পবিত্র কোরআনের আলো-ওহি ছাড়া হজরত মুহাম্মদ (সা.) নূহ (আ.)-এর কাহিনী জানলেন কী করে?

৩২. ক্বা-লূ ইয়া-নূহু ক্বাদ জা-দালতানা- ফাআকছারতা জিদা-লানা- ফা'তিনা বিমা- তায়ি'দুনা- ইন কুনতা মিনাছ্ ছ্বা-দিক্বীন। ৩৩. ক্বা-লা ইন্নামা- ইয়া'তীকুম বিহিল্লা-হু ইন শা-আ ওয়া মা আনতুম বিমু'জিযীন।
৩৪. ওয়া লা ইয়ানফাউ'কুম নুছহ্বী ইন আরাদ্তু আন আনছাহ্বালাকুম ইন কা-নাল্লা-হু ইউরীদু আন ইয়্যুগভিয়াকুম; হুয়া রাব্বুকুম; ওয়া ইলাইহি তুরজাঊ'ন।
৩৫. আম ইয়াক্বূলূনাফ্তারা-হু; ক্বুল ইনিফ্তারাইতুহূ ফাআ'লাইয়্যা ইজরা-মী ওয়া আনা বারীউম্ মিম্মা- তুজরিমূন। [সুরা : হুদ, আয়াত : ৩২-৩৫]
অনুবাদ : ৩২. নূহের কওমের নেতারা বলল, হে নূহ, আপনি আমাদের সঙ্গে তর্ক করছেন, অনেক বেশি তর্ক আপনি আমাদের সঙ্গে করে ফেলেছেন। এখন আপনার কর্তব্য হলো, যে বিপদের ভয় আপনি আমাদের দেখাচ্ছেন তা হাজির করে দেখানো, যদি আপনি সত্যবাদী হয়ে থাকেন।
৩৩. নূহ বললেন, তা তো আল্লাহ হাজির করবেন যদি তিনি চান। আর তোমরা তা কিছুতেই ফেরাতে পারবে না।
৩৪. আমি তোমাদের কল্যাণ কামনা করতে চাইলেও আমার উপদেশ তোমাদের কোনো উপকারে আসবে না, যদি আল্লাহ তোমাদের (তোমাদের কর্মফলের কারণে) বিভ্রান্তিতেই ফেলে রাখতে চান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তাঁরই কাছে তোমাদের সবাইকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
৩৫. তারা যদি বলে যে মুহাম্মদ (সা.) এ কিতাব নিজে রচনা করেছেন? (হে নবী!) আপনি বলে দিন, আমি এটা রচনা করে থাকলে (এ প্রতারণার) অপরাধের দায় আমার ওপরই বর্তাবে। (অন্যথায় তোমরা আমার ওপর অপবাদ দিয়ে) তোমরা যে অপরাধ করছ, সে ব্যাপারে আমি দায়মুক্ত।
ব্যাখ্যা : ৩২-৩৪ নম্বর আয়াতে আগের আলোচনার ধারাবাহিকতায় হজরত নূহ (আ.) ও তাঁর কওমের অবাধ্য গোত্রপতিদের কথোপকথন বর্ণনা করা হয়েছে। অবাধ্য গোত্রপতিরা নূহ (আ.)-কে শাস্তির হুমকি না দিয়ে বরং ক্ষমতা থাকলে শাস্তি হাজির করার কথা বলে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছিল। তারা এর জবাব পেয়েছিল, সে ইঙ্গিত এখানে আছে। ৩৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহই যদি তোমাদেরকে বিভ্রান্তিতে নিমজ্জিত করে রাখতে চান বলতে বোঝানো হয়েছে তারা যদি ধৃষ্টতা, অবাধ্যতা ও জেদের কারণে নিজেদের বিভ্রান্ত করে রাখতে চায়, তবে এটাকেই আল্লাহ তায়ালা নিজ ফায়সালা হিসেবে সাব্যস্ত করে দেন। মানুষের নিজ নিজ কর্মের দ্বারাই আল্লাহ তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করেন।
৩৫ নম্বর আয়াতটি একটি ব্যতিক্রম ও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হজরত নূহ (আ.)-এর ঘটনার বিবরণের মাঝখানে এ আয়াতটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রথমত, ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনার প্রসঙ্গ ধরে সমকালীন মূল বিষয়টাকে স্পর্শ করা হলো। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নটা আসে, প্রাগৈতিহাসিক যুগের নূহ (আ.)-এর ঘটনা যে এখানে বর্ণনা করা হচ্ছে তা হজরত মুহাম্মদ (সা.) জানলেন কিভাবে? বলা বাহুল্য, এ জ্ঞান লাভের জন্য তাঁর ওহি ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যম নেই। এটা এ বিষয়ের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ যে কোরআন নিঃসন্দেহে আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ, এটা মুহাম্মদ (সা.)-এর রচনা নয়। এ সত্ত্বেও আরবের কাফেররা যে এ সত্যটা অস্বীকার করার চেষ্টা করছে, এর কারণ তাদের জেদি মানসিকতা এবং সত্যকে উপলব্ধি করতে না পারার মতো ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.