কাদের মোল্লার মামলার শুনানিতে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায় নিয়ে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের করা আপিল শুনবেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ।
রোববার দুপুরে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনর নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চে এ শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রধান বিচারপতি ছাড়া বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী।

এর মধ্যে বিচারপতি সিদ্দিকুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী আপিল বিভাগে রোববার শপথ নেন।

শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ৩১ মার্চের (রোববার) আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় মামলাটি ১২ নম্বরে (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বনাম আব্দুল কাদের মোল্লা) রয়েছে।

এর আগে গত ১০ মার্চ রোববার সকালে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ শুনানির জন্য ৩১ মার্চ দিন ধার্য করেন।।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।

ট্রাইব্যুনাল তাকে ৫টি অপরাধে দায়ী করলেও সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দণ্ডাদেশ না দেওয়ায় এবং একটি অপরাধের অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়ায় সাজা বাড়ানোর লক্ষ্যে এ রায়ের বিরুদ্ধে গত ৩ মার্চ আপিল করেন প্রসিকিউশন।

এ দিকে ৪ মার্চ অভিযোগ থেকে খালাসের আবেদন জানিয়ে আপিল করেন আব্দুল কাদের মোল্লা।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে লড়বেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সাবেক বিচারপতি (অ্যাটর্নি জেনারেল পদমর্যাদায়) সৈয়দ আমীর-উল ইসলাম। আসামিপক্ষে থাকবেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে প্রমাণিত  প্রথম অভিযোগ, একাত্তরের ৫ এপ্রিল মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন কাদের মোল্লা।

দ্বিতীয় অভিযোগ, একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা সহযোগীদের নিয়ে কবি মেহেরুননিসা, তার মা এবং দুই ভাইকে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের বাসায় গিয়ে হত্যা করেন।

প্রমাণিত তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৯ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে আরামবাগ থেকে কাদের মোল্লা ও তার সহযোগীরা জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করেন।

পঞ্চম অভিযোগ অনুসারে, একাত্তরের ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনা ও অবাঙালি রাজাকারদের সঙ্গে কাদের মোল্লা মিরপুরের আলোকদী (আলুব্দী) গ্রামে হামলা চালান। ওই ঘটনায় ৩৪৪ জনের বেশি শহীদ হন।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা, তার সহযোগী এবং পাকিস্তানি সেনারা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যান। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত, তার স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণের শিকার হন শহীদ হযরত আলী লস্করের এক মেয়ে।

তবে ট্রাইব্যুনাল তার রায়ে বলেছেন, ঘটনা ঘটলেও কেরাণীগঞ্জের ঘাটারচর গণহত্যার সঙ্গে কাদের মোল্লার সংশ্লিষ্টতা সন্দোতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেননি রাষ্ট্রপক্ষ। এটা ছিল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে চতুর্থ অভিযোগে।

এ অভিযোগ অনুসারে, ২৫ নভেম্বর কাদের মোল্লা ও ৬০-৭০ জন রাজাকার কেরাণীগঞ্জ থানার ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটারচরে (শহীদনগর) শতাধিক নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে হত্যা করেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এর বিধান অনুসারে রায় ঘোষণার এক মাস অর্থাৎ ৩০ দিনের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার বিধান রয়েছে।

তবে ইতিপূর্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন’১৯৭৩ এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের বিধান ছিল না। শুধু যে কোনো খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারতেন প্রসিকিউশন।

আইনের এ অসামঞ্জস্যতা দূর করতে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে পাস করা হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইবুনালস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৩’। এর ফলে উভয় পক্ষই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি এ বিলের অনুমোদন দেওয়ায় তা আইনে পরিণত হয়।

No comments

Powered by Blogger.