সুলতান হতে যাচ্ছেন এরদোগান?

লম্বা স্লিম মধ্যবয়স্ক মানুষটি তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্যারিশমাটিক নেতা। ৬১ বছর বয়সেও মাথাভর্তি চুল। গত ১২ বছর ধরে রাজনীতিতে ভিন্নধর্মী ইমেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোগান। তিন বছর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন কোনো মুসলিম দেশে প্রেসিডেনসিয়াল সফরে গেলেন, তুরস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতম পাঁচ মিত্র দেশের অন্যতম বলে উল্লেখ করলেন। এরদোগানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ঘোষণা দিলেন, ‘একজন নেতা কীভাবে একইসঙ্গে ইসলামিক, গণতান্ত্রিক ও সহিষ্ণু হতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এরদোগান।’ কিন্তু এরদোগানকে নিয়ে পশ্চিমাদের উচ্ছ্বাস ক্রমেই কমে এসেছে। জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে এরদোগান তুর্কি সাম্রাজ্যে সুলতান হয়ে বসতে পারেন এমন আশংকা করছে তারা। আজ রোববার অনুষ্ঠিতব্য দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে শঙ্কিত তুরস্কের সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলো। ২৪তম এ সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে এরদোগানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন একেপির আহমেদ দাভেতোগলু। পার্লামেন্টের ৫৫০ আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭৬ আসন।
নির্বাচনপূর্ব জরিপ বলছে ৩২৭ আসন পেতে যাচ্ছে একেপি। এরদোগান গত বছর ৫২ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার বিলোপ করে প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থা চালু করতে তুরস্কের সংবিধান পরিবর্তন করতে চান। প্রেসিডেন্ট শাসিত ব্যবস্থা চালু হবে কিনা তা নির্ভর করছে এ নির্বাচনে একেপি কত বেশি আসনে জয়লাভ করতে পারে তার ওপর। দলটি যদি ৬০ শতাংশ আসনে জয় লাভ করে তাহলে তারা গণভোটের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই নতুন করে সংবিধান রচনা ও শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে। কুর্দিপন্থী বামপন্থী দল এইচডিপি নির্বাচনে জয়লাভ করবে তা অনেকটাই অসম্ভব বিষয়। তবে কুর্দি জনগণ নির্বাচনে বিরাট সাফল্য লাভের আশা করছে। রিপাবলিকান পার্টির নেতা কেমাল কিলিকদার ওগলুও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আশা করছেন। এ নির্বাচনকে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের মেয়াদের জন্য একটি গণভোট মনে করা হচ্ছে। এক সময় বলা হতো, তিনি রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম, অর্থনীতি ও গণতন্ত্রকে সমন্বিত করে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি রোলমডেল সৃষ্টি করেছেন। তবে তার সমালোচকরা এখন বলছেন, অনেক আগেই তিনি গণতন্ত্রের পথ থেকে সরে এসেছেন। এক দশকের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে স্তব্ধ করে দিয়ে নিজের হাতে বিপুল ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংহত করতে নতুন করে সংবিধান রচনা করতে যাচ্ছেন। আর এর মাধ্যমে তিনি কার্যত হয়ে উঠবেন সাম্রাজ্য অধিপতি বা সুলতান। তবে কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, কামাল আতাতুর্কের কঠোর শাসনে তুরস্কের ভূমি থেকে ইসলামি চেতনা ও ঐতিহ্যকে মুছে ফেলার ক্ষত সারিয়ে তুলছেন ধর্মপরায়ণ এরদোগান। ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য যেমন করবেন না, তেমনি ধর্ম পালনে কেউ যেন বাধা না দিতে পারে সে ব্যবস্থা তিনি করবেন। গত শনিবার ৫৬২ বছর আগের অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার বার্ষিকীতে ১০ লাখের অধিক ভক্তসমর্থকের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যারা নামাজের জন্য আমাদের আহ্বান আযানের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের জন্য কোনো পথ খোলা রাখব না।’ এসময় জনসমুদ্র থেকে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি ওঠে।

No comments

Powered by Blogger.