‘রথ ভাবে আমি দেব, পথ ভাবে আমি মূর্তি ভাবে আমি দেব...।’ (২) by আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী

যেসব ব্যর্থ কবি সফল কবিদের ক্রমাগত ভুল ত্রুটি ধরেন, সমালোচনা করেন এবং তুখোড় সমালোচক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে চান, কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁদের নাম দিয়েছিলেন ‘ছায়াপি-।’ এই সমালোচকদের উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছিলেন, ‘বরং নিজেই তুমি লেখোনা’ক একটি কবিতা, ছায়াপি- দিলো না উত্তর।’ কারণ, এই ছায়াপি-দের কবিতা লেখার ক্ষমতা নেই। কবি ও কবিতার সমালোচনা করার ত্যাদরামি আছে।
অধুনা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহলে এই ছায়াপি-ের সংখ্যা বেশি। যে কাজ করার মুরোদ তাদের নেই, সেই কাজ অন্যে (বিশেষ করে রাজনীতিকরা) করতে পারছে না বলে এরা কোরাসে চিৎকার তোলেন, অনবরত সভা, সমিতি, সেমিনার করেন। এসব সেমিনারের অধিকাংশের পেছনে থাকে বিদেশী সাহায্য এবং সেই বিদেশী সাহায্যেরও মূল উদ্দেশ্য থাকে সংশ্লিষ্ট দেশটির গণতান্ত্রিক রাজনীতির সাফল্যগুলো নয়, ভুল ত্রুটিগুলো বড় করে তুলে ধরা এবং এই গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে নিজেদের স্বার্থে ডিসক্রেডিট করা। দেশীয় ‘ছায়াপি-’ তাদের স্বার্থের তল্পি বহন করে।
বাংলাদেশের এই ছায়াপি-- বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সাবেক আমলা ড. আকবর আলি খানকে আমি একটু আলাদা চোখে দেখতাম। গম্ভীর সম্ভীর মানুষ। ভাবতাম চিন্তা ভাবনায় বুঝি গভীরতা আছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয়। পাকিস্তান আমলের বেশ কয়েকজন তখনকার তরুণ বাঙালী সিএসপি অফিসার আগরতলায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে আমার বন্ধু এইচটি ইমামও ছিলেন। আকবর আলি খান কথাবার্তা কম বলতেন বলে তাঁকে আমি প-িত ভাবতাম।
তাঁর আমলাগিরির আমলটা খুব উজ্জ্বল নয়। সফল অথবা কীর্তিমান আমলা বলে তাঁর নাম কারও মুখে উচ্চারিত হতে শুনিনি। বরং প্রথম হাসিনা সরকারের আমলে অর্থ সচিবের দায়িত্বে থাকাকালে তিনি কোন কোন কেলেঙ্কারির দায় এড়াতে পারেননি। তাঁর মধ্যে শহীদ কিবরিয়া অর্থমন্ত্রী থাকাকালে (আকবর আলি তখন অর্থসচিব) প্রথম শেয়ার বাজারের ধস তিনি সামাল দিতে পারেননি। অথচ বর্তমান অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেবের আমলে শেয়ার বাজার ধস সম্পর্কে তিনি অনেক বড় বড় কথা বলেছেন বলে কানে এসেছে।
প্রথম হাসিনা সরকারের আমলেই সম্ভবত তিনি কেবিনেট সেক্রেটারি হয়েছিলেন। তারপর উপমহাদেশের অধিকাংশ অর্থমন্ত্রী বা অর্থসচিব যা করেন, তিনিও তাই করেছেন। বিশ্বব্যাংকের কোলে আশ্রয় নিয়েছেন। অধুনা বাজারে একটি কথা চালু। উপমহাদেশে সাধারণত মন্ত্রিসভা গঠন হয় নির্বাচনে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী মনোনয়ন দেয় ওয়াশিংটন অথবা বিশ্বব্যাংক। অর্থাৎ এরা ওয়াশিংটন অথবা বিশ্বব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তি হিসেবে দেশের প্রশাসনে কাজ করেন। তারপর ঘরের ছেলে ঘরে (বিশ্বব্যাংকে) ফিরে যান। বাংলাদেশের সাবেক অর্থসচিব আকবর আলি খানের বেলাতেও সম্ভবত তার অন্যথা হয়নি। পরবর্তীকালে তাঁর কার্যকলাপ ও কথাবার্তা শুনে আমার মতো অনেকেরই বুঝতে দেরি হয়নি তিনিও আলালের ঘরের একজন দুলাল। যোগ্য দুলাল কিনা জানি না।
যতদূর মনে পড়ে ড. আকবর আলি খান এবং আমার একজন কমন ফ্রেন্ড সাবেক ব্যাংকার শফিক আহমদের (বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর নজির আহমদের ছোট ভাই) কাছ থেকে মার্কসবাদ সম্পর্কে একটি ছোট বই আমার হাতে আসে। ড. আকবর আলি খানের লেখা। সম্ভবত তখন তিনি আমলাগিরি ছেড়ে আঁতেল হওয়ার চেষ্টা শুরু করেছেন। অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে বইটা পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, বিশ্বে এখন মার্কসবাদ ডিসক্রেডিট করার জোয়ার চলছে। হয়ত বইটিতে নতুন কোন চিন্তাচেতনার হদিস পাব। বইটি পড়ে নিদারুণ নিরাশ হলাম। মার্কসবাদ সম্পর্কে এটা বালখিল্য আৎলামি ছাড়া আর কিছু নয়। গ্লোবাল ক্যাপিটালিজমের মহাবাহু বিশ্বব্যাংককে খুশি করার জন্য হয়ত লেখা। ভাগ্যিস, বিশ্বব্যাংকের কর্তারা বাংলা জানেন না। জানলে হয়ত বইটিকে মার্কসাবদ বিরোধী প্রোপাগান্ডার জন্য একটি অপাঠ্য হ্যান্ডবুক হিসেবেও তারা গণ্য করতেন না। এই বইটি পড়ে আমার প্রথম মনে হয়, ড. আকবর আলি খান আঁতেল নন। আঁতেল পরিচয়ে তাদের ছায়াপি- মাত্র।
এই ড. আকবর আলি খান সম্প্রতি ঢাকায় সিএফএসডি আয়োজিত ‘শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর অপসন ফল বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর একটি উক্তিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং দাবি করেছেন, ‘ইয়াজুদ্দীনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে তিনিসহ চার সহযোগী পদত্যাগ না করলে দেশে বহুদলীয় নির্বাচন হতো না এবং শেখ হাসিনার সরকারও ক্ষমতায় আসতে পারত না।’
এই দাবিটি শুধু অহমিকাপূর্ণ উক্তি নয়, ইতিহাসের বিকৃতি সাধনও। উল্লেখ্য, এই সাবেক আমলা সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য চারটি প্রস্তাব পেশ করেন। শুধু আমার নয়, অনেকের মতেই প্রস্তাবগুলো বাস্তবসম্মত নয় এবং অত্যন্ত চাতুর্যপূর্ণ। প্রস্তাবের চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, ‘এই তিন প্রস্তাব যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে বিরোধী দল বিএনপি তাদের প্রস্তাব দেবে। তাদের প্রস্তাবের ওপর গণভোট হবে এবং জনগণ তাদের সিদ্ধান্ত দেবে।’ অর্থাৎ বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রস্তাবে প্রকারান্তরে যে গণভোটের দাবি করে আসছে সেটি আওয়ামী লীগ সরকারকে খাওয়ানোর জন্য কী চমৎকার কৌশল! আকবর আলি খান এখানে অত্যন্ত চাতুয্যের সঙ্গে বিএনপির এজেন্ট হয়েই কি কাজটি করছেন না?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নতুন আঁতেলের আঁৎলামি সহজেই ধরে ফেলেছেন। তিনি আকবর আলি খানের চারটি হাস্যকর এবং নির্বাচন বিলম্বিত করার কৌশলপূর্ণ প্রস্তাব সম্পর্কে কোন আলোচনা করে সময় নষ্ট না করে সরাসরি বলেছেন, ‘ব্যর্থ উপদেষ্টাদের দেয়া ফর্মুলায় দেশে গণতন্ত্র রক্ষা পাবে না।’ প্রধানমন্ত্রী এই ব্যর্থ উপদেষ্টা কথাটি বলায় তাঁর সাবেক আমলা ক্ষেপেছেন এবং এক গোলটেবিল বৈঠকে (নেপথ্যে কাদের অর্থ?) দাঁড়িয়ে দাবি করেছেন, ইয়াজুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে তাঁরা চার উপদেষ্টা পদত্যাগ না করলে দেশে বহুদলীয় নির্বাচন হতো না এবং বহুদলীয় নির্বাচন না হলে বর্তমান হাসিনা সরকারও ক্ষমতায় আসতে পারত না এবং সেদিন তারা ব্যর্থ হননি।’
কী চমৎকার দাবি। আর এই দাবি জানাতে গিয়ে তিনি সুযোগ পেয়ে দেশের রাজনীতিকদেরও এক হাত নিয়েছেন। বলেছেন, ‘রাজনীতিবিদরা কোন্্ ফর্মুলায় কার হালুয়া রুটি কতোটুকু প্রাপ্য হবে তার হিসাব করেন।’ ভাল কথা। রাজনীতিবিদরা এই হালুয়া রুটি প্রাপ্তির হিসাব করেন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। আমলারা সেই হালুয়া রুটি আরও বেশি ভোগ করেন কাদের সাহায্যে?
সামরিক অথবা স্বৈরাচারী সরকারের কাঁধে চড়ে নয়কি? একদিকে ক্ষমতার হালুয়া রুটির বেশিরভাগ দখল করা এবং অন্যদিকে রাজনীতিবিদদের মাথায় সকল দোষ চাপানোর কৌশলটি আমলাদের শিখিয়ে গেছে আইয়ুবের সামরিক শাসন। আকবর আলি খানেরা সেই আমলের রাজনীতিবিদদের মাথায় ডা-া ঘোরানোর আমলা। অভ্যাসটি তাই এখনও ত্যাগ করতে পারেননি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দেশে রাজনীতিকদের শাসনের বদলে সামরিক শাসন ডেকে আনায় অগ্রণী ভূমিকাও নিয়েছে এই আমলারাই বেশি।
ইয়াজুদ্দীনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পদত্যাগী উপদেষ্টারা অবশ্যই ব্যর্থ উপদেষ্টা। এটা তাদের সম্পর্কে নিন্দা বা সমালোচনা নয়, এটা বাস্তব ঘটনা এবং ইতিহাসের সত্য। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন ও উদ্দেশ্য পূরণে সেদিন ব্যর্থ হওয়ার জন্যই তাঁরা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। দায়িত্ব পালনে সফল হলে তো আর করতেন না। আর তাঁরা (চারজন মনোনীত, নির্বাচিত নন) পদত্যাগ করাতেই বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়েছিল এবং হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসতে পেরেছেন এটা কি একটি বালখিল্য দাবি নয়?
এ কয়েকজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করলেই যদি দেশের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত এবং বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হতো, তাহলে সেনা তাঁবেদার সরকার ক্ষমতায় আসতে পারত না, সেই সরকারের হাতে হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা, ব্যবসায়ী ও শিক্ষক ছাত্রদের নির্মম নির্যাতন ভোগ করতে হতো না। হাসিনা ও খালেদাকে সাব জেলে বন্দী থাকতে হতো না। হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার এবং প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বিদেশে যেতে দিয়ে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন আটকানো হতো না। তাঁর মাথায় পলাতক আসামির হুলিয়া ঝুলত না। এক এগারোর স্বৈরাচারী শাসন দুই বছর বিলম্বিত হতে পারত না। আর এই দুই বছরের দুঃসহ শাসনের বিরুদ্ধে শুধু রাজনীতিক নয়, দেশের সকল পেশাজীবী মানুষকে ঐক্যদ্ধ হতে হতো না। ইয়াজুদ্দীনের তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কিছু মনোনীত উপদেষ্টাই আরাম কেদারায় বসে তাদের সুবিধামতো উপদেষ্টা পদে ইস্তফা দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নীরব বিপ্লব সম্পন্ন করে ফেলতেন। আর সেই বিপ্লবের নায়ক হতেন সাবেক আমলা এবং বর্তমানের আঁতেল ড. আকবর আলি খান ও তাঁর সঙ্গে পদত্যাগী সহযোগীরা। দেশের মানুষ এখনও কেন এই ‘বিপ্লবী মহানায়কদের’ তাঁদের ‘ঐতিহাসিক’ ভূমিকার স্বীকৃতি দিচ্ছে না, বরং তথাকথিত গোলটেবিল বৈঠকে তাদের গলা বাজিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তা আমার বোধগম্য নয়।
ভারতকে স্বাধীনতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর গান্ধী-জিন্না তথা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগকে একটা সমঝোতায় আনার জন্য ব্রিটিশ সরকার তিন সদস্যবিশিষ্ট ক্রিপ্স মিশন ভারতে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা কংগ্রেস ও লীগের নেতাদের একটা সমঝোতায় আনার জন্য বহু চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এই মিশনের নেতা মি. স্টাফোর্ড ক্রিপ্স নিজে স্বীকার করেন ‘আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’ পরবর্তীকালে এই মিশনকে ব্যর্থ ক্রিপ্স মিশন বলে ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে ক্রিপ্স সাহেব বা তার মিশনের কোন সদস্য আপত্তি বা উষ্মা প্রকাশ করেননি বা আকবর আলি খানের মতো দাবি করেননি, পরবর্তীকালে ভারত যে স্বাধীন হয়েছে সেটা আমাদের মিশনের ভারত গমনের ফল। আমাদের মিশন ব্যর্থ হয়নি। স্যার স্টাফোর্ড ক্রিপ্স একজন সত্যিকারের বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিক ছিলেন বলেই এই ধরনের উদ্ভট ও হাস্যকর দাবি করেননি।
বস্তুত ভারত স্বাধীন হয়েছে ক্রিপ্্স, ওয়াডেল, কেবিনেট মিশন ইত্যাদি মিশনের ব্যর্থতা এবং ভারতব্যাপী ব্রিটিশবিরোধী গণআন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠার ফলে। বোম্বাইয়ে হয় নৌবিদ্রোহ। ভারতব্যাপী হয় ডাক তার ধর্মঘট। দেশ অচল হয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আপাদ হিন্দ ফৌজের ধৃত অফিসারদের ব্রিটিশ আদালতে বিচারের আয়োজনে সারাভারতে গণআন্দোলনে ব্রিটিশ সিংহের হৃদয়ে কম্পন শুরু হয়। দিল্লী থেকে ইংরেজ ভাইসরয় লন্ডনে প্রধানমন্ত্রীকে লেখেন, ‘ভারতে আমরা এক ভয়ানক বিস্ফোরণোন্মুখ অগ্নিগিরির মাথায় বসে আছি। তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করুন।’ ব্রিটিশ সরকার লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে দিল্লীতে ভাইসরয় হিসেবে পাঠিয়ে ভারত-ভাগ দ্বারা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। এই ব্যাপারে আগের মিশনগুলোর ভূমিকা ছিল না মোটেই।
বাংলাদেশে ২০০৮ সালে যে সেনা তাঁবেদার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর দেশবাসীর কাঁধে সিন্দবাদের দৈত্যের মতো চেপে বসে থেকে অবশেষে দুই নেত্রীকে মুক্তি এবং একটি বহুদলীয় নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য হয়েছিল, তা পূর্ববর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার থেকে আরাম কেদারায় বসা এক সাবেক আমলা ও তাঁর তিন সহযোগীর পদত্যাগের কারণে নয়। তারাও বুঝতে পেরেছিল, তাদের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় এবং দেশে মইন-ফখরুদ্দীন সরকারের বিরুদ্ধে গণঅসন্তোষ ধূমায়িত হচ্ছে। এই গণঅসন্তোষের লক্ষণ টের পেয়ে আমেরিকা ও ভারতসহ পশ্চিমা কতিপয় দেশ সেনা তাঁবেদার সরকারের ওপর প্রচ- চাপ সৃষ্টি করছিল অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান ও গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য। জাতিসংঘ তো পরোক্ষভাবে হুমকিই দিয়েছিল যে, বাংলাদেশের সামরিক কর্তারা ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে কর্মরত অসংখ্য বাংলাদেশী সৈন্য ও সেনা কর্তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরপর ‘আমরা পদত্যাগ না করলে ওনাদের (হাসিনাদের) ক্ষমতায় আসা হতো না এই ধরনের উক্তি হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল’ কাব্যোক্তিই মনে পড়িয়ে দেয়। সিএফএসডির গোলটেবিল বৈঠকে আমাদের এই আমলা-আঁতেল আরও অনেক কথা বলেছেন, যা নিয়ে আলোচনা করা কালি কলমের অপচয়। তিনি নিরপেক্ষতার ভান করলেও আসলে কোন্ শিবিরের লোক তা বোঝা যায়, যখন তিনি বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা ও সরকারের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থাকে প্রাধান্য দেয়াকে এক পাল্লায় তুলে ধরেন। বিএনপির নির্বাচন সংক্রান্ত ঘোষণা একটি দলীয় সিদ্ধান্ত আর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি জাতীয় ঐকমত্যের সিদ্ধান্ত। এই জাতীয় ঐকমত্যের সঙ্গে আকবর আলি খানদের মতো সাবেক আমলা এবং বর্তমানের হঠাৎ গজিয়ে ওঠা আঁতেল-ছায়াপি-দের একাত্মতা আদৌ আছে কিনা সে সম্পর্কেও আমার মনে সন্দেহ আছে।
লন্ডন : ৯ জানুয়ারি, বুধবার,॥ ২০১৩

No comments

Powered by Blogger.