অবরুদ্ধ নয়াপল্টন by কাফি কামাল

নয়াপল্টনের প্রবেশমুখ নাইটিঙ্গেল মোড়ে কাটাতারের বেড়া। কয়েক স্তরে সতর্ক প্রহরায় পুলিশ। সাধারণ মানুষের প্রবেশে মানা। ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে উল্টোপথে।
তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ ছাড়া নয়াপল্টন ভিআইপি সড়কটি ঢুকতে পারছেন না গণমাধ্যমকর্মীরা। একই দৃশ্য ফকিরাপুল মোড়েও। কাটাতারের বেড়া দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে নয়াপল্টনের প্রতিটির গলিমুখ। সেখানে সতর্ক অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। আশপাশের প্রতিটি বিল্ডিংয়ের ছাদে দূরবীন হাতে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। নয়াপল্টনে ঢোকার সব পথে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। কাউকে কোথাও দাঁড়াতে দেয়া হচ্ছে না। ভিআইপি সড়কটির সকল প্রতিষ্ঠান তালাবদ্ধ। জনশূন্য নয়াপল্টনে টহল দিচ্ছে পুলিশের ছোট ছোট টিম। ছুটোছুটি করছে এপিসি, জলকামান। সবখানে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের আনাগোনা। দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটে আগের মতোই ঝুলছে তালা। সেখানে বসে আছে পুলিশ। মাঝে মধ্যে কার্যালয়ের দায়িত্বরত কর্মচারীরা কলাপসিবল গেটের ভেতরে দাঁড়িয়ে উঁকি মারছেন। কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় অলস সময় পার করছেন গণমাধ্যমকর্মীরা। সবমিলিয়ে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’কে কেন্দ্র করে নয়াপল্টন পরিণত হয়েছে রীতিমতো নিষিদ্ধ এলাকায়। সুনসান নয়াপল্টনে কেবল পুলিশের টহল। নয়া পল্টনে শুধুই পুলিশ। ১৮দলের ঘোষণা অনুযায়ী সকাল থেকে হাজার-হাজার নেতাকর্মীর স্লোগান ও পদভারে মুখরিত হওয়ার কথা নয়াপল্টন। কিন্তু ঠিক উল্টো পরিস্থিতি সেখানে। নয়াপল্টনের শতভাগ নিয়ন্ত্রন র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের হাতে। ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচি ঠেকাতে গতরাত থেকে রাজধানী জুড়ে চলছে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কড়া তৎপরতা। কাটাতারের বেড়া ও বালুভর্তি ট্রাক দিয়ে ব্যারিকেড সৃষ্টির মাধ্যমে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে গুলশানে বিরোধী নেতা খালেদা জিয়ার বাসভবন। রাজধানীতে ঘুরছে না গণপরিবহনের চাকা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে রিক্সা থেকে শুরু করে প্রতিটি হালকাযান তল্লাশি করছে পুলিশ। পাহারা বসিয়েছে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতি পেরিয়ে নয়াপল্টন অভিমুখে নেই কোন বিরোধীদলের মিছিল। এমনকি কয়েকজন একত্রিত হয়েও চলাচলও করতে পারছেন না। তবুও নয়াপল্টনে সদাসতর্ক আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। এদিকে নয়াপল্টনসহ পুরো পল্টন এলাকা ঘিরে রেখেছে র‌্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার নিরাপত্তার জাল। চলছে কঠোর নজরদারি। এমনকি নয়াপল্টনের গলিগুলোতেও দেয়া হয়েছে একাধিক কাটাতারের ব্যারিকেড। ওদিকে সোয়া ১টার সময় গলিপথে নয়াপল্টন যাবার পথে পুরনো পল্টন রাস্তা থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক কূটনীতিক ইনাম আহমেদ চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ। তারপরই তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশের সতর্ক দৃষ্টি গলিয়ে নয়াপল্টনে ঢুকে পড়েছিলেন বিরোধী দলের কয়েকজন কর্মী ও সাধারণ মানুষ। ৫ মিনিটের মধ্যেই ১১টা ৩৫ মিনিটে নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়ক থেকে তাদের আটক করে পুলিশ। তাদের মধ্যে সাবেক এমপি রওশন আরা ফরিদ, মহিলা দলের নেত্রী সাদিয়া হক, জান্নাতুল ফেরদৌস, এলিজা জামান, শিরিন আখতার রীনা, নয়াপল্টনের দোকান কর্মচারী জামসেদ আলী, ফকরুল ইসলাম মুন্সি, সাইদুল ইসলাম, আবু তাহের, ইসমাইল, বিআরটিসি বাসের স্টাফ বাদল, দুই ছাত্র আশিক ও রুবেল। সবমিলিয়ে নয়াপল্টন ও ফকিরাপুল থেকে আটক করা হয় ১২ জনকে। তাদের সবাইকে পল্টন মডেল থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। ওদিকে পাঁচদফা টানা অবরোধের পর রাজধানী অভিমুখে গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসুচি ঘোষণা করেছিলেন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া। সারা দেশ থেকে সে কর্মসুচিতে অংশ নিয়ে আজ অভিযাত্রার শেষ গন্তব্য ছিল নয়াপল্টন। যে কোন মূল্যে কর্মসুচি সফল করার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির তরফে গতকাল জানানো হয়েছিল প্রতিকূলতা পেরিয়ে কর্মসুচিতে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া। তবে সকাল থেকে নয়াপল্টনমুখী হননি বিএনপিসহ ১৮দলের কোন শীর্ষস্থানীয় নেতা। কোন দৃশ্যমান তৎপরতা চালাতে পারেনি তারা। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, নয়া পল্টনের কাছাকাছি এলাকায় নেতা-কর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে অবস্থান করছেন। পুলিশি বাধার কারণে তারা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে পারছেন না। পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছেন, অনুমতি না থাকায় সমাবেশ হতে দেয়া হবে না।

No comments

Powered by Blogger.