শরণার্থী সংকট নিরসনে ইইউ–তুরস্ক চুক্তি

শরণার্থী সংকট নিরসনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও তুরস্কের মধ্যে চুক্তি হয়েছে। বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে গতকাল শুক্রবার এ চুক্তি হয়। চুক্তি স্বাক্ষরের এই দিনকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু। আহমেত দাভুতোগলু বলেন, ‘আজ আমরা উপলদ্ধি করতে পারছি যে, তুরস্ক ও ইইউর ভাগ্য অভিন্ন। তাদের সামনে চ্যালেঞ্জ অভিন্ন এবং ভবিষ্যৎ অভিন্ন।’ ইইউর নেতারা শরণার্থী সংকট নিয়ে নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠকের পর গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে মতৈক্যে পৌঁছান। পরে এর ভিত্তিতে গতকাল তুর্কি প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলুর কাছে দেওয়া প্রস্তাবে বলা হয়, গ্রিস থেকে সিরীয় শরণার্থী ফিরিয়ে আনার বিপরীতে তুরস্কে অবস্থানরত সমসংখ্যক সিরীয় শরণার্থীকে ইউরোপে পুনর্বাসন করা হবে। একই সঙ্গে ওই প্রস্তাবে তুরস্ককে শরণার্থী পুনর্বাসনের জন্য ইইউর পূর্বপ্রতিশ্রুত অর্থের দ্বিগুণ সহায়তা তহবিল এবং দেশটিকে রাজনৈতিক ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়। গ্রিস থেকে সিরীয় শরণার্থী ফিরিয়ে আনার বিনিময়ে তুরস্কে অবস্থানরত সিরীয় শরণার্থীদের ইউরোপে পুনর্বাসন করার প্রস্তাব নিয়ে কয়েক দিন আগেই তুরস্কের সঙ্গে ইইউর প্রাথমিক মতৈক্য হয়েছিল। এরপর গতকাল চুক্তি হলো। এর আগে ব্রাসেলসে ইউরোপের নেতাদের সঙ্গে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলুর বৈঠক শুরু হওয়ার ঘণ্টা খানেক আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এক টেলিভিশন ভাষণে ইউরোপীয় নেতাদের কড়া সমালোচনা করেন। এরদোয়ান বলেন, তুরস্ক যখন ৩০ লাখ শরণার্থীকে দেখভাল করছে,
তখন মধ্য ইউরোপের দেশগুলোতে অল্প কিছু অসহায় শরণার্থী ‘লজ্জাজনক’ অবস্থায় রয়েছে। তারা সেখানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় তুরস্ককে কী করতে হবে না হবে, তা নিয়ে সবক দেওয়ার আগে তাদের উচিত নিজেদের দিকে তাকানো। এরদোয়ান বলেন, ইউরোপের কয়েকটি দেশ কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) মিলিশিয়াদের তুরস্কের বিরুদ্ধে লড়াই করতে মদদ দিচ্ছে। এটা মাইন পাতা মাঠে নৃত্যগীতে মত্ত হওয়ার শামিল। ইইউ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে তুর্কি প্রধানমন্ত্রী দাভুতোগলু সাংবাদিকদের বলেন, তিনি শরণার্থী সংকটকে আর্থিক বিবেচনায় দেখবেন না। এ ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনা অগ্রাধিকার পাবে। তিনি বলেন, তুরস্ককে তাঁরা কিছুতেই শরণার্থীদের ‘কারাগার’ হতে দেবেন না। বৈঠকের আগে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, তুরস্ককে আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে শরণার্থীদের দেখভাল করতে হবে। তবে ম্যার্কেল প্রথম থেকেই বলে আসছেন, গ্রিস থেকে শরণার্থী ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব বাস্তবায়ন এ সংকট কাটাবে বলে তিনি মনে করেন না। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ বলেছেন, তিনি মনে করেন না, ব্রাসেলস বৈঠক থেকে আশাব্যঞ্জক কিছু একটা বেরিয়ে আসবে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তুরস্ক হয়ে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থী ও অভিবাসনকামী ইউরোপে ঢুকেছে। এ বছরেই ঢুকেছে ১ লাখ ৩২ হাজারের বেশি মানুষ।

No comments

Powered by Blogger.