বিপ্লব খুনের নেপথ্যে...

গাজীপুরের শিক্ষানবিস আইনজীবী খন্দকার এনামুল হক বিপ্লবের হত্যা মামলার প্রধান আসামি নাটকীয়ভাবে আটক হয়েছে। আটক হওয়া মাহবুবুল হাসান রাব্বী নগরের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। গতকাল ভোরে জেলার শ্রীপুরের ইজ্জতপুর রেল স্টেশনের কাছ থেকে এলাকাবাসী তাকে আটক করে শ্রীপুর থানা পুলিশে সোপর্দ করে। এ ছাড়াও হত্যার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে রাব্বীর মা নাজমা বেগমকেও আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে গাজীপুর পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদ পিপিএম গতকাল দুপুরে এক প্রেস বিফ্রিং করেন। বিফ্রিং এ তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া রব্বীর মা নাজমা বেগমের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে ক্ষুব্ধ হয়ে রাব্বী ও তার ভাই রবিন ছুরিকাঘাত করে এনামুল হক বিপ্লবকে খুন করেছে। হত্যার ব্যাপারে নিহতের ভাই আইনজীবী খন্দকার আমিনুল হক টুটুল বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেছেন। এনামুল হক বিপ্লবকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করার ঘটনার সময়ই তার হাতের আঙুল কেটে যায়। আর তার সঙ্গে থাকা তারই ছোট ভাই রবিন (১৮) এর এখনও কোন হদিস মেলেনি। এদিকে তাদের মা নাজমা বেগমকেও গতকাল দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিয়ে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ধারালো অস্ত্র ও রডের এলোপাতাড়ি আঘাতে শিক্ষানবিস আইনজীবী এনামুল হক বিপ্লবকে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে আটক হওয়া রাব্বী (২২) জানায়, পাশাপাশি এলাকায় বসবাসকারী নিহত বিপ্লব প্রায়ই তার মা-বাবা পরিবার নিয়ে নানা ধরনের আপত্তিকর কথা বললো। বিপ্লবের এসব কথায়ই ক্ষুব্ধ ছিল তারা দুই ভাই। শনিবার সন্ধ্যায় সুযোগ বুঝে তার ওপর হামলা করা হয়। তার আটক হবার ব্যাপারে সে আরও জানায়, ঘটনার পরই সে এলাকা ছেড়ে পালাতে থাকে। সকালে বাসা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে ইজ্জতপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে হাঁটাহাঁটির সময় কয়েকজন যুবক তার কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকাসহ সব কিছু ছিনিয়ে নেয়। এরপর ওই যুবকরা রাব্বীর মোবাইল ফোনের সিম চালু করলে মোবাইল ফোনে রিং বাজতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পরই ওই যুবকরা তাকে আটক করে থানায় খবর দেয়। পরে শ্রীপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত হয় এবং তার ডান হাতের কেটে যাওয়া আঙুলে ব্যান্ডেস করা অবস্থায় গ্রেপ্তার করে। আটক হওয়া মাহবুবুল হাসান রাব্বী নগরের জয়দেবপুরের কাজী আজিম উদ্দীন কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং গাজীপুর আদালতের পেসকার মাসুদুর রহমানের ছেলে। জয়দেবপুরের বরুদায় বসবাসকারী মাসুদুর রহমানের গ্রামের বাড়ি নরসিংদী সদরের সাহেপ্রতাপ এলাকায়।
নিহতের ভাই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার আমিনুল হক টুটুল জানান, তার ভাইয়ের সঙ্গে কোন ধরনের শত্রুতা ছিল না কারও। এরপরও তার মতো নিরীহ, সহজ-সরল ভাইকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে। তিনি খুনিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। কি কারণে তাকে খুন করা হয়েছে সে সম্পর্কে প্রতিবেশীরাও কোন তথ্য জানাতে পারেননি। তবে প্রতিবেশী কয়েকজন জানান, বিপ্লবের বাসার সামনে নির্মাণাধীন একটি বাসায় প্রায়ই বখাটে কিছু ছেলেরা আড্ডা দিতো। আর তাদের প্রায়ই ধমকাতেন, বকাঝকা দিতেন। সেসব বিরোধের কারণে তাকে খুন করা হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.