ব্লগার রাজিব খুনের ঘটনায় অনলাইনে ঝড় by ইসমাইল হোসেন

ব্লগার রাজিব হায়দার শোভন খুনের প্রতিবাদে ঝড় উঠেছে বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চেও হত্যার প্রতিবাদে টানা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জামায়াত-শিবির তাকে খুন করেছে-অভিযোগ এনে খুনীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে। পরিবারেরও অভিযোগ এমনটাই।
শুক্রবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর মিরপুরের পলাশনগরে তার মামার বাসায় যাওয়ার পথে শোভনকে হত্যা করা হয়। পুলিশ তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে। নিহত রাজিব হায়দারের বাবা ড. নাজিম উদ্দিন। তার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়।

শোভনের মামা খুররম হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, “শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে আমার বাসায় ফেরার পথে রাত সাড়ে ৯টার দিকে দু’জন মুখোশধারী দুর্বৃত্ত চাইনিজ কুড়াল ও ধারালো অন্ত্র নিয়ে তার ওপর এলোপাতারি হামলা চালায়। এসময় তাকে উপুর্যপুরি কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।”

“স্বাধীনতা বিরোধীরা চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে” বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শোভন ‘থাবা বাবা’ ছদ্ম নামে ‘আমার ব্লগ’ নামের একটি ব্লগের নিয়মিত ব্লগার ছিলেন। শাহবাগ আন্দোলনের পক্ষেও নিয়মিত ব্লগ পোস্ট করতেন তিনি। মৃত্যুর আট ঘণ্টা আগেও তিনি ছিলেন ফেসবুকে। ব্লগেও দিয়েছিলেন স্ট্যাটাস।

বিভিন্ন ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রকশিত শোভনের আট ঘণ্টা আগে ফেইসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস হলো- “কোথায় কিভাবে বর্জন করতে হবে তার রুপরেখা নির্ধারণ করাটা খুব জরুরি। কারণ আমাদে দৈনন্দিন জীবনে কোথায় নেই তারা... একতা বাদ দিয়ে অন্যটাতে যাব, সেখানেও তাদের সেবাই নিতে হবে! আজকে যে ইন্টারনেট সেবা নিয়ে আমরা অনলাইনে আন্দোলন করছি তার মধ্যেও তো জামাতি অংশ আছে... তার মানে কি সর্ষেতে ভূত নাকি আমরা পয়সা দিয়ে নেটের বাইটস কিনছি বলে সেটা সিদ্ধ!

একটু চিন্তা করা দরকার... একটা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন খুব জরুরি! কারন জামাতি প্রতিষ্ঠান বলে যাদের বয়কট করবো, তার মালিকানা রাতারাতি বদলে যেতে পারে... সিম্পল শেয়ার আদান প্রদানেই মালিকানা বদলে যাবে!

তবে আমার জায়গা থেকে একতা জিনিস আমি বলতে পারি, পরিচিত জামাত সংশ্লিষ্ট পণ্য ও প্রতিষ্ঠান যার যার জায়গা থেকে বর্জন করুন, যেমন তাদের মূল কাগজ সংগ্রাম বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-কোচিং ও তাদের সাংস্কৃতিক সংগঠন!”

শোভন খুনের প্রতিবাদে ব্লগগুলোতে ঝড় উঠেছে। তিনি যে ব্লগে লিখতেন সেই সোনার বাংলা ব্লগে একজন লিখেছেন, “লেখালেখির অপরাধে হত্যাঃ এই বধ্যভূমি কি আমাদের দেশ?”

ফেইসবুকেও তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, উঠছে বিচারের দাবিতে স্ট্যাটাস। একজন লিখেছে- “রাজিব হায়দারের নৃশংস হত্যাকাণ্ড `মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দাবিদার` সরকারের হিম্মত দেখার প্রশ্ন…।”

আর একজন লিখেছে- “হায়েনার দল জামায়াত শিবিরের হাতে আজ বলি হল আমাদের প্রিয় ব্লগার আহমেদ হায়দার রাজীব। প্রজন্ম চত্বরের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর রাজীবকে আর দেখা যাবেনা জয় বাংলা শ্লোগান দিতে। জামায়াত শিবিরের কাছে এ আমাদের পরাজয় নয়। বরং এই আন্দোলনে আগুন জ্বলে উঠেছে। আরও দৃঢ় প্রত্যয়ে বাঙালি জেগে উঠেছে। রাজীব হত্যার প্রতিশোধ নিতেই হবে আন্দোলনে জয়ী হয়ে।”

সামহোয়ারইন ব্লগ তাদের সাইটের উপরের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছে- ‘খবর কনফার্ম- ব্লগার থাবা বাবাকে (আহমেদ রাজীব হায়দার) নৃশংসভাবে জবাই করে হত্যা’।

বিস্তারিত অংশে বলা হয়ছে, বিভিন্নসূত্র মতে ৮ ঘন্টা আগেও তিনি ফেবুতে ছিলেন। খুনের জন্য জামায়াত-শিবির আর তার দোসর পাকিস্তানি দালাল রিফিউজি বিহারিদের দোষারোপ করে তাদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই ব্লগে এক ব্লগার লিখেছে, “কী অপরাধ ছিল রাজীব ভাইয়ের (থাবা বাবা)? ওরা আপনাকে বাঁচতে দিল না রাজীব ভাই।  কথা দিচ্ছি আপনার স্বপ্ন বৃথা যেতে দিবনা।”

অপর একজন লিখেছেন, “রাজীব হায়দারের কি দোষ ছিল যে ওকে এমনভাবে মারা হল? কত জনকে মারবে ওরা এভাবে? আবার ওরা ১৪ই ডিসেম্বর ১৯৭১ এর মত শুরু করেছে। ওদেরকে থামাতেই হবে, তা নাহলে আমাদের কোন চিহ্ণ থাকবেনা এই দেশে। মনটা খুব খারাপ লাগছে।”

শাহবাগের আন্দোলনের সূচনা হয় অনলাইন থেকেই। আর সেই অনলাইনের একজন অ্যাক্টটিভিস্ট ও শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী খুনের পর ফেসবুক, ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর স্ট্যাটাস নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও বিশেষভাবে সংবাদ তৈরি করছে। 

ব্লগার শোভনের নিহত হওয়ার খবর শাহবাগ চত্বরে পৌঁছালে তাক্ষণিকভাবে সমবেত আন্দোলনকারীরা এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

শনিবার থেকে প্রতিদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত ১০টা পর‌্যন্ত আন্দোলন চলার কথা থাকলেও ব্লগার খুনের ঘটনার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

আন্দোলনের তেজ আরও বাড়ছে শাহবাগে। গভীর রাতিই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে আন্দোলনকারীরা সামিল হন শাহবাগে। ব্লগারকে হত্যা করার খবর শোনামাত্র আবার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে ফিরে আসতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। এখন সমাবেশের প্রধান স্লোগান হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘রাজিব হায়দারের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘এক রাজিব লোকান্তরে লক্ষ রাজিব ঘরে ঘরে’, ‘রগ কাটার রাজনীতি আইন করে বন্ধ কর’, ‘গলা কাটার রাজনীতি আইন করে বন্ধ কর’, ‘আমার ভাই শহীদ কেনো জবাব চাই, দিতে হবে’।

শনিবার সকালে ঘোষণা আসে, প্রজন্ম চত্বর থেকে হাজারো শোভনের জন্ম হবে।

No comments

Powered by Blogger.