ছাত্রলীগের খেয়াল খুশি

ছাত্রলীগের কাউন্সিলের সময় হয়ে এলেও কাউন্সিল হচ্ছে না। মনে হয় সংগঠনটির নেতৃত্ব সরকারের শেষ সময়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় কাজে’ ব্যস্ত। প্রায়ই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। দখলদারি ও অস্ত্রবাজি যে সংগঠনের বৈশিষ্ট্য, সেখানে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র থাকার কথা নয় এবং নেইও। তারই প্রতিফলন ঘটল মেয়াদের শেষ মুহূর্তে কাউন্সিল না করেই ইচ্ছামতো পদ বণ্টনের মাধ্যমে।
গতকাল রোববারের প্রথম আলো জানাচ্ছে যে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ছাত্রলীগের কমিটির আকার বাড়ানো হয়েছে। যখন সংগঠনটির কাউন্সিলের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা, তখন এ ধরনের সিদ্ধান্ত গণতন্ত্র বিসর্জনেরই দৃষ্টান্ত। ছাত্রসংগঠন মানে তরুণ নাগরিকদের মঞ্চ। এই মঞ্চ থেকেই তাঁদের যেখানে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ও আচরণ শেখার কথা, সেখানে তাঁরা শিখছেন কীভাবে সম্মেলন না করেও নেতা হওয়া এবং নেতা বানানো যায়। কীভাবে পদ বণ্টন করে সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখা যায়।
ক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত সংগঠনে পদ পাওয়া হাতে চাঁদ পাওয়ার মতোই সৌভাগ্যজনক ঘটনা। অনেক সুযোগ-সুবিধাই তাঁদের জন্য অবারিত হয়ে যায়। এ কারণেই ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের কমিটি যতটা না প্রতিনিধিত্বমূলক, তার থেকে বেশি অনুগ্রহমূলকই হয়ে থাকে। নেতারা এখানে শীর্ষ নেতৃত্বের অনুগ্রহ ও আনুগত্যের ভিত্তিতে মনোনয়ন পান। এই অনুগতদের কাজ হলো ‘নেতা’র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহূত হওয়া। এরই দৃষ্টান্ত দেখা গেল চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নামধারী কিছু যুবকের থানায় গিয়ে হম্বিতম্বি করার মাধ্যমে। চট্টগ্রামে শিবির সন্দেহে ২৫ জনকে পুলিশ আটক করলে কতিপয় নেতা আবির্ভূত হন তাঁদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য। পুলিশ এতে কান না দিলে তাঁরা পুলিশের কর্মকর্তার সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিও করেন। দৃশ্যত, লীগ আর শিবিরের মধ্যে রাজনৈতিক শত্রুতা থাকলেও একে অন্যের সহায়ও হতে পারে। নইলে শিবিরের কর্মী বলে অভিযুক্তকে ছাড়াতে বেপরোয়া হবেন কেন তাঁরা?
দুটি ঘটনাই প্রমাণ করে, ছাত্রলীগ আর ছাত্রদের সংগঠন নেই। অগণতান্ত্রিক ও বলপ্রয়োগভিত্তিক সংগঠনের দ্বারা কীভাবে তরুণদের সুনাগরিকত্বের পথে চালিত করা সম্ভব, তা তাই বোধগম্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.