থাইল্যান্ডে সেনা অভ্যুত্থান?

থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী গতকাল মঙ্গলবার দেশজুড়ে সামরিক আইন জারি করেছে৷ ছয় মাস ধরে চলমান সহিংস বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে৷ খবর রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসির৷ তবে থাইল্যান্ডের অন্তর্বর্তী সরকার সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু জানেনা বলে জানিয়েছে৷ ফলে সেনাবাহিনীর এই পদক্ষেপ নিয়ে ধাঁধঁার সৃষ্টি হয়েছে৷ অবশ্য, এিটকে তারা ‘সামরিক অভ্যুত্থান’ বলতে নারাজ৷ সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজধানী ব্যাংককের রাস্তায় রাস্তায় টহল দেওয়া শুরু করেছেন৷ তাঁরা দেশটির টেলিভিশন ও বেতারকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাংককে প্রবেশের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন৷ সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার দল-সমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারই এখনো দেশের দায়িত্বে রয়েছে বলে সেনা ও সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷ অবশ্য স্থানীয় সময় রাত তিনটায় (গ্রিনিচ মান সময় সোমবার রাত আটটা) টেলিভিশনে সামরিক বাহিনীর সামরিক আইন জারির আগে বিষয়টি মন্ত্রীরা জানতেন না বলে জানা গেছে৷ থাই সেনাপ্রধান প্রাইউথ শান-ওশা বলেন, সহিংস বিক্ষোভের কারণে মানুষের প্রাণহানি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির কারণে সেনাবাহিনী জননিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে৷ গত বছরের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী ইংলাকের সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে দেশটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ সেনাপ্রধান বলেন, ‘চলমান সহিংসতা দেশের সার্বিক নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে৷
তাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই আমরা সামরিক আইন ঘোষণা করেছি৷ আমি সব পক্ষকে চলমান সংকট সমাধানে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানাচ্ছি৷ সবাই আলোচনায় বসে সমাধানের একটি উপায় বের করুন৷’ থাইল্যান্ডের সরকার-সমর্থক ও বিরোধী শিবিরের লোকজন এখনো ব্যাংককের বিভিন্ন স্থানে শিবির গেড়ে রয়েছে৷ সংঘাত এড়াতে যারা যেখানে আছে, সেখানেই থাকতে এবং কোনো মিছিলে অংশ না নিতে সেনাবাহিনী আহ্বান জানিয়েছে৷ পাশাপাশি গণমাধ্যমকে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সামরিক আইনের বিষয়টি প্রচার না করতে এবং সরকারপন্থী ও সরকারবিরোধী ১০টি টেলিভিশন চ্যানেলকে সম্প্রচার বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ সেনাবাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার৷ সরকার জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ সম্পর্কে তাদের অবগত করা হয়নি৷ তবে তারা এখনো দেশ চালাচ্ছে৷ অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিওয়াত্থামরং বুনসংফাইসান দেশের সংবিধানের ভেতরে থেকে দায়িত্ব পালন করতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান৷ স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা থাকসিনের বোন প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে ৭ মে আদালত অপসারণ করার পর থেকেই থাইল্যান্ড চরম রাজনৈতিক অচলাবস্থায় পড়ে৷ মূলত ১৯৩২ সালে থাইল্যান্ডে একচ্ছত্র রাজতন্ত্রের অবসান ঘটার পর থেকেই এ রাজনৈতিক সংকট চলছে৷ তখন থেকে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী অন্তত ১১ বার দেশে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে৷ সর্বশেষ ২০১০ সালে থাকসিনকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী৷ সামরিক আইন ঘোষণার পর থাকসিন এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক ঘটনা অনুসরণকারী যে কেউই সামরিক আইনের বিষয়টি প্রত্যাশা করতে পারেন৷ তবে এটা গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না বলে তাঁর বিশ্বাস৷

No comments

Powered by Blogger.