বেলজিয়ামের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হতাহত ব্যক্তিরা বেলজিয়ামসহ প্রায় ৪০টি দেশের নাগরিক। আহত অন্তত ৬১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদিকে সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবিলায় একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে গতকালই জরুরি বৈঠকে বসার কথা ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিচারমন্ত্রীদের।

No comments

Powered by Blogger.