ভারত মুখে ধর্মনিরপেক্ষ হলেও কাজে নয় by ইকতেদার আহমেদ

ধর্মান্তরিত হতে হবে বলে হুমকি দিয়েছে
ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দল
পৃথিবীর যেসব রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে সেসব রাষ্ট্রে প্রত্যেক নাগরিক যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার ভোগ করে থাকে। এ অধিকারটি একজন নাগরিকের স্বেচ্ছাধীন। একজন নাগরিক স্বেচ্ছায় এ অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্মান্তরিত হতে চাইলে তার জন্য সাবালক ও প্রকৃতস্থ হওয়া অত্যাবশ্যক। তা ছাড়া স্বেচ্ছাধীন ধর্মান্তকরণ আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকার পরিপন্থী যেন না হয়, সে বিষয়ে রাষ্ট্রকে সচেষ্ট থাকতে হয়।
আমাদের এ উপমহাদেশ বিভাগের আগে এটি ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের অধীন ছিল। ব্রিটিশেরা সে সময় প্রায় শতভাগই খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী ছিল। আমাদের এ উপমহাদেশসহ পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে ব্রিটিশেরা উপনিবেশ গড়ে তুলেছিল, সেসব অঞ্চলের নাগরিকদের তারা ধর্মান্তকরণের মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করত। এসব প্রলোভনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল চাকরি ও ব্যবসায়ের সুযোগ। যোড়শ শতক থেকে বিগত শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্রিটিশদের উপনিবেশ এত বিস্তৃত ছিল যে, ‘সেখানে সূর্য অস্তমিত হওয়ার সুযোগ ছিল না’। ব্রিটিশেরা তাদের উপনিবেশগুলোর নাগরিকদের ধর্মান্তকরণে আফ্রিকা মহাদেশ, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ এবং প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলোতে যেভাবে সফলতা পেয়েছিল, অনুরূপ সফলতা ভারতবর্ষে পায়নি। এর পরও বর্তমানে ভারতবর্ষের সামগ্রিক জনসংখ্যার শতকরা দুই ভাগের বেশি খ্রিষ্টান। ভারতের তিনটি রাজ্য রয়েছে যথাÑ নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও মেঘালয়, যেখানে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা হিন্দু জনসংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। অপর দিকে জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা হিন্দু জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারতবর্ষ ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতে বিভাজিত হয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। ভারত রাষ্ট্রটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা সমন্বয়ে গঠিত। অপর দিকে পাকিস্তান মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা সমন্বয়ে গঠিত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রটি থেকে এর পূর্বাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে। বাংলাদেশ সৃষ্টিলগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে আসছে, যদিও একটি উল্লেখযোগ্য সময় রাষ্ট্রীয় মূলনীতি থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি বিলুপ্ত ছিল। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্র। অপর দিকে ১৯৭৪-পরবর্তীকালে সাংবিধানিকভাবে ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
ধর্মীয় জাতিসত্তার কারণে ভারতবর্ষ বিভাজিত হওয়ায় ভারতের একশ্রেণীর ধর্মান্ধ লোক হিন্দুত্ববাদকে আঁকড়ে ধরে আছে। উপমহাদেশ বিভাগ-পরবর্তী জাতিগত দাঙ্গা, বিশেষত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় ভারতে যত মুসলিম নরনারীর প্রাণহানি ঘটেছে, এমনটি উপমহাদেশের অপর কোনো রাষ্ট্রে ঘটেনি। ভারতে বর্তমানে বিজেপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন। এ দলটি হিন্দুত্ববাদের পৃষ্ঠপোষক এবং এর সহযোগী অনেক দল গোঁড়া হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাসী। সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বিগত ১১ বছরে সে দেশের সাড়ে সাত লাখ মুসলিম ও খ্রিষ্টান নাগরিককে বলপূর্বক বা প্রলোভনের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ভারতে প্রায়ই দেখা যায়, মুসলিম ও খ্রিষ্টান নাগরিকেরা চাকরি, ব্যবসায় ও সামাজিক মর্যাদার দিক দিয়ে হিন্দুদের থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তা ছাড়া মুসলিম ও খ্রিষ্টানেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দ্বারা নিগৃহীত হওয়ায় বিষয়টি অনেক রাজ্যের ক্ষেত্রেই প্রতিদিনের ঘটনায় রূপ নিয়েছে। ভারতের অনেক স্থানে এমনও দেখা যায়, মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের গরু জবাই দূরের কথা, গরুর গোশত খাওয়ার ক্ষেত্রেও তীব্রভাবে বাধা দেয়া হয়। গরুর গোশত খাওয়ার মিথ্যা অভিযোগে সম্প্রতি উত্তর প্রদেশে ষাটোর্ধ্ব একজন ব্যক্তি ও তার ছেলেকে হত্যা করা হলে ঘটনাটি সারা বিশ্বে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় তোলে।
ভারতের সামগ্রিক জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ও খ্রিষ্টান জনসংখ্যার যে আনুপাতিক অবস্থান, সে অনুযায়ী তারা লেখাপড়া ও চাকরির সুযোগ পাচ্ছে না। অথচ উপমহাদেশের অন্যান্য দেশ বিশেষত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে চাকরি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, বাংলাদেশে এমন নজির বিরল। বাংলাদেশে বিক্ষিপ্তভাবে যেসব কথিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়েছিল, এর সবগুলোই রাজনৈতিক মদদপুষ্ট। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল ভারতের ক্ষমতাসীন দলের আনুকূল্য লাভের প্রত্যাশায় তারা ক্ষমতায় থাকলে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নিরাপদ- এমন আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপনের প্রত্যয়ে ইচ্ছা করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের উপলক্ষ সৃষ্টি করেছিল।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর বেশির ভাগ পার্বত্য চট্টগ্রামে বাস করে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে কিছুসংখ্যক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। এসব নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগই হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক বিরাট অংশই খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের মাধ্যমে প্রভাবিত ও প্রলুব্ধ হয়ে খ্রিষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছেন; তবে বাংলাদেশের কোনো অঞ্চলে এ দেশটি সৃষ্টির পরবর্তী সময়ে কোনো মুসলিম রাজনৈতিক নেতা কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে একক বা দলবদ্ধভাবে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য বল প্রয়োগ বা প্রভাবান্বিত করেছেন, এমনটি শোনা বা দেখা যায়নি।
ভারতের গণমাধ্যমে যখন তথাকার মুসলিম ও খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীকে হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণের তথ্য প্রকাশ করেছে, ঠিক একই সময় বিজেপি দলের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, প্রতি বছর ভারতের আট লাখ হিন্দু ইসলাম ও খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হচ্ছে। ভারতবর্ষ একসময় হিন্দু ও বৌদ্ধ জনসংখ্যা-অধ্যুষিত ছিল। ভারতবর্ষে যখন বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক বিস্তার ঘটতে থাকে, তখন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে নির্যাতিত, নিগৃহীত ও নিষ্পেষিত হওয়ার কারণে সে বিস্তৃতি রোধ সম্ভব হয়। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র- এ চারটি বর্ণে অন্তর্ভুক্ত হলেও প্রতিটি বর্ণের পূজা-পার্বণ পরিচালনার জন্য নিজস্ব ব্রাহ্মণ রয়েছেন। তবে সর্বোচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মণদের মর্যাদার চেয়ে নিম্নতর বর্ণের ব্রাহ্মণদের মর্যাদা ভিন্ন। অতীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যারা কামার, কুমার, নাপিত, মেথর, মুচি প্রভৃতি পেশাভুক্ত ছিল, তারা জন্মগতভাবেই এসব পেশায় অন্তর্ভুক্ত থেকে জীবিকা নির্বাহ করত। তখন বিভিন্ন পেশাজীবীর মধ্যে পেশা পরিবর্তনের কোনো প্রবণতা পরিলক্ষিত হতো না। স্বপেশায় অন্তর্ভুক্ত থাকার বিষয়ে অতীতের কঠোরতা এখন আগের মতো নেই। শিক্ষার প্রসারের কারণে নিম্নবর্ণের অনেক হিন্দু আজ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক প্রভৃতি পেশায় নিয়োজিত।
হিন্দু ধর্মে বর্ণভেদ প্রথার কারণে যারা প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক চিন্তাচেতনার অনুসারী, তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে সব সময় ব্যক্তিমানুষের মর্যাদা অধিক গুরুত্ব পেয়েছে। হিন্দু ধর্মে যেমন বর্ণবৈষম্য রয়েছে, অনুরূপ বর্ণবৈষম্য ইসলাম ধর্মে না থাকায় এ উপমহাদেশে আরব ও তৎসংলগ্ন অঞ্চল থেকে যখন ইসলাম ধর্ম প্রচারকেরা এসেছিলেন, তখন তারা ইসলাম ধর্মের সাম্যের আদর্শের মাধ্যমে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আফগানিস্তান, পারস্য, তুর্কিস্তান ও মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যেসব মুসলিম সেনাপতি ভারতবর্ষে অভিযান পরিচালনা করেছিলেন, তাদের সৈন্য বাহিনীর প্রায় শতভাগই ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিল। এসব সেনাপতির কাছে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের হিন্দু ধর্মাবলম্বী শাসনকর্তারা যুদ্ধে পরাভূত হলে তাদের অধীনস্থ প্রজাদের অনেকে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। আবার এমনও দেখা গেছে, মুসলিম সেনাপতিদের সাথে আগত সৈন্যবাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য হিন্দু নারীদের বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে তাদের ধর্মান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ জুগিয়েছেন। তবে মুসলিম সেনাপতি ও তাদের সাথে আগত সৈন্যদল জোরপূর্বক ভারতবর্ষের হিন্দুদের ধর্মান্তরিত করেছিল, এমন অভিযোগ কিছু হিন্দু ইতিহাসবিদ তুললেও তা বাস্তবে প্রতিষ্ঠা পায়নি।
ঔপনিবেশিক শাসক ইংরেজরা ভারতবর্ষের মুসলিম শাসকদের পরাভূত করে এখানে তাদের সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটিয়েছিল। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে পলাশীর প্রান্তরে বাংলার তৎকালীন শাসক নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনী ইংরেজদের কাছে পরাভূত হলে এ অঞ্চলে ইংরেজ শাসনের গোড়াপত্তন এবং তারও ১০০ বছর পর ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লির শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ ইংরেজদের কাছে পরাভূত হলে সমগ্র ভারতবর্ষে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতবর্ষে ইংরেজরা বিভিন্ন যুদ্ধে মুসলিমদের পরাস্ত করার ক্ষেত্রে হিন্দুদের সহায়তা পেয়েছিল। এ কারণেই এ উপমহাদেশে ব্রিটিশদের আগমনের পর থেকে হিন্দুরা তাদের আনুকূল্য লাভ করতে থাকে। এ ধরনের আনুকূল্য শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চাকরির ক্ষেত্রে হিন্দুদের অবস্থান মুসলিমদের চেয়ে অনেক বেশি সুসংহত করে তোলে।
ভারতবর্ষ বিভাজন-পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তান থেকে যে হারে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা দেশ ত্যাগ করেছিল, তদানীন্তন পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী ভারতের রাজ্য থেকে সে হারে মুসলিমরা দেশ ত্যাগ করলেও ভারতের মধ্যবর্তী ও দক্ষিণাঞ্চলের মুসলিমদের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ দেশ ত্যাগ করে পাকিস্তানে পাড়ি জমিয়েছিলেন। বর্তমানে পাকিস্তানের সামগ্রিক জনসংখ্যার অতি ক্ষুদ্র অংশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। অপর দিকে বাংলাদেশের সামগ্রিক জনসংখ্যার ৮ ভাগের অধিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। বাংলাদেশের হিন্দুরা তাদের সংখ্যানুপাতে চাকরি, শিক্ষা ও ব্যবসায় কার্যত মুসলিমদের চেয়ে অধিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। তবুও কোনো এক অজানা কারণে তাদের অনেকেই এ দেশের প্রতি শতভাগ অনুগত নন বলে আচরণে প্রমাণিত হয়। কারণ এদের অনেককে দেখা যায়, এখানে চাকরি বা ব্যবসা করলেও সম্পদ গড়ছেন ভারতে। আবার এমনও দেখা যায়, এ দেশে চাকরিকাল সমাপ্ত করে অবসর-পরবর্তী সব পাওনা সরকার থেকে বুঝে নিয়ে ভারতের উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ভারতে বসবাসরত মুসলিমদের মধ্যে এ প্রবণতা একেবারেই নেই। সেখানে বসবাসরত মুসলিমরা শতভাগ ভারতীয় এবং ভারতের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতার প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল। এ দেশে বসবাসরত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবার মধ্যে এ ধরনের প্রবণতা পরিলক্ষিত হলে তা এ দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক এবং এ দেশের জন্য কল্যাণকর হতো।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী হিসেবে জন্মগ্রহণকারীরাই একমাত্র হিন্দু হিসেবে স্বীকৃত হয়ে থাকেন। অনেক হিন্দু ঐতিহাসিকের ধারণা, প্রথম থেকেই অন্য ধর্মাবলম্বীদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয়া না হলে আজ সমগ্র পৃথিবীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা অধিক হতো। ইদানীং ভারতে ‘ঘর ওয়াপসি’র নামে অন্য ধর্মের লোকদের হিন্দু ধর্মে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘অতীতে এরা হিন্দুই ছিল, এদের একসময় মুসলমান বা খ্রিষ্টান বানানো হয়েছিল। তাই এখন হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।’ এটি গোঁজামিল ছাড়া আর কিছুই নয়।
ধর্ম হলো ঐশ্বরিক শক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ। আর তাই একজন প্রকৃত ধর্মবিশ্বাসী যে ধর্মেরই অনুসারী হন না কেন, তার পক্ষে অপরকে জোরপূর্বক নিজ ধর্মের প্রতি টেনে আনা সমীচীন নয়।
উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারত ভৌগোলিকভাবে বৃহত্তর এবং সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে শক্তিধর। উপমহাদেশের অন্যান্য রাষ্ট্রে গণতান্ত্রিক শাসন বাধাগ্রস্ত হলেও ভারতে তা কখনো প্রত্যক্ষ করা যায়নি। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক সূচকের দিক থেকে ভারত বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে পশ্চাৎপদ। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তাতে তাদের সামরিক বা অর্থনৈতিক শ্রেষ্ঠত্ব ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য বলপূর্বক বা প্রভাবান্বিত করে অপর ধর্মাবলম্বীদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিতকরণ দেশটির সাংবিধানিক চিন্তা-চেতনা এবং দীর্ঘ দিন অনুসৃত গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। সুতরাং যত দ্রুত ভারত নিজেকে এ ধরনের কালিমা থেকে মুক্ত করতে পারবে, তত দ্রুতই দেশটির অবনমিত ভাবমূর্তির পুনরুদ্ধার ঘটবে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
iktederahmed@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.