ইয়েমেনে সরকারের সঙ্গে বিদ্রোহীদের শান্তিচুক্তি

মোহাম্মদ সালেম বসিন্দা
ইয়েমেনের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সরকারি দপ্তর দখলে নিয়েছে দেশটির শিয়াপন্থী বিদ্রোহীরা। রাজধানী সানায় সহিংসতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে দেশটির প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। এসব ঘটনার পর প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলো জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি শান্তিচুক্তিতে সই করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী, সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে আগামী এক মাসের মধ্যে একটি নতুন সরকার গঠন করা হবে। খবর এএফপি ও আল-জাজিরার। ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলভিত্তিক শিয়াপন্থী হাউদি সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার সদস্য এক মাসের বেশি সময় ধরে সানায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সড়ক অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করে আসছিল। বিক্ষোভ প্রথম দিকে শান্তিপূর্ণ থাকলেও গত বৃহস্পতিবার থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা দেশে একটি নতুন সরকার ও অধিকতর রাজনৈতিক ক্ষমতা চায়। গত শনিবার বিদ্রোহীরা সানায় অবস্থিত রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন কার্যালয় দখল করে নেয়। এরপর দেশটির সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কমিশন সানার উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় চারটি এলাকায় রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। তবে বিদ্রোহীরা গত রোববার দেশটির প্রতিরক্ষা, সেনা সদরদপ্তর, পার্লামেন্ট ভবন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় বেতার ও টেলিভিশন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন দখল করে নেয়।
সানায় অবস্থানরত আল-জাজিরার একজন সাংবাদিক জানান, প্রায় কোনো ধরনের সংঘর্ষ ছাড়াই বিদ্রোহীরা বেশির ভাগ কার্যালয় দখল করে। দৃশ্যত সেনাসদস্যরা বিদ্রোহীদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। বিদ্রোহীদের হাতে আটক হওয়া এড়াতে অনেক সেনাসদস্যকেই সাদা পোশাক পরতে দেখা গেছে। কার্যত হাউদিরাই ইয়েমেনের সবচেয়ে শক্তিশালী গোষ্ঠী। তারা অতীতে বেশ কয়েকবার দেশটির সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইয়েমেনের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ সালেম বসিন্দা রোববারই পদত্যাগপত্র জমা দেন। তিনি চলমান সংকট সামলাতে না পারায় এবং একটি জাতীয় সংলাপে আন্তরিকতার সঙ্গে না বসায় দেশের প্রেসিডেন্ট আবদারাবুহ মানসুর হাদির সমালোচনা করেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সাবা জানায়, ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট ও হাউদি নেতারা জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতায় পৌঁছেছেন। বার্তা সংস্থাটির এক খবরে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে আজ (রোববার) সন্ধ্যায় জাতীয় সংলাপের সিদ্ধান্ত মোতাবেক একটি জাতীয় শান্তি ও অংশীদারত্বমূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।’ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট হাদির পাশাপাশি জাতিসংঘের কূটনীতিক জামাল বেনোমার এবং শিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট হাদি জানান, চুক্তি অনুযায়ী, সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে একটি নতুন সরকার গঠন করা হবে। তার আগ পর্যন্ত বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকা পালন করবে। বিদ্রোহীদের অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা পরিহার, সরকারি ভবনগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর ও সানা থেকে সব বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.