ইংলাক ও তাঁর স্বজনেরা আটক

থাইল্যান্ডে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রা ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে গতকাল শুক্রবার আটক করা হয়েছে৷ এর আগে ইংলাকসহ শতাধিক রাজনীতিকের প্রতি সমন জারি করে সেনাবাহিনী৷ এ ছাড়া ১৫৫ জন রাজনীতিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷ খবর রয়টার্স ও বিবিসির৷ দুই দিন আগে দেশে সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অভ্যুত্থানের ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী৷ দেশের সংবিধান স্থগিত ও জনসমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷ আটক করা হয় অনেক রাজনীতিককে৷ সেনাপ্রধান জেনারেল প্রাইউথ শান-ওশা নিজেকে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেন৷ কয়েক মাস ধরে চলা রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কথা বলে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়৷
রাজধানী ব্যাংককে অবস্থানরত বিবিসির একজন সাংবাদিক জানান, ইংলাক গতকাল দুপুরের পর ব্যাংককের একটি সেনা কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যান৷ এরপর তিনি আরেকটি সেনা কার্যালয়ে যান৷ সেখানে তাঁকে কয়েক ঘণ্টা রেখে পরে একটি অজ্ঞাতস্থানে িনয়ে যাওয়া হয়৷ গতকাল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, সেনাবাহিনী ১৫৫ জন রাজনীতিকের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে৷ ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সংকট নিরসন’ করতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ অভ্যুত্থানের ঘোষণার পর সেনারা ব্যাংকক ও এর আশপাশে শিবির গেড়ে থাকা ইংলাকপন্থী ও বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছেন৷ নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া সেনাপ্রধান প্রাইউথ বলেছেন, ‘দেশে দ্রুততার সঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থা’ ফিরিয়ে আনতেই সেনারা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন৷ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে তিনি বলেন, সব থাই নাগরিককে অবশ্যই শান্ত থাকতে হবে এবং সরকারি কর্মীদের স্বাভাবিক নিয়মে কাজ করতে হবে৷ অভ্যুত্থানের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে থাইল্যান্ড৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন, এই অভ্যুত্থানের ‘কোনো ন্যায্যতা নেই’৷ থাইল্যান্ডকে দেওয়া ১০ মিলিয়ন ডলারের বেসামরিক সহায়তা স্থগিত করা হতে পারে বলেও জানান তিনি৷ আর পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ জাতিসংঘ দেশটিতে ‘অতিসত্বর সাংবিধানিক, বেসামরিক ও গণতান্ত্রিক শাসন’ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছে৷ অভ্যুত্থানের ঘটনাকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যায়িত করেছে জাপান৷ দেশটিতে ‘শিগগিরই স্বাভাবিক সামাজিক শৃঙ্খলা’ ফিরবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে চীন৷ অস্ট্রেলিয়া বলেছে, তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’৷ ১৯৩২ সালে খাঁটি রাজতন্ত্রের অবসান ঘটার পর এ নিয়ে অন্তত ১২ বার এবং গত এক দশকে দ্বিতীয়বার সেনা-অভ্যুত্থান প্রত্যক্ষ করল থাইল্যান্ড৷ সর্বশেষ ২০০৬ সালে সেনাবাহিনী ইংলাকের ভাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে৷ মূলত তখন থেকেই দেশটিতে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে৷ একদিকে রয়েছেন সিনাওয়াত্রা পরিবারের সমর্থক, যাঁদের বেশির ভাগই গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী৷ অন্যদিকে রয়েছে শহরের মধ্যবিত্ত ও অভিজাত শ্রেণি৷
থাইল্যান্ডে ক্ষমতার পালাবদল
২০০১ নির্বাচনে থাই রাক থাই পার্টির জয়৷ জোট সরকার গঠন করেন থাকসিন সিনাওয়াত্রা
২০০৫ নির্বাচনে জিতে থাকসিন দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী
২০০৬ রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে থাকসিনকে উৎখাত
২০০৭ থাকসিন ও মিত্রদের পিপল পাওয়ার পার্টির জয়
২০০৮ সেপ্টে. আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রী সমক সুন্দরাবেজ ক্ষমতাচ্যুত৷ থাকসিনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় সোমচাই ভোকসাওয়াত স্থলাভিষিক্ত
২০০৮ ডিসে. আদালতের রায়ে সোমচাইয়ের দল বিলুপ্ত৷ পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি৷ সেনা-সমর্থিত জোটের প্রধানমন্ত্রী হন আপিসিত ভেজ্জাজিওয়া
২০১১ জুলাই নির্বাচনে থাকসিন-মিত্রদের জয়৷ থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী হন
২০১৪ মার্চ আদালতের রায়ে ইংলাক ও নয়জন মন্ত্রী ক্ষমতাচ্যুত
২০১৪ মে ২২ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাপ্রধান প্রাইউথের ক্ষমতা দখল
সূত্র: এএফি

No comments

Powered by Blogger.