হুমকির মুখে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত

নিউইয়র্কে ‘আলোকসজ্জা: আমাদের ধরণি রক্ষা’ শীর্ষক বিশাল প্রদর্শনীর
একটি দৃশ্য। জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩০ তলা ভবনের গায়ে
প্রজেক্টরের সাহায্যে আলো ফেলে তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন
দৃশ্যকল্প। নিউইয়র্কে আজ মঙ্গলবার শুরু হওয়া জলবায়ু
সম্মেলন সামনে রেখে বিশ্ববাসীকে পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ
করতেই এই আয়োজন। মার্ক গার্টেনের তোলা ছবি।
জলবায়ু পরির্বতনের ঝুঁকি মোকাবিলায় গরিব দেশগুলো যেভাবে অর্থ ব্যয় করছে, তাতে তাদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত হুমকির মুখে পড়েছে। পরিবেশদূষণে কোনো ভূমিকা না রাখলেও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে এসব দেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (ওডিআই) এক গবেষণায় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের প্রাক্কালে এ গবেষণা প্রকাশ করা হলো। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে বিশ্ববাসীকে রক্ষায় আরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ সম্মেলন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ ১২০টির বেশি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন। থাকছেন ব্যবসায়ী, আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতা সংস্থাসহ গণমাধ্যম জগতের বিশিষ্টজনেরা। তবে এতে নেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ দুটি দেশে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বসবাস। শুধু তাই নয়, চীন পৃথিবীর প্রথম এবং ভারত দ্বিতীয় বৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী রাষ্ট্র। ২০১৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি কার্যকর, শক্তিশালী, সর্বজনীন ও বৈধ চুক্তিতে উপনীত হতে বিশ্বনেতারা সম্মত হয়েছেন। জাতিসংঘ চায়, বিশ্বনেতারা এ সম্মেলনে এসে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাদের সাহসী পদক্ষেপের কথা ব্যক্ত করুন। সম্মেলনের আগে গত রোববার ১৬০টি দেশে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের দাবিতে শোভাযাত্রা হয়েছে। ওই দিনই নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত জলবায়ু শোভাযাত্রা ‘পিপলস ক্লাইমেট মার্চে’ অংশ নেন তিন লাখের বেশি মানুষ। শোভাযাত্রায় যোগ দেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। ওডিআইয়ের গবেষণা: ওডিআইয়ের গবেষণাটি পরিচালিত হয় আফ্রিকার দুর্যোগ ও দারিদ্র্যপীড়িত দেশ ইথিওপিয়া, তানজানিয়া এবং উগান্ডায়। এসব দেশ বৃষ্টিনির্ভর কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তিনটি দেশেই তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০০৮ থেকে ২০১১ সালে ইথিওপিয়া জাতীয় বাজেটের ১৪ শতাংশ জলবায়ু মোকাবিলায় ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। এটা দেশটির শিক্ষা খাতে ব্যয়ের অর্ধেক। অন্যদিকে তানজানিয়া গত চার বছরে জলবায়ু খাতে বাজেটের পাঁচ শতাংশ ব্যয় করে। এ ব্যয় দেশটির স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশ। ওডিআইয়ের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ নেইল বার্ড বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নির্দোষ শিকার এ দেশগুলো প্রতিশ্রুত আন্তর্জাতিক সহায়তা পাচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় ভবিষ্যতে এসব দেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ দরকার। ইথিওপিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের কৌশলপত্রে বার্ষিক ৭৫০ কোটি ডলার ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশটি মাত্র ৪৪ কোটি ডলার ব্যয় করতে সক্ষম। একই কারণে তানজানিয়ার দরকার বছরে ৬৫ কোটি ডলার। কিন্তু তাদের পক্ষে ৩৮ কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করা সম্ভব নয়। নেইল বার্ড বলেন, সাব সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে আন্তর্জাতিক সহায়তার পরিমাণ বছরে মাত্র ১৩ কোটি ডলার। আর তিন বছর আগে যুক্তরাজ্য বন্যায় ১১০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিল। ওডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক কেভিন ওয়াটকিনস বলেন, গরিব দেশগুলো পরিমাণের তুলনায় নগণ্য সহায়তা পেলেও ধনী দেশগুলো বন্যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা, উপকূল সুরক্ষাসহ নানা ক্ষেত্রে বিপুল ব্যয় করছে।

No comments

Powered by Blogger.