তাজউদ্দীন কন্যার চোখে তখন জল

মেয়ে হিসেবে বাবা সম্পর্কে লেখা ভীষণ কষ্টের। বিশেষ করে যে বাবাকে হারাতে হয়েছে আমার কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে। ফলে ভাবাবেগ তো চলেই আসবে। তার মধ্যেও আমি ইতিহাসকে উপস্থাপনা করার প্রয়াস নিয়েছি। সেখানে ঐতিহাসিক তথ্যে আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি একনিবিষ্ট হতে। পয়েন্ট অব রেফারেন্স টানতে। ভুলত্রুটি হতেই পারে কিন্তু আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি।
আমার বাবা সম্পর্কে লেখা ও বলার এই সুযোগটি আসতো না যদি আমার বাবা তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশের রাজনৈতিক মানস থেকে একেবারেই অদৃশ্য না হয়ে যেতেন। কি করে এটা সম্ভব যে স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাণপুরুষ তার নাম একটিবারও শোনা যায় না। ‘তাজউদ্দীন আহমদ, নেতা ও পিতা’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ। পিতাকে নিয়ে লেখা বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে তিনি বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বেশ কয়েকবারই অশ্রুসিক্ত দেখা যায় তাকে। ১৮ই এপ্রিল রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি মিলনায়তনে এ প্রকাশনা উৎসব হয়। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম, আবুল কাসেম ফজলুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। শারমিন আহমদ বলেন, আমি গভীর হতাশার সাথে আজকের পেপারগুলো খুলে দেখলাম যারা মুজিবনগর দিবস পালন করেছেন তারা একটিবারও উচ্চারণ করেনি এ মুজিবনগরের স্রষ্টা, স্বপ্নদ্রষ্টা, সংগঠক চিন্তাবিদ ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হতো বিরাট কঠিন ব্যাপার। এখানে বলে রাখা ভাল বঙ্গবন্ধু আজীবন যতদিন বাংলাদেশ রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রেরণা থাকবেন, আছেন তার স্থান কেউ নিতে পারবে না। কিন্তু সেই প্রেরণার সফল বাস্তবায়ক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তারা ছিলেন অভিন্ন সম্পূরক সত্তা। তিনি বলেন, এটা কি করে হতে পারে যে আমরা ইতিহাসকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখবো। সমালোচনা যারা করেন তাদেরকে আমরা দূরে সরিয়ে দেই। যারা শুধুই তোষামোদি করবে, আমাদের প্রিয় কথাগুলিই বারবার বলে, তাদেরকে কাছে টেনে নিই। সেটা তো একটা জাতির জন্য বিরাট অধঃপতন। আজকে যে তরুণরা উপস্থিত তাদের সঙ্গে আমার চিন্তার ক্ষেত্রের সেতুবন্ধন করতে চাইছি। সেটা হচ্ছে কোন জাতি কোন দেশ আমাদের মতো এত রক্ত দেয়নি। কোন জাতি কোন দেশ স্বাধীনতার ইতিহাসে তার জন্মলগ্ন নিয়ে এত বিভ্রান্তিতে ভোগেনি। ২০০৬ সালের ২রা জানুয়ারি এই বইটা লেখা শুরু করেছিলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড স্টেটের সিলভার স্প্রিং-এর বাসভবনে। আমি যখন লিখছিলাম কিছু কিছু লেখা আমার মাকে না জানিয়ে খবরের কাগজে প্রকাশিত হচ্ছিল। এ লেখাগুলো পড়ে প্রথম অভিনন্দন যিনি জানাতেন তিনি ছিলেন আমার মা। এ বই প্রকাশের ব্যাপারে যিনি আমাকে সর্বতোভাবে অনুপ্রাণিত করেছিলেন তিনি আমার মা। এমনকি তিনি যখন হাসপাতালে ছিলেন তখন জানতে চেয়েছিলেন বইটি লেখা কবে শেষ হবে। যে কথাগুলো তিনি বলে যেতে পারেননি, যে কথাগুলো অব্যক্ত থেকে গেছে তিনি হয়তো চেয়েছিলেন তার উত্তরসূরিরা সে মশাল হাতে তুলে আরও দু’কদম এগিয়ে যাবে। এটা তো আমার একার পক্ষে সম্ভব না। হয়তো আমি দু’কদম এগিয়েছি। আপনারা তোমরা যারা নতুন প্রজন্ম তোমরা এই বইটা হাতে তুলে মূল থিমটা চিন্তা করবে। কিছু চিন্তার খোরাক আমি তুলে দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমি থাকি ওয়াশিংটন ডিসির উপকণ্ঠে মেরিল্যান্ড স্টেটের সিলভার স্প্রিং বাসভবনে। আমার বাড়ি থেকে এবাউট ফোরটি মিনিটস দূরে হচ্ছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মিউজিয়াম। ওখানে দিগন্ত দিশারী বিশাল মাঠ। তার দু’পাশে উনিশটা মিউজিয়াম। বিশ্বের এ মিউজিয়াম পাড়ার একটা বিশেষত্ব হলো এখানে টিকিট কেটে দর্শনী দিয়ে টাকা খরচ করে মিউজিয়ামে ঢুকতে হয় না। এগুলো সব ফ্রি। সেখানে রয়েছে নয়-দশটা রিসার্চ সেন্টার, গবেষণা সেন্টার। লক্ষণীয় ব্যাপার হলো সেই মিউজিয়াম পাড়াটার এক কোণে এয়ার অ্যান্ড স্পেস মিউজিয়ামের পাশে আছে ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। সেখান থেকে আমি হাঁটতে হাঁটতে যখন আরও কিছু দূরে যাবো আরও মাইল দুয়েক সেই চিন্তাটা করতে করতে আবার দেখি ওটার একটা অসামান্য রূপ একজন খুব মোস্ট ইমাজিনেটিভ চিন্তাবিদ, রাষ্ট্রনায়ক তার বিশাল মিউজিয়াম। সেটা হচ্ছে জেফারসন মেমোরিয়াল। মার্কিন ইতিহাসে আমরা এখানে যেটাকে বলি জাতির জনক- এখানে কিন্তু ফাউন্ডিং ফাদারস কনসেপ্টটা নেই। ওখানে খুব ইন্টারেস্টিংলি দু’টো কনসেপ্ট কাজ করছে। একটা হচ্ছে জর্জ ওয়াশিংটনকে বলা হয় ফাদার অব দ্য কান্ট্রি। এটার ক্রাইটেরিয়াটা হলো জর্জ ওয়াশিংটন সম্মুখযুদ্ধে যুদ্ধ করে রেভুলেশনারি ওয়ারের লিডার হিসেবে উনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শত্রুমুক্ত করেছেন। সেজন্য ওনার স্পেশাল স্পেস। তিনি যদি সম্মুখযুদ্ধে লড়াই করে শত্রুমুক্ত না করতেন সেটা কিন্তু মার্কিন সংবিধান বা ডিক্লারেশন ইন্ডিপেনডেন্স ওই ব্যাপারগুলো আসতো না। আর ফাউন্ডিং ফাদারস বলা হচ্ছে সাত জনকে। যেমন জেফারসন আছেন, বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিন আছেন অ্যান্ড সো ফার। এখন ফাউন্ডিং ফাদারসের ক্রাইটেরিয়া হলো তিনটি। এক হচ্ছে পারটিসিপেশন ইন ওয়ার, যুদ্ধে যোগদান। সেটা শুধু অস্ত্র হাতেই নয়। চিন্তা, বুদ্ধি, মেধা, পলিসি মেকিং এগুলোর সমন্বয় ঘটিয়ে জাতিকে সংঘবদ্ধ করে এ যুদ্ধে জয়লাভের কর্মকাণ্ডে যারা প্রত্যক্ষভাবে যোগদান করেছেন তারা। সেকেন্ড কনস্টিটিউশন লিখতে, এস্ট্যাবলিশ করতে যারা প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। থার্ড ডিক্লারেশন অব ইনডিপেনডেন্স, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যারা স্বাক্ষর দিয়েছেন আমাদের দেশে সেই ক্রাইটেরিয়াগুলো যদি এস্টাবলিশ করতাম, রাজাকার, আলবদর অনেক স্বাধীনতাবিরোধী কিন্তু অটোমেটিক বাদ পড়ে যেতো। আমরা সেই ক্রাইটেরিয়া করিনি বলে অনেকেই ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছে সেই শূন্যস্থানগুলোর মধ্যে। একটি জাতি কিন্তু আরেকটা খুব ইন্টারেস্টিং ব্যাপার বাংলাদেশে আমি খুব স্পষ্ট বলবো আমি রাজনীতির সাথে জড়িত নই। আমি রাজনীতিমনস্ক, মইদুল ইসলাম সাহেব যেটা বললেন আমি কাঁচা সবুজও বটে। এটা আমার শক্তি, আমার দুর্বলতা হয়তো এটা আমার সাহস। সেটা নিয়েই আমি কিছু কথা বলবো। এখানে এসে একটা জিনিস আমার চোখে পড়লো এক হাজার টাকার নোটে বঙ্গবন্ধু, পাঁচ শ’ টাকার নোটে বঙ্গবন্ধু, এক শ’ টাকার নোটে বঙ্গবন্ধু, পঞ্চাশ টাকার নোটে বঙ্গবন্ধু, বিশ টাকার নোটে বঙ্গবন্ধু, দুই-এক টাকার নোটে বঙ্গবন্ধু। আমি বললাম বঙ্গবন্ধু তো আরও বিশাল। আমরা তো তাকে এইগুলোর মধ্যে বন্দি করে আমরা তো একটা কালটিসিজমের সূচনা ঘটাচ্ছি। একটা ডিকটেটরিয়াল একটা স্বৈরাচারী ইনস্টিটিউশনকে ডেভেলপ করতে সহায়তা করছি। এটা তো বঙ্গবন্ধু চাননি। উনি তো গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন। সেখানে পাওয়ার শেয়ারিং হবে। ডিসট্রিবিউশন অব পাওয়ার হবে। অনেক চিন্তা মত যারা বিভিন্নভাবে চিন্তা করছেন তার লক্ষ্য যদি স্বাধীনতা হয়, তাদের রিকগনিশন দিতে হবে, তাদের আলিঙ্গন করতে হবে। তাদেরকে শ্রদ্ধাবোধ জানাতে হবে। কিন্তু এখানে যদি আমরা এককভাবে সেটা করি আমরা কিন্তু তাকে অবমাননা করছি। এখন আমি আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথাতে আসি। আমি সেখানে আছি ত্রিশ বছরের উপরে, সেখানে আমার ছাত্রজীবন কেটেছে। আমার জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কেটেছে। তার মানে এই না যে আমি যে উদাহরণ দিলাম অন্ধভাবে সেটাই আপনারা নেবেন। আমি জাস্ট একটা ট্রিট করছি যেন আপনারা চিন্তা করেন। এখন ইউএস ডলারের কথা বলি। এক ডলারে হচ্ছে ফাদার অব দ্য কান্ট্রির প্রতিকৃতি। আর ১০০ ডলারে বেঞ্জামিন ফ্রাংকলিনের ছবি। ফ্রাংকলিন কিন্তু ইউএস প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। হি ওয়াজ ওয়ান অব দ্য ফাউন্ডিং ফাদারস। উনি ছিলেন একজন পলিম্যাথ, ফিলোসোফার, সাইনটিস্ট। বিদ্যুতের প্রবাহকে কনডাক্টরের মাধ্যমে কনসেনট্রেট করে উনি মানুষের কাজে লাগিয়েছেন। ইনডাস্ট্রিয়াল কাজে মানবকল্যাণে সেখানে তার যে বিস্ময়কর অবদান। এগুলোর কারণে তার যে চিন্তাধারা ছিল যে ফিলোসোফিকাল দর্শন সেটাকে সম্মান জানিয়ে ১০০ ডলার বিলে বেন ফ্রাংকলিন। কার ছবি কতখানি যাবে কিভাবে যাবে এটা কিন্তু পারিবারিক সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আসেনি। ব্যক্তি সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আসেনি। এসেছে কনভেনশনাল ডিসিশন মেকিংয়ের মধ্য দিয়ে। এসেছে গণতান্ত্রিক চর্চার মাধ্যমে, আলাপের মাধ্যমে, আলোচনার মাধ্যমে। ডিবেটের মাধ্যমে। এ ভার কিন্তু জর্জ ওয়াশিংটনের পরিবারের ওপর ন্যস্ত করা হয়নি। জেফারসনের পরিবারের ওপর ন্যস্ত করা হয়নি। কিন্তু আমরা আজকে কোথায় যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু উনি যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, তাজউদ্দীন আহমদ যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকারে সংঘবদ্ধ হয়ে কাজ করেছিলেন। দূর থেকে তাকালে বঙ্গবন্ধুর অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি ছিল, আমার বাবারও ছিল, সহকর্মীদের ছিল। কিন্তু একটা ব্যাপারে সবাই একমত হবেন ওনারা সবাই আত্মত্যাগ করেছেন। সেটা থেকে শিখতে হবে। কিন্তু সেই ক্ষেত্রটা তো প্রস্তুত করতে হবে। আমরা আজকে কারিকুলামগুলো যখন পাঠ্যসূচি দেখি আমি দেখি একনায়কতন্ত্রের সব বীজগুলো সেখানে প্রোথিত হচ্ছে। তার ফলে এ সরকার থাকবে না, ভিন্ন সরকার আসবে তারাও এগুলো উড়িয়ে দেবে। কারণ আমরা তো জনগণের মত নিয়ে এ বিষয়গুলো এস্টাবলিশ করছি না। আমি আমার বইয়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র প্রয়াস নিয়েছি বঙ্গবন্ধু, তাজউদ্দীন ওনার সহকর্মীরা যে আদর্শটা গড়তে চেয়েছেন গণতন্ত্রের চর্চা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা আর আমার ভাল না লাগলেও শুনতে হবে। মেধা, মননশীলতার চর্চা সেগুলো প্রাধান্য পাবে একটি জাতির উন্নয়নে। তো সেই চর্চাগুলোর জন্য সাহস করে বলা শিখতে হবে। আজকে তরুণ প্রজন্মের কাছে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, আজ ১৮ই এপ্রিল। কেউ কি বলতে পারবে আজকে ১৮ই এপ্রিলের সিগনিফিকেন্সটা কি? ১৮ই এপ্রিল মাস্টারদা সূর্যসেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে অস্ত্রাগার লুণ্ঠন হয়। এটা কিন্তু একটা বিশাল চমক সৃষ্টি করে সে সময়। আর গতকাল ছিল ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর দিবস। সেখানে কিন্তু এই যে মুজিবনগর কথাটির উদ্ভাবক তার প্রতি এক ফোঁটা শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে দেখলাম না। উনি বলেছিলেন এ জায়গার নাম কুষ্টিয়ার ভবেরপাড়ার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননের নাম আজ থেকে হবে মুজিবনগর এবং যুদ্ধাবস্থায় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী যেখানেই যাবে তার নাম হবে মুজিবনগর। উনি কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই যে চেতনা এই যে ভাবমূর্তি সঠিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন একটি স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য। উনি জানতেন যদি এই নেতৃত্বের সংজ্ঞাকে যদি সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হয় যে প্রত্যেকের মেধা, মননশীলতাগুলো একত্রিত করে দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতাম। এই এপ্রিল মাস ১০ই এপ্রিল হলো স্বাধীন বাংলা সরকার গঠন। ১৭ই এপ্রিল হলো মুজিবনগর সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। এর বাইরেও দুটি ডেট আছে আমার বাবা-মার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগতভাবে খুবই উল্লেখযোগ্য। ১৪ই এপ্রিল ১৯৫৯ বাংলা নববর্ষে এক মধ্যাহ্নে সৈয়দা জোহরা লিলির সাথে দেখা হয় নবীন রাজনীতিক তাজউদ্দীন আহমেদের। পুরনো ঢাকার বংশালে আব্বু তখন গুঁড়া মাছের চচ্চড়ি দিয়ে ভাত খাচ্ছিলেন উনার বন্ধু ইসলাম সাহেবের বাসায়। পরনে হাফ হাতা শার্ট। আমার মা একটা থ্রি কোয়ার্টার সাদা শাড়ি পরে উনি ঢুকলেন, দেখলেন ভদ্রলোক তো বেশ ভাত খান গুঁড়া মাছের চচ্চড়ি দিয়ে। একেবারেই খাঁটি বাঙালি। ১২ দিনের ব্যবধানে ১৯৫৯ সালের ২৬ শে এপ্রিল তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ড. এম এ করিম বরযাত্রী হয়ে সেই অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। এসব খুঁটিনাটি তথ্য আম্মা যখন যুক্তরাষ্ট্রে যেতেন আমি তখন শুনে শুনে লিপিবদ্ধ করতাম। আমার বইয়ের পেছনে ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করেছি। ড. কামাল হোসেন বললেন, আমার অসহযোগ নির্মূূল নামের বইটাতে আমি আলোচনা সংক্ষিপ্তভাবে করেছি। বইয়ের শেষে রয়েছে আমার বাবা-মার পারিবারিক ইতিহাস। আমি যে ইন্টারভিউগুলো করেছি সেগুলো ব্যারিস্টার আমীর-উল ইসলামের ইন্টারভিউ উঠে এসেছে। আমার লেখাটায় অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। আপনারা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। যেটা আমি অনেক আবেগ নিয়ে লিখেছি। যেটা আমি মেয়ে হিসেবে আমার বাবাকে খুঁজেছি। এবং বাবাকে খুব কাছে পাইনি। এই যে একটা আকুতি, এই যে একটা না পাওয়ার ব্যথা। আমি বাবাকে পাচ্ছি তারপর আমার বাবা সরে যাচ্ছে। আবির্ভাব হচ্ছে নেতা তাজউদ্দীনের আবার তাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছি। আবার টেনে উঠছেন নেতা তাজউদ্দীন। এই যে টানাপড়েনের দ্বন্দ্ব তার মধ্য থেকেই আমি আবিষ্কার করার চেষ্টা করেছি একটা মানুষকে একটা বাবাকে, একটা জাতির ইতিহাস আনফোল্ডিং অব এ নিউ হিস্ট্রি। আপনারা বইটি পড়বেন। বইটি নিয়ে আলোচনা হোক। বইটি হয়তো আপনাদের চিন্তার দুয়ার আরও খুলে দেবে। এটার পরে আরও হয়তো বই আসবে। আরও লেখালেখি হবে। হোক কিন্তু স্বাধীনতার ইতিহাস সম্পর্কে নয় মাসের ইতিহাস সম্পর্কে চর্চাটা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের মেরুদণ্ডকে করবে সবল। তরুণ প্রজন্মের কাছে আবেদন তোমরা নতুন চিন্তা ফ্রেস মাইন্ড নিয়ে এগিয়ে আসো। তোমরা পড়, প্রশ্ন করো, বিতর্ক করো। কিন্তু সবই যেন সত্যকে জানার অঙ্গীকারে ইনসপায়ারড হয়ে সেটাই যেন আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটা মূল লক্ষ্য হয়।

No comments

Powered by Blogger.