দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির চেষ্টা

ইসরায়েলি গোলার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত গাজার শোবি
আল কার্স বিদ্যালয়ের ব্ল্যাকবোর্ড। যুদ্ধবিরতির প্রথম
দিন গত মঙ্গলবার আপন মনে সেই ব্ল্যাকবোর্ডে কী
যেন লিখছে এক ফিলিস্তিনি বালক। ছবি: এএফপি
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল-হামাস ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। এ সুযোগে একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতির জন্য মিসরের মধ্যস্থতায় জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিকেরা। এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছে, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধের ‘সুস্পষ্ট প্রমাণ’ রয়েছে। তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করবে। খবর এএফপি, রয়টার্স, সিএনএন, ইউএসএটুডে ও বিবিসির। মিসরের মধ্যস্থতায় ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর ইসরায়েল গত মঙ্গলবার গাজা থেকে স্থল বাহিনী প্রত্যাহার করে নেয়।
এরপর উভয় পক্ষকে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে কায়রোতে কূটনীতিকদের জোর প্রচেষ্টা শুরু হয়। দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এখন কায়রোতে রয়েছেন। এসব কূটনৈতিক প্রচেষ্টার লক্ষ্য হচ্ছে, গাজায় তিন দিনের চলমান অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার উপায় বের করা। উভয় পক্ষকে এ বিষয়ে রাজি করাতে মিসরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক কূটনীতিকেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক কূটনীতিক টনি ব্লেয়ার ও জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রচেষ্টা সমন্বয়কারী রবার্ট সেরি এখন মিসরে রয়েছেন। অবশ্য কায়রোতে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল উভয় পক্ষ প্রতিনিধিদল পাঠালেও তাদের মধ্যে সরাসরি কোনো আলোচনা হচ্ছে না। মিসরের কর্মকর্তারা আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করে এক পক্ষের বক্তব্য অন্যের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। মিসরীয় কর্মকর্তারা গত মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিদলটির সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর তাঁরা ইসরায়েলি দাবিগুলো ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিদের কাছে পৌঁছে দেন। তবে উভয় পক্ষ যেসব শর্ত দিচ্ছে, তাতে করে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা অনেক কঠিন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসকে তাদের মিলিশিয়া বাহিনীকে নিরস্ত্র করতে হবে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মুখপাত্র মার্ক রেগেভ বলেন, ‘ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, অসামরিকীকরণ। আমাদের অবশ্যই হামাসের পুনরায় অস্ত্রসজ্জিত হওয়া রুখতে হবে। অবশ্যই গাজা উপত্যকার অসামরিকীকরণ করতে হবে।’
তবে হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এরই মধ্যে বলে দিয়েছেন, তাঁরা গাজার মিলিশিয়াদের নিরস্ত্র করার ইসরায়েলি দাবি মানবেন না। মামলা করবে ফিলিস্তিন: ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) আইনজীবীদের সঙ্গে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি বলেন, গাজায় অভিযানের সময় ইসরায়েল যে যুদ্ধাপরাধ সংঘটন করেছে, সে বিষয়ে তাঁদের কাছে ‘সুস্পষ্ট প্রমাণ’ রয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। তাই দেশটির বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই। হামাসকে স্বীকৃতি দিন- কার্টার: গাজার শাসনক্ষমতায় থাকা কট্টর ইসলামপন্থী সংগঠন হামাসকে রাজনৈতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। কূটনীতিবিষয়ক সাময়িকী ফরেন পলিসিতে লেখা যৌথ এক নিবন্ধে তিনি এ আহ্বান জানান। যৌথ নিবন্ধটির আরেকজন লেখক হলেন সাবেক আইরিশ প্রেসিডেন্ট ম্যারি রবিনসন। ইসরায়েলকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে লেখা ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী (আইডিএফ) যেভাবে এই যুদ্ধ পরিচালনা করেছে, তার কোনো মানবিক বা আইনগত ন্যায্যতা নেই।’ নিবন্ধে কার্টার ও রবিনসন লিখেছেন, ‘হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। তারা নিজেরা নিজেদের শেষ ঘণ্টা বাজাবে, সেটাও ভাবা যাবে না। কেবল রাজনৈতিক পক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমেই পাশ্চাত্য হামাসকে অস্ত্র পরিত্যাগ করার জন্য সঠিক প্রাপ্য দিতে পারে।’ কেরির আহ্বান: বড় পরিসরে আলোচনায় বসতে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন উভয় পক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি। বিবিসির হার্ড টক অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কেরি বলেন, বড় পরিসরে আলোচনার মাধ্যমে দুই রাষ্ট্র ইস্যুর সমাধান করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.