রেজিকে নিয়ে লাপাত্তা লন্ডনি আবুল by ওয়েছ খছরু

বিয়ের আয়োজন করা হয় কমিউনিটি সেন্টারে। বর সেজে আসবেন লন্ডন প্রবাসী আবুল মিয়া। কনে রেজিনা আক্তার রেজিও বধূ বেসে আছেন। কিন্তু বাদ সাধলো পুলিশ। বিয়ের আসরে উপস্থিত। এই খবর শুনে এলেন না বর আবুল মিয়া। কারণ প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত আবুল মিয়া। আগের স্ত্রী রোমেনা খাতুন তার বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে থানায় আছে মামলাও। আনুষ্ঠানিক বিয়ে না হলেও অবশেষে আবুলের কাছেই চলে গেছেন রেজি। এখন পুলিশ তাদের খুঁজছে। আর অজ্ঞাত স্থানে থেকে নববধূ রেজিকে নিয়ে অভিসার করছেন লন্ডন প্রবাসী আবুল মিয়া। পূর্বের স্ত্রী রোমেনা আক্তারের স্বজনদের দাবি, আবুল এক এক করে তিনটি বিয়ে করেছেন। আর চতুর্থ স্ত্রী হচ্ছে তরুণী রেজীনা আক্তার রেজি। সব স্ত্রীর সঙ্গে এক এক করে সম্পর্ক করে ছিন্ন করে দেশে এসে নতুন বউয়ের সন্ধান করেন আবুল মিয়া। লন্ডনি বলেও তিনি পেয়ে যান সুন্দরী মেয়ে। আর তাদের বিয়ে করাই এখন তার নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নতুন বধূকে নিয়ে পালিয়ে বেড়ানো আবুলকে নিয়ে জগন্নাথপুর ও বালাগঞ্জ উপজেলায় তোলপাড় চলছে। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার কামারগাঁও এলাকার মৃত মন্তাজ আলীর ছেলে আবুল মিয়া (৪৫)। তৃতীয় বউয়ের অভিযোগে আবুল এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অবশেষে আবুল এর চতুর্থ বিয়ের সাধ পূরণ হলো না। নিজেকে অবিবাহিত দাবি করে প্রতারণার মাধ্যমে আবুল মিয়া ক্রমান্বয়ে তিনটি বিয়ে করেন। পুলিশ ও তার তৃতীয় স্ত্রী রোমেনার পারিবারিক সূত্র জানায়, আবুল মিয়া দীর্ঘদীন যাবৎ যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। দেশে এসে গত ৫ বছরে আবুল একে একে ৩টি বিয়ে করে। এর মধ্যে তার দুই স্ত্রীকে তিনি পর্যায়ক্রমে লন্ডনে নিয়ে গেছেন। ওখানে নিয়ে গিয়ে কিছুদিন অবস্থান করে স্ত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন আবুল মিয়া। স্ত্রীদের ওপর চালান নির্যাতনে স্টিম রোলার। এভাবে এক এক করে সঙ্গ ছাড়েন স্ত্রীদের। প্রথম স্ত্রী সাফিয়া বেগম। তাদের সংসারে এক ছেলে তিন মেয়ে রয়েছে। দুই নম্বরের স্ত্রীর বাড়ি জগন্নাথপুরে। বিয়ে করে নিয়ে যাওয়ার পর এভাবেই নির্যাতন করে। নির্যাতন সইতে না পেরে ওই স্ত্রীও আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। তার সর্বশেষ স্ত্রী হলেন সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার কামারগাঁও গ্রামের মৃত লাল মিয়ার মেয়ে রোমেনা খাতুন। ২০১৩ সালে সামাজিকভাবে অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবুল মিয়া লন্ডনে বিয়ে করেন রোমেনা খাতুনকে। বিয়ের এক বছর পর ২০১৪ সালে আবুল রোমেনাকে নিয়ে দেশে চলে আসে। এ সময় প্রতারক আবুল গোপনে ওসমানীনগর থানার খালপার গ্রামের জমির আলীর মেয়ে রেজীনা আক্তার রেজির সঙ্গে গোপন সম্পর্ক তৈরি করে। আর এ খবর পৌঁছে যায় রোমানার কানেও। রেজির সঙ্গে প্রেমের কারণে আবুল তৃতীয় স্ত্রী রোমেনার সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। এ সময় আবুল রোমেনার কাছে বিশ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। রোমেনা প্রাণ রক্ষার্থে পাঁচ লাখ টাকা আবুলের হাতে তার বাড়ি থেকে এনে দিলেও পাষণ্ড আবুল এর হাত থেকে রক্ষা পায়নি রোমেনা। এরপরও শারীরিক ও মানসিকভাবে বিষিয়ে তুলে আবুল। এক সময় রোমেনাকে বেদম প্রহার করে জোর করে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়। এ ব্যাপারে রোমেনা খাতুন বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলা নং-১৩(৮)১৫। এরপর আবুল মিয়া গোপনে রেজিকে বিয়ে করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর তারিখে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন নাজিরবাজার এলাকার ইমা কমিউনিটি সেন্টারে আবুল-রেজির বিয়ের কথা ছিল। আবুল আসবেন বর সেজে। আর রেজিকে বিয়ে করে নিয়ে যাবেন তার বাড়ি। কিন্তু তার আগেই জগন্নাথপুর, ওসমানীনগর ও দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের সংবাদ জানে আবুল। পুলিশ আসার খবরে আবুল মিয়া আর বিয়ের আসরে আসেনি। পুলিশ আসার খবরে কনে রেজিকে বিয়ে করতে না এসে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানান, কামারগাঁও গ্রামের আবুলের বিলাসবহুল বাড়িসহ প্রচুর জায়গা জমি রয়েছে। বিয়ে করে স্ত্রীদের লন্ডন নিয়ে যাওয়ার নাম করে শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই বিয়ে ব্যবসায় নামে আবুল। রোমেনা খাতুনের স্বজন আলহাজ এম এ মুগনী জানিয়েছেন, বিয়ের খবর শুনে তিনি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযানে নামে। তিনি জানান, বিয়ের সেন্টারে আবুল না গেলেও পরবর্তীতে রেজিকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। জগন্নাথপুর থানা পুলিশ জানিয়েছে, আবুলকে স্ত্রীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ হচ্ছে। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.