দেড়শ’ টাকা টিকিটের দাম কালোবাজারে আট হাজার টাকা!

বাংলাদেশ-ভারত ফাইনাল ম্যাচের টিকিট গত দু’দিন সবচেয়ে প্রার্থিত ছিল নগরবাসীর কাছে। রোববার সকালে গিয়ে দেখা যায়, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের (ইউসিবিএল) মিরপুর শাখা থেকে এবং ইউক্যাশের মাধ্যমে অনেকেই টিকিট কিনতে পেরেছেন। তবে এসব সৌভাগ্যবান দর্শকের সংখ্যা কম। বেশিরভাগ ক্রিকেটপ্রেমীকে হতাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। শত চেষ্টা করেও টিকিট পাননি তারা। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর থেকে স্টেডিয়াম পর্যন্ত ২ নম্বর রোডে অনেক দর্শককে দেখা গেলো মুঠোফোনে কথা বলতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, স্বপ্নের টিকিট পেতে গোপনে কালোবাজারিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন তারা। কালোবাজরিরা দেড়শ’ টাকার টিকিটের দাম হেঁকেছে আট হাজার টাকা! স্টেডিয়াম চত্বর ও এর আশপাশের এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়। জানা গেছে, বিপুল দর্শক সমাগমের কথা মাথায় রেখে প্রশাসনের নির্দেশে এসব দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তবে বিশেষ কিছু দোকান খোলা ছিল। দুপুর ২টার দৃশ্য। এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ম্যাচটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হবে।
স্টেডিয়ামের গেট খোলা হবে বিকেল ৫টায়। দুপুর থেকেই স্টেডিয়াম চত্বরে দর্শকদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। উন্মাদনার পারদ ক্রমে বাড়ছিল। কারও মাথায় লাল-সবুজের পতাকার আদলে হেড ব্যান্ড। লাল-সবুজের রিস্ট ব্যান্ডও দেখা গেল অনেকের হাতে। বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে দিয়ে এসেছেন অনেকে। মাঠে মাশরাফিদের উজ্জীবিত করতে কারও কারও হাতে ছিল প্রতীকী টাইগার। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা শহিদুল ইসলাম জানান, ‘আগে স্টেডিয়ামে ঢুকতে চাই। তাই তিন ঘণ্টা আগেই চলে এসেছি। শনিবার অনেক কষ্ট করে পুলিশের লাঠিচার্জের পর টিকিট কিনতে পেরেছি। তাই নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের লাকি দিন আজ (গতকাল)। তাই গেট খোলার প্রায় তিন ঘণ্টা আগে এসে হাজির হয়েছি স্টেডিয়ামে। যাতে সবার আগে গিয়ে ভালো জায়গায় বসতে পারি। প্রাণ ভরে খেলা উপভোগ করতে পারি।’ একজন দর্শককে দেখা গেল মুঠোফোনে কথা বলছেন। কাছে যেতেই বোঝা গেল কালোবাজারির সঙ্গে টিকিট নিয়ে দরদাম চলছে। এই প্রতিবেদকের উপস্থিতি আঁচ করতে পেরে কিছুটা সরে যান তিনি।
কৌশলে জানা গেল, দেড়শ’ টাকা দামের গ্যালারির একটি টিকিটের জন্য কালোবাজারি আট হাজার টাকা চাইছে। শেষ পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকায় রফা হয়। স্বপ্নের টিকিট পেতে বিশেষ একটি স্থানে যেতে হয় ওই দর্শককে। মাথায় লাল সবুজ হেড ব্যান্ড, হাতে পতাকা ও গায়েও লাল-সবুজ জার্সি পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে খেলা দেখতে আসেন কায়েস মাহমুদ। পেশায় ব্যবসায়ী। তার মতে, বাংলাদেশই ফেভারিট। ভারতকে হারিয়ে মাশরাফিরা শিরোপা জিতে ইতিহাস রচনা করবেন বলে মনে করেন তিনি। কায়েসের কথায়, ‘ইতিহাসের সাক্ষী হতে স্টেডিয়ামে এসেছি। আমার মনে হয়, দিনটি আমাদেরই হবে। ভারতকে হারিয়ে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হব। এশিয়ার ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস রচিত হবে। যার সাক্ষী হব আমিও।’ বেলা তখন ৩টা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্টেডিয়াম চত্বরে বাড়তে থাকে দর্শক সমাগম। পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও দেখা গেল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে। প্রমীলা দর্শকদের সঙ্গে শিশুরাও ছিল। হাতে লাল-সবুজ পতাকা। মাথায় ‘বাংলাদেশ’ লেখা ব্যান্ড। বড়দের সঙ্গে মাঠে বসে দেশকে সমর্থন জোগাতে পিছপা হতে রাজি নয় তারাও।

No comments

Powered by Blogger.