যুক্তরাষ্ট্রে কলেজ ক্যাম্পাসে বন্দুকধারীর তাণ্ডবে নিহত ৯

যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন অঙ্গরাজ্যের একটি কলেজ ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার এক বন্দুকধারী গুলি চালিয়ে ৯ জনকে হত্যা করেছে। এতে আহত হন আরও ৭ ব্যক্তি। এরপর পুলিশের গুলিতে ওই বন্দুকধারী নিহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন্দুকধারী ব্যক্তি স্থানীয় উম্পকুয়া কমিউনিটি কলেজের একটি শ্রেণীকক্ষে ঢুকে সেখানকার শিক্ষার্থীদের ওপর গণহারে গুলি করতে থাকে। পরে ২ পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে গুলিবিনিময়কালে মারা যায় সে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবরে বলা হয়েছে, বন্দুকধারীর পরিচয় আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি পুলিশ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, তার নাম ক্রিস হার্পার-মার্সার। কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, তার বয়স ছিল ২৬ বছর। সিএনএন জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির কাছে ৩টি পিস্তল, একটি লম্বা বন্দুক ও শরীরে বর্ম ছিল। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গুলি করার একপর্যায়ে ওই বন্দুকধারী ভীতসন্ত্রস্ত শিক্ষার্থীদের দাঁড়িয়ে নিজ নিজ ধর্মের নাম উল্লেখ করতে বলে। এভাবেই একের পর এক ছাত্রছাত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছে সে। মরার অভিনয় করে বেঁচে যাওয়া ১৮ বছর বয়সী আহত এক ছাত্রীর পিতা স্টাসি বয়লান বলেন, তার মেয়ে জানিয়েছেন, বন্দুকধারী ব্যক্তি শ্রেণীকক্ষে ঢুকেই অধ্যাপককে একেবারে কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এরপর শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে তাদের ধর্মের নাম জিজ্ঞেস করতে থাকে। একজনকে ওই বন্দুকধারী জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কি খ্রিস্টান? যদি তুমি খ্রিস্টান হও, তবে দাঁড়াও। কেননা, তুমি যদি খ্রিস্টান হও, তবে ১ সেকেন্ড পরই তুমি ঈশ্বরকে দেখতে পাবে।’ এর পরই তাকে গুলি করে ওই বন্দুকধারী। বেঁচে যাওয়া আরেক শিক্ষার্থী কোর্টনি মুর (১৮) স্থানীয় এক পত্রিকাকে একই বর্ণনা দিয়েছে।
বন্দুকধারীর এমন আচরণের কোন ব্যাখ্যা দেয়নি কর্তৃপক্ষ। ডগলাস কাউন্টির শেরিফ জন হানলিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বন্দুকধারী ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত চলছে। তিনি আরও জানান, আহত ৩ ভুক্তভোগীকে সঙ্কটজনক অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে ওই বন্দুকধারীর নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হানলিন বলেন, আমি তাকে এ ক্রেডিটটুকু দেবো না। নৃশংস ও কাপুরুষোচিত কাজটি সে হয়তো এ ক্রেডিটের জন্যই করেছে।
এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। মে মাসে টেক্সাসে ২ মোটরসাইকেল গ্যাংয়ের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৯ জন। জুনে সাউথ ক্যারোলাইনার চার্লস্টনে কৃষ্ণাঙ্গদের একটি চার্চে এক বন্দুকধারীর তাণ্ডবে নিহত হয় ৯ জন। বৃহস্পতিবারের এ ঘটনা বাদেও চলতি বছর এ ধরনের ২৯৩টি সহিংস ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। এগুলোর প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ৪ জন বা তার বেশি মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়েছে। এ সহিংসতার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে আরও কঠোর বন্দুক সংক্রান্ত আইনের দাবি উঠছে। মূলত, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনীতে ব্যক্তিবিশেষের আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়ার অধিকার স্বীকৃত। বৃহস্পতিবারের নারকীয় ওই তাণ্ডবের ঘণ্টাকয়েক পরই প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, এ ধরনের গণহারে হত্যার ফলে মার্কিন নাগরিকদের উচিত নিজ নিজ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে আরও কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন দাবি করা। দৃশ্যত রাগত স্বরে ওবামা বলেন, যে করে হোক এ ধরনের ঘটনা এখন রুটিনে পরিণত হয়েছে। এ মঞ্চে আমার প্রতিক্রিয়া দেয়ার ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত সবকিছু রুটিন হিসেবেই থেকে যায়। আমরা যেন এ ব্যাপারে নিশ্চল!
রোজবার্গের উম্পকুয়া কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য বৃহস্পতিবারের ঘটনাটি রুটিন ব্যতীত কিছুই নয়। শিক্ষার্থী কেনি আঙ্গারম্যান এনবিসি চ্যানেলকে বলেন, তিনি বন্দুকধারীকে দেখেছেন। তার পরনে ছিল জিনস ও টি-শার্ট। পিস্তল হাতে সে ভবনে প্রবেশ করে। এরপরই বন্দুকের শব্দ ও চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ শোনা যায়। আরেক শিক্ষার্থী কাসান্দ্রা ওয়েলডিং সিএনএনকে জানান, তিনি অন্তত ৩৫-৫০টি গুলির শব্দ শুনেছেন। আরেক শিক্ষার্থী ব্রাডি উইন্ডার ফেসবুকে লিখেছেন, তিনি পাশের শ্রেণীকক্ষে ছিলেন। কিন্তু গুলির শব্দ শুনেই তিনি দৌড়ে পালান।
সন্ধ্যার দিকে, বহু মানুষ স্থানীয় একটি পার্কে নিহতদের সম্মানে মোমবাতি প্রজ্বলন করেন। রোজবার্গের এ ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের স্কুল ক্যাম্পাসে হওয়া এ বছরের সবচেয়ে রক্তাক্ত বন্দুক সহিংসতার ঘটনা। এর আগে ২০০৭ সালের এপ্রিলে ভার্জিনিয়া টেক ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী ৩২ জনকে হত্যা ও ২৫ জনকে আহত করে নিজে আত্মহত্যা করে।

No comments

Powered by Blogger.