২০১৩ হোক তরুণ প্রজন্মের by মো. শরিফুল ইসলাম খান

ব্রিটিশ জাতীয় দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ ২০৫০ সাল নাগাদ পশ্চিমা বিশ্বকে ছাড়িয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স কাউন্সিলের মতে, বাংলাদেশসহ ১১টি সম্ভাবনাময় দেশ সামগ্রিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ছাড়িয়ে যাবে ২০৩০-এর মধ্যে।
বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২১-এর মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সব ধরনের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সম্ভাবনা আসলেই রয়েছে_ অন্তত গত এক বছরের তরুণদের বিজয়গাথাই তা প্রমাণ করে। তরুণ প্রজন্ম বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এ বছরের শুরুতেই ৪ জানুয়ারি ওয়াসফিয়া নাজরীন অ্যান্টার্কটিকার উচ্চতম (১৬ হাজার ৫০ ফুট উঁচু) শৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফ জয় করে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টি করেন। তিনি চারটি মহাদেশের উচ্চতম চারটি শৃঙ্গ জয় করেন। নিশাত মজুমদার দেশের প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন ২০১২ সালে। ধনঞ্জয় বিশ্বাস একই বছর ৫৩তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড আসরে প্রথম রৌপ্যপদক অর্জন করে বাংলাদেশকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। একইভাবে আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে শিঞ্জিনী সাহা ব্রোঞ্জপদক অর্জন করে ৮০টি দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে আনেন। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নব্রতী যোদ্ধা অঞ্জলি সরকার গত নভেম্বরে ইউনেস্কো ও জাপানের গোই পিস ফাউন্ডেশন আয়োজিত প্রতিযোগিতা 'কাউন্টিং দ্য আনকাউন্টেবল' রচনার জন্য এক লাখ ইয়েন মূল্যমানের প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর শিক্ষার্থী এর আগে 'কুইন্স এন্টারপ্রেনিউরস কম্পিটিশন'-এ ১৬ হাজার ডলার মূল্যের প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের ছেলে শাওন রহমান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট 'ফ্রিল্যান্সার ডটকম' আয়োজিত লোগো এক্সপোজার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করে বিশ্বে আলোচিত হন। রয়টার্সের বিবেচনায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন সুমাইয়া কাজী বিশ্বের সেরা ৫০ তরুণ উদ্যোক্তার একজন নির্বাচিত হন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ওয়াসিম মিয়া মাত্র ১৭ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের তরুণ সেরা প্রকৌশলী ২০১২-এর খেতাব অর্জন করেন।
বিশ্ব ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কথা আমরা সবাই জানি। এভাবে আমাদের ক্রীড়াজগতে রয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন তরুণ দাবাড়ূ, তীরন্দাজ, সাঁতারু এবং শুটার, যারা প্রতিনিয়ত বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। শুধু খেলাই নয়; আমাদের দেশে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তরুণ উদ্যোক্তা, লেখক, রাজনীতিক, গবেষক, চিকিৎসক; যারা শুধু দেশেই অবদান রাখছেন না_ তাদের মেধায় আলোকিত হচ্ছে বিশ্ব। অবাক হয়ে চিনছে নতুন বাংলাদেশকে। তরুণ প্রজন্মের একদল বিজ্ঞানী, যারা ছত্রাকের জীবনরহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন, সেটাও ইতিহাস।
এভাবে শুধু ২০১২ নয়, এর আগেও তরুণদের জয়গান ছিল। বাংলাদেশের নবপ্রজন্ম জেএসসি ও পিএসসিতে একটি মাইলফলক রেজাল্ট উপহার দিয়েছে। এভাবে যদি সৃজনশীল ধারায় সাফল্য অব্যাহত থাকে, তবে এ প্রজন্ম দ্য গার্ডিয়ানের ধারণার যথাযথ প্রতিফলন দেখাতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের তারুণ্যের জয়গান ক্রিকেট, উদ্যোক্তা, বিজ্ঞান ছাড়িয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রেই একদিন বিশ্বের দরবারে ঝড় তুলতে পারবে। ২০১২-এর মতো ২০১৩ সালও হোক তারুণ্যের।
য়মো. শরিফুল ইসলাম খান :শিক্ষার্থী, ঢাবি

No comments

Powered by Blogger.