বিচারক খুন- কথিত স্ত্রী মিশুর বাসায় যাতায়াত ছিল অনেকেরই by মহিউদ্দীন জুয়েল

কথিত সুন্দরী স্ত্রী মিশুর বাসায় পরপুরুষের আনাগোনা ছিল। এদের অনেকেই মদ, নারীসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত। গভীর রাত পর্যন্ত তাদের বাসায় অচেনা লোকদের দেখতে পেতেন প্রতিবেশীরা। খুন হওয়ার পর বিচারক সাঈদের কক্ষ থেকে ইয়াবা সেবনের এলুমিনিয়াম পেপার উদ্ধারের পর তাই মনে করছেন গোয়েন্দা সদস্যরা।

সূত্র জানায়, বিচারক আবু সাঈদের কথিত শাশুড়ি মিশুর মা লাকী আক্তার ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে সবাই ধারণা করছেন। তাদের বাসায় বিভিন্ন মাদক সেবনের নানান সামগ্রী ও উপকরণ পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে যে বাসাতে বিচারক সাঈদ খুন হয়েছেন সেখানে অপরাধ জগতের নানান লোকজনের আসা-যাওয়া ছিল। রাত দুইটা পর্যন্ত সেখানে কি হতো তা  জানতেন না আশপাশের বাসিন্দারা। এ সব লোকজনের সঙ্গে বেশ কয়েকজন আইনজীবীও আসতেন মিশুর কাছে। তবে তারা বেশিক্ষণ থাকতেন না। সন্ধ্যার পর এসে রাতে চলে যেতেন। বিচারক সাঈদ সবার কাছে মিশুকে তার স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দিতেন।
গতকাল সকালে হালিশহরের সেই মোল্লাপাড়ায় গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বললে এই ব্যাপারে পাওয়া গেছে আরও চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। স্থানীয় লোকজন জানান, চলতি বছরের গত ১লা  জুন থেকে বিচারক সাঈদের জন্য মিশু ও তার মা লাকী বাসাটি ভাড়া নেন। ৬ তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল পুরো বাসাটি। ঘরের ভেতরে সবসময় পর্দা টাঙানো থাকতো। ৩ বেডের বাসার জন্য মাসে ১৫ হাজার টাকা ঘর ভাড়া দেয়া হতো।
বাড়ির মালিক আবু তৈয়ব বলেন, আমি আসলে এত কিছু জানতাম না। মিশু নামের একজন মহিলা এসে একদিন বললো আমার স্বামীকে নিয়ে থাকবো। পরে জানতে পারলাম খুন হওয়া ওই বিচারক সাঈদই তার স্বামী। টানা দুই মাস তার সেই স্বামীকে এখানে রাতে দেখেছি। এরপর এক সপ্তাহ পর পর দেখতাম।
সূত্র জানায়, গতকাল দুপুরে ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড শেষে নূরে আলমের আদালতে হাজির করা হয় মিশু, তার মা লাকী, ভাই ও কাজের মেয়েকে। এই সময় আদালতে তাদের কাছ থেকে কোন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়। পরে বিচারক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জন্য স্ত্রী দাবিদার মিশু, তার মা লাকী ও ভাইকে পুনরায় ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। অন্যদিকে কাজের মেয়েকে দেন ২ দিন।
হালিশহর থানার ওসি শাহজাহান কবির বলেন, মিশু ও লাকী খুবই চালাক। তারা শুরু থেকেই ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে দাবি করছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া মিশু, তার মা লাকী আক্তার, মিশুর ভাই ইমরান আহমেদ ও বাসার কাজের পরিচারিকা রীমা আক্তারকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আশা করছি নতুন তথ্য বেরিয়ে আসবে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (পশ্চিম) এস এম তানভির আরাফাত মানবজমিনকে বলেন, খুনিরা কৌশলী। তবে যে-ই ঘটনা ঘটাক সব কিছুই উন্মোচিত হয়ে যাবে। বিচারক সাঈদের প্রথম স্ত্রী রয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। দ্বিতীয় স্ত্রী বলে যিনি দাবিদার তার আচরণ সন্দেহজনক। এখন বিয়ের কাবিননামার বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেননি মিশু। যিনি বিয়ে পড়িয়েছেন সেই কাজীরও কোন খবর নেই। আত্মহত্যা করলে যেভাবে মৃত্যু হয় এই ঘটনা সেরকম নয়। তাছাড়া মাথায় আঘাত করার আলামত প্রমাণ করে এটি আত্মহত্যা নয়। নিশ্চিত হত্যা। গত ৫দিন ধরে মিশু, তার মা লাকীসহ বাসার ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বারবারই তারা পুরো ঘটনা আড়াল করে গেছেন।

No comments

Powered by Blogger.