রাশিয়ার ওপর অবরোধ সহজ নয়

মানচিত্রে ক্রিমিয়া
ক্রিমিয়া নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগ দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইউক্রেন থেকে বের হয়ে রাশিয়ায় যোগ দেওয়ার পক্ষে ক্রিমিয়ায় গণভোটের পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। ইঙ্গিত দিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন নিয়ে হস্তক্ষেপ অব্যাহত রাখলে ভবিষ্যতে আরও কঠোর অবস্থানে যাবে তারা। গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়া উপদ্বীপটিকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে এখন প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, রাশিয়ার ওপর কতটা কঠোর হতে পারে পশ্চিমা বিশ্ব। কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে রাশিয়ার ওপর? গণভোটের আগে থেকেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান কঠোর করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। রাশিয়া-ইইউ অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা স্থগিত করে সেই অবস্থানের জানান দেয় পশ্চিমা বিশ্ব। জি-৮-এ রাশিয়ার অংশগ্রহণের ওপর গতকাল স্থগিতাদেশ দিয়েছেন সংস্থাটির নেতারা। আগামী জুনে রাশিয়ার সোচিতে অনুষ্ঠেয় জি-৮ সম্মেলনেও ইইউ ও মার্কিন প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ক্রিমিয়াকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়া ও ইউক্রেনের রুশপন্থী ২১ জন নেতার বিরুদ্ধে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা এবং তাঁদের সম্পদ জব্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। যুক্তরাষ্ট্র ১১ জনের বিরুদ্ধে একই ব্যবস্থা নিয়েছে। ইইউ ইঙ্গিত দিয়েছে, এই তালিকায় ধীরে ধীরে ১০০ জনের বেশি ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রথমে রাজনীতিবিদ ও কর্মকর্তাদের এই তালিকায় রাখা হলেও ধীরে ধীরে রুশ ব্যবসায়ীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও সম্পদ জব্দের বাইরে বিভিন্ন কূটনৈতিক এবং সামরিক সংলাপে রাশিয়াকে একঘরে করার কথা বিবেচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ।
তারা বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে রাশিয়াকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার কথাও ভাবতে পারে। এই মুহূর্তে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ইইউ। মস্কোকে বশে আনতে এটাও ব্যবহার করতে পারে ইউরোপীয় দেশগুলোর এই সংগঠনটি। ইইউর এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ৮৪ শতাংশই নেয় ইউরোপের দেশগুলো। শুধু তা-ই নয়, রাশিয়ার রপ্তানি করা প্রাকৃতিক গ্যাসের ৭৬ শতাংশই কেনে ইউরোপ; যা রাশিয়াকে চাপে ফেলার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করবে ইইউ। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ করলে ইইউ সমস্যায় পড়বে কি না, সে প্রশ্নও রয়েছে। সাম্প্রতিক এক তথ্যে দেখা যায়, রাশিয়ার বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ৬৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার বিদেশি ঋণ রয়েছে। এর বেশির ভাগই ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া। রাশিয়া বাণিজ্যিকভাবে একঘরে হলে তার প্রভাব রুশ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও পড়বে। ঋণের অর্থ আদায় করতে না পারলে ঋণ দেওয়া ইইউ ও মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোও সংকটে পড়বে। রাশিয়ার সরকারি মালিকানাধীন গাজপ্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করলেও একই অবস্থা হবে। তখন প্রয়োজনীয় চাহিদার বিশাল পরিমাণ গ্যাস কোথায় পাবে ইইউ। গ্যাসের দামই বা কোথায় গিয়ে ঠেকবে? ফলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে খুবই জটিল প্রক্রিয়া। আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যেহেতু নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, তাই সেই অবস্থান থেকে ওয়াশিংটনের সরে আসার অবস্থা নেই। এখন কী ধরনের নিষেধাজ্ঞা আসবে, সেটাই দেখার বিষয়। বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.