খুব শিগগির দৃশ্যমান পরিবর্তন চোখে পড়বে -বিশেষ সাক্ষাৎকার: আনিসুল হক by এ কে এম জাকারিয়া
আনিসুল হক |
দায়িত্ব
নেওয়ার পর ৬ মাসের বেশি সময় পার করেছেন ঢাকার দুই মেয়র। তাঁদের বেশ কিছু
নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল। এসব প্রতিশ্রুতি পূরণে তাঁরা কতটুকু এগিয়ে
গেলেন, কী কী করতে যাচ্ছেন, কোনো বাধা বা সমস্যার মুখে পড়ছেন কি না—এসব
নিয়ে প্রথম আলোর মুখোমুখি হয়েছেন ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক।
প্রথম আলো : মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাস ছয়েক হলো। নির্বাচনের আগে আপনি বলেছিলেন সমস্যাগুলো চিহ্নিত, বলেছিলেন এবার সমাধানযাত্রা। এই পথে কতটুকু এগোলেন?
আনিসুল হক : আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল। পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ঢাকা, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ঢাকা, সচল ঢাকা, মানবিক উন্নয়নের ঢাকা, স্মার্ট ও ডিজিটাল ঢাকা এবং অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা। বলতে পারেন এই সব কটি ক্ষেত্রেই আমরা কাজ শুরু করেছি। এসবের সুফল আপনারা খুব শিগগির দেখতে পাবেন।
প্রথম আলো : এসব ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ অগ্রগতির কথা জানাবেন কি?
আনিসুল হক : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে বলতে পারি, রাস্তায় ময়লা জমানো এবং সেখান থেকে তা সরানোর যে পদ্ধতি এত দিন কার্যকর ছিল, তা আর থাকবে না। আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন স্থানে ৭২টি মিড ট্রান্সফার স্টেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে স্প্রে ও ওয়াশ করার ব্যবস্থা থাকবে এবং এসব স্টেশন থেকে ময়লা ডাম্পিং স্টেশনে চলে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৫টি এবং মার্চ নাগাদ সব কটি স্টেশন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। রাস্তাঘাট যাতে নিয়মিত পরিষ্কার হয় সে জন্য ক্লিনারদের সঙ্গে দফায় দফায় বসেছি। ঢাকা শহরকে অপরিকল্পিত বিলবোর্ডমুক্ত করার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হয়েছে। ৮৫ শতাংশ বিলবোর্ড সরে গেছে। সবুজ ঢাকার অংশ হিসেবে ফ্লাইওভারগুলো ফুল দিয়ে সুশোভিত করার কাজ শুরু হয়েছে। শাহীন স্কুলের পাশেরটি হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাকিগুলোও হয়ে যাবে। আমরা সবুজায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। কয়েকটি পার্ক সবুজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রজাপতি পার্ক, কাঠবিড়ালি পার্ক—এসব করার উদ্যোগ নিয়েছি। সব বাড়িতে যাতে গাছ লাগানো হয়, সে জন্য আমরা গাছ সরবরাহ করব। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আমরা কাজটি করব। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে মিলে বিমানবন্দর সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হচ্ছে। ১০০-এর বেশি গণশৌচাগার নির্মিত হচ্ছে। এসব দৃশ্যমান হতে কিছু সময় লাগবে।
প্রথম আলো : ঢাকা শহরবাসী যানজটকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করে। আপনিও ঢাকাকে সচল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ছয় মাসে কী অগ্রগতি হলো? আর যানজট দূর করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের খুব কিছু করার আছে কি?
আনিসুল হক : আসলে যানজট দূর করতে সরাসরি আমাদের করার কিছু নেই। যানবাহন বলুন বা রাস্তাঘাটের নিয়ন্ত্রণ বলুন, এগুলো আমাদের হাতে নেই। আমরা যা করার চেষ্টা করছি তা হচ্ছে রাস্তাঘাট দখলমুক্ত করা। মহাখালীর সামনের বাস পার্কিং বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজটি খুব সহজ না। আমরা গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত ২২টি ইউলুপ নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এগুলো তৈরি হলে কোনো গাড়ি ক্রসিংয়ে আটকা পড়বে না। এ জন্য দুটি মন্ত্রণালয় থেকে জমি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। আশা করি তাদের সহযোগিতা পাব। এটা হলে যানজট অনেকটা কমবে। এই প্রকল্প সফল হলে অন্যান্য এলাকাতেও তা করা হবে।
প্রথম আলো : বিশৃঙ্খলার চরমে পৌঁছেছে ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থা। নগরবাসীর জন্য এ ক্ষেত্রে কি সিটি করপোরেশনের কিছু করার নেই?
আনিসুল হক : এ ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতির কথা আপনাকে জানাতে চাই। ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসমালিকদের সঙ্গে আমরা বসেছি। সমন্বিতভাবে বিভিন্ন রুটে বাস চালানো যায় কি না, সে ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি কোম্পানির অধীনে সব মালিক বাস চালাতে রাজি হয়েছেন। পুরোনো বাস উঠিয়ে তিন হাজার বাস নামানোর কথা হয়েছে। তবে তাঁরা আমাকে শর্ত দিয়েছেন যে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হারে ঋণ জোগাড় করে দিতে হবে। আমি এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হবে। এটা কার্যকর করা গেলে ঢাকার গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন হবে। নতুন ও আধুনিক বাস চলবে। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামবে ও যাত্রীরা ওঠানামা করবে। সব মালিকের বাস পাঁচটি কোম্পানির আওতায় এলে বেপরোয়া বাস চালানোর প্রবণতাও কমবে। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে কাজটি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
প্রথম আলো : নতুন মেয়রদের অধীনেও এবার বর্ষায় ঢাকাবাসী জলাবদ্ধতার পুরোনো রূপই দেখল। কোনো আশার কথা?
আনিসুল হক : এই একটি জায়গায় আমি আপনাদের পরিষ্কার করে বলতে পারছি না যে কী করতে পারব বা পারব না। এটা আমার হাতের বাইরে। খাল বন্ধ, নালা বন্ধ। এসব পরিষ্কার ও খনন করার দায়িত্ব ওয়াসার। আমরা এখন গুলশান ও বনানী এলাকার রাস্তাগুলোকে মানসম্মত ড্রেনসহ নির্মাণ করছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। উত্তরাতেও হচ্ছে। কিন্তু মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের ক্ষেত্রে ওয়াসার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো : এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?
আনিসুল হক : ঢাকার বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা জড়িত। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছি ওয়াসা ও রাজউকের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে। বিষয়গুলো বেশ জটিল। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন।
প্রথম আলো : মাস ছয়েক দায়িত্ব পালন করে কী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন?
আনিসুল হক : আমার মনে হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জোরালো সমর্থন ও তা কাজে লাগানোর আকাঙ্ক্ষা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলা সে কারণেই সম্ভব হয়েছে। সামনে এ ধরনের কাজগুলোও আশা করি সবার সমর্থন নিয়ে করতে পারব।
প্রথম আলো : কারওয়ান বাজারের কাঁচা ও পাইকারি বাজার স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটুকু? এ ব্যাপারে তো সুনির্দিষ্ট কিছু শোনা যাচ্ছে না।
আনিসুল হক : কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে আমি অন্তত ২০ বার বসেছি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে, ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যে তিনটি আধুনিক কাঁচাবাজার হয়েছে, সেখানে এই বাজার স্থানান্তর করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে অনেক ব্যবসায়ী আমাকে বলেছেন যে তাঁরা যেতে চান, কিন্তু কয়েকজন নেতার হাতে তাঁরা পুতুল হয়ে পড়েছেন। কারওয়ান বাজারে একটি তিনতলা মার্কেট রয়েছে, যেটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে বুয়েটের মাধ্যমে করা পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এসেছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় নেতাদের নিতে হবে। আমি আশা এবং অনুরোধ করছি, যাতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা নতুন বাজারগুলোতে চলে যান। এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলররা খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন। মেয়র এবং দীর্ঘদিনের একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি কোনো কঠোর পথ নিতে চাই না। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা না হলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা ও দরকার হলে অধিগ্রহণ করতে বাধ্য হব।
প্রথম আলো : নাগরিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নিরাপত্তাহীনতার বোধ কিন্তু কমেনি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি?
আনিসুল হক : প্রাথমিকভাবে আমরা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে শক্তিশালী সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। কার্যকর হলে অন্ধকারের লোকজন শনাক্ত বা গাড়ির নম্বরপ্লেট পড়া যাবে। টঙ্গী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়কও সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে আগামী জুনের মধ্যে। এ জন্য স্থানীয় সোসাইটিগুলোকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। তহবিল জোগাড় হচ্ছে। আমি মেয়র অফিসে এর কন্ট্রোল রুম করার প্রস্তাব দিয়েছি। পুলিশ বিষয়টি দেখবে।
প্রথম আলো : নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একজন মেয়র হিসেবে এই ছয় মাসে কোন বিষয়টিকে বড় সমস্যা বা বাধা বলে মনে হচ্ছে?
আনিসুল হক : আমার ছয় মাসের অভিজ্ঞতা বলে ঢাকার জন্য কার্যকর কিছু করতে হলে ও নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমন্বয় সংস্থা দরকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসা প্রয়োজন। অনেক কিছুই মেয়রদের কাছে থাকা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের কিছু পুলিশ থাকা দরকার। নানা ধরনের দখল উচ্ছেদে তাদের কাজে লাগানো যাবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেছি। তিনি বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
আনিসুল হক : আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রথম আলো : মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের মাস ছয়েক হলো। নির্বাচনের আগে আপনি বলেছিলেন সমস্যাগুলো চিহ্নিত, বলেছিলেন এবার সমাধানযাত্রা। এই পথে কতটুকু এগোলেন?
আনিসুল হক : আমাদের অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল। পরিচ্ছন্ন ও সবুজ ঢাকা, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর ঢাকা, সচল ঢাকা, মানবিক উন্নয়নের ঢাকা, স্মার্ট ও ডিজিটাল ঢাকা এবং অংশগ্রহণমূলক ও সুশাসিত ঢাকা। বলতে পারেন এই সব কটি ক্ষেত্রেই আমরা কাজ শুরু করেছি। এসবের সুফল আপনারা খুব শিগগির দেখতে পাবেন।
প্রথম আলো : এসব ক্ষেত্রে কোনো বিশেষ অগ্রগতির কথা জানাবেন কি?
আনিসুল হক : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে বলতে পারি, রাস্তায় ময়লা জমানো এবং সেখান থেকে তা সরানোর যে পদ্ধতি এত দিন কার্যকর ছিল, তা আর থাকবে না। আমরা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য বিভিন্ন স্থানে ৭২টি মিড ট্রান্সফার স্টেশন করতে যাচ্ছি, যেখানে স্প্রে ও ওয়াশ করার ব্যবস্থা থাকবে এবং এসব স্টেশন থেকে ময়লা ডাম্পিং স্টেশনে চলে যাবে। ডিসেম্বরের মধ্যে ৪৫টি এবং মার্চ নাগাদ সব কটি স্টেশন হয়ে যাবে বলে আশা করছি। রাস্তাঘাট যাতে নিয়মিত পরিষ্কার হয় সে জন্য ক্লিনারদের সঙ্গে দফায় দফায় বসেছি। ঢাকা শহরকে অপরিকল্পিত বিলবোর্ডমুক্ত করার ক্ষেত্রে বড় অগ্রগতি হয়েছে। ৮৫ শতাংশ বিলবোর্ড সরে গেছে। সবুজ ঢাকার অংশ হিসেবে ফ্লাইওভারগুলো ফুল দিয়ে সুশোভিত করার কাজ শুরু হয়েছে। শাহীন স্কুলের পাশেরটি হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে বাকিগুলোও হয়ে যাবে। আমরা সবুজায়নের উদ্যোগ নিয়েছি। কয়েকটি পার্ক সবুজ করার উদ্যোগ নিয়েছি। প্রজাপতি পার্ক, কাঠবিড়ালি পার্ক—এসব করার উদ্যোগ নিয়েছি। সব বাড়িতে যাতে গাছ লাগানো হয়, সে জন্য আমরা গাছ সরবরাহ করব। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতায় আমরা কাজটি করব। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সঙ্গে মিলে বিমানবন্দর সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হচ্ছে। ১০০-এর বেশি গণশৌচাগার নির্মিত হচ্ছে। এসব দৃশ্যমান হতে কিছু সময় লাগবে।
প্রথম আলো : ঢাকা শহরবাসী যানজটকেই সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করে। আপনিও ঢাকাকে সচল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ছয় মাসে কী অগ্রগতি হলো? আর যানজট দূর করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের খুব কিছু করার আছে কি?
আনিসুল হক : আসলে যানজট দূর করতে সরাসরি আমাদের করার কিছু নেই। যানবাহন বলুন বা রাস্তাঘাটের নিয়ন্ত্রণ বলুন, এগুলো আমাদের হাতে নেই। আমরা যা করার চেষ্টা করছি তা হচ্ছে রাস্তাঘাট দখলমুক্ত করা। মহাখালীর সামনের বাস পার্কিং বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছি। তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কাজটি খুব সহজ না। আমরা গাজীপুর থেকে হাতিরঝিল পর্যন্ত ২২টি ইউলুপ নির্মাণ করতে যাচ্ছি। এগুলো তৈরি হলে কোনো গাড়ি ক্রসিংয়ে আটকা পড়বে না। এ জন্য দুটি মন্ত্রণালয় থেকে জমি নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে। আশা করি তাদের সহযোগিতা পাব। এটা হলে যানজট অনেকটা কমবে। এই প্রকল্প সফল হলে অন্যান্য এলাকাতেও তা করা হবে।
প্রথম আলো : বিশৃঙ্খলার চরমে পৌঁছেছে ঢাকার গণপরিবহনব্যবস্থা। নগরবাসীর জন্য এ ক্ষেত্রে কি সিটি করপোরেশনের কিছু করার নেই?
আনিসুল হক : এ ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতির কথা আপনাকে জানাতে চাই। ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাসমালিকদের সঙ্গে আমরা বসেছি। সমন্বিতভাবে বিভিন্ন রুটে বাস চালানো যায় কি না, সে ব্যাপারে আমরা কথা বলেছি। প্রাথমিকভাবে পাঁচটি কোম্পানির অধীনে সব মালিক বাস চালাতে রাজি হয়েছেন। পুরোনো বাস উঠিয়ে তিন হাজার বাস নামানোর কথা হয়েছে। তবে তাঁরা আমাকে শর্ত দিয়েছেন যে ৫ থেকে ৬ শতাংশ হারে ঋণ জোগাড় করে দিতে হবে। আমি এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে কথা বলেছি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হবে। এটা কার্যকর করা গেলে ঢাকার গণপরিবহনের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন হবে। নতুন ও আধুনিক বাস চলবে। নির্দিষ্ট স্টপেজে বাস থামবে ও যাত্রীরা ওঠানামা করবে। সব মালিকের বাস পাঁচটি কোম্পানির আওতায় এলে বেপরোয়া বাস চালানোর প্রবণতাও কমবে। দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে কাজটি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
প্রথম আলো : নতুন মেয়রদের অধীনেও এবার বর্ষায় ঢাকাবাসী জলাবদ্ধতার পুরোনো রূপই দেখল। কোনো আশার কথা?
আনিসুল হক : এই একটি জায়গায় আমি আপনাদের পরিষ্কার করে বলতে পারছি না যে কী করতে পারব বা পারব না। এটা আমার হাতের বাইরে। খাল বন্ধ, নালা বন্ধ। এসব পরিষ্কার ও খনন করার দায়িত্ব ওয়াসার। আমরা এখন গুলশান ও বনানী এলাকার রাস্তাগুলোকে মানসম্মত ড্রেনসহ নির্মাণ করছি। আগামী দুই বছরের মধ্যে এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। উত্তরাতেও হচ্ছে। কিন্তু মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের ক্ষেত্রে ওয়াসার ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম আলো : এ ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি?
আনিসুল হক : ঢাকার বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে অনেক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা জড়িত। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছি ওয়াসা ও রাজউকের সঙ্গে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে। বিষয়গুলো বেশ জটিল। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন।
প্রথম আলো : মাস ছয়েক দায়িত্ব পালন করে কী অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন?
আনিসুল হক : আমার মনে হয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের জোরালো সমর্থন ও তা কাজে লাগানোর আকাঙ্ক্ষা থাকলে অনেক কিছুই করা সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীরা সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। বিলবোর্ড সরিয়ে ফেলা সে কারণেই সম্ভব হয়েছে। সামনে এ ধরনের কাজগুলোও আশা করি সবার সমর্থন নিয়ে করতে পারব।
প্রথম আলো : কারওয়ান বাজারের কাঁচা ও পাইকারি বাজার স্থানান্তরের ক্ষেত্রে অগ্রগতি কতটুকু? এ ব্যাপারে তো সুনির্দিষ্ট কিছু শোনা যাচ্ছে না।
আনিসুল হক : কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নানাভাবে আমি অন্তত ২০ বার বসেছি। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে, ৩৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে যে তিনটি আধুনিক কাঁচাবাজার হয়েছে, সেখানে এই বাজার স্থানান্তর করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে অনেক ব্যবসায়ী আমাকে বলেছেন যে তাঁরা যেতে চান, কিন্তু কয়েকজন নেতার হাতে তাঁরা পুতুল হয়ে পড়েছেন। কারওয়ান বাজারে একটি তিনতলা মার্কেট রয়েছে, যেটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলে বুয়েটের মাধ্যমে করা পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এসেছে। কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় নেতাদের নিতে হবে। আমি আশা এবং অনুরোধ করছি, যাতে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা নতুন বাজারগুলোতে চলে যান। এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলররা খুবই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন। মেয়র এবং দীর্ঘদিনের একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি কোনো কঠোর পথ নিতে চাই না। কিন্তু আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তা না হলে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা ও দরকার হলে অধিগ্রহণ করতে বাধ্য হব।
প্রথম আলো : নাগরিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। নিরাপত্তাহীনতার বোধ কিন্তু কমেনি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন কি?
আনিসুল হক : প্রাথমিকভাবে আমরা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে শক্তিশালী সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছি। কার্যকর হলে অন্ধকারের লোকজন শনাক্ত বা গাড়ির নম্বরপ্লেট পড়া যাবে। টঙ্গী থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সড়কও সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে আগামী জুনের মধ্যে। এ জন্য স্থানীয় সোসাইটিগুলোকে নিয়ে আমরা কাজ করছি। তহবিল জোগাড় হচ্ছে। আমি মেয়র অফিসে এর কন্ট্রোল রুম করার প্রস্তাব দিয়েছি। পুলিশ বিষয়টি দেখবে।
প্রথম আলো : নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে একজন মেয়র হিসেবে এই ছয় মাসে কোন বিষয়টিকে বড় সমস্যা বা বাধা বলে মনে হচ্ছে?
আনিসুল হক : আমার ছয় মাসের অভিজ্ঞতা বলে ঢাকার জন্য কার্যকর কিছু করতে হলে ও নগরবাসীর সেবা নিশ্চিত করতে হলে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি সমন্বয় সংস্থা দরকার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে একটি ছাতার নিচে নিয়ে আসা প্রয়োজন। অনেক কিছুই মেয়রদের কাছে থাকা প্রয়োজন। সিটি করপোরেশনের কিছু পুলিশ থাকা দরকার। নানা ধরনের দখল উচ্ছেদে তাদের কাজে লাগানো যাবে। আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেছি। তিনি বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
আনিসুল হক : আপনাকেও ধন্যবাদ।
No comments