কিরচনারের খোলা চিঠি ক্যামেরনকে-ফকল্যান্ডসের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার আহবান

ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে আবারও মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে আর্জেন্টিনা ও ব্রিটেন। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ক্রিস্তিনা ফারনান্দেজ কিরচনার এক খোলা চিঠিতে এই দ্বীপপুঞ্জের নিয়ন্ত্রণ তাঁদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, দ্বীপবাসীর স্বার্থরক্ষায় 'সম্ভব সব কিছুই' করবেন তিনি।
ব্রিটেন ১৮৩৩ সাল থেকে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ শাসন করছে। নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে ১৯৮২ সালে আর্জেন্টিনা ওই অঞ্চলে হামলা চালালেও সফল হতে পারেনি। এ সময় থেকেই ব্রিটিশ সেনা মোতায়েন রয়েছে দ্বীপপুঞ্জে। আর্জেন্টিনাও এ অঞ্চলের দখল ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েনি।
কিরচনারের চিঠিটি বিজ্ঞাপন আকারে ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে গতকাল বৃহস্পতিবার ছাপা হয়। চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট বলেন, '১৮০ বছর আগে আজকের দিনে (৩ জানুয়ারি) ব্রিটিশ বাহিনী মালভিনাস দ্বীপপুঞ্জ (আর্জেন্টিনায় এই নামেই পরিচিত ফকল্যান্ডস) থেকে আর্জেন্টিনার বাহিনীকে বের করে দেয়।' একে ব্রিটেনের ঊনবিংশ শতাব্দীর স্থূল ঔপনিবেশিক দখলদারির চর্চা হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, লন্ডন থেকে এই দ্বীপপুঞ্জের দূরত্ব ১৪ হাজার কিলোমিটার। তিনি আরো বলেন, এরপর আর্জেন্টিনা প্রজাতন্ত্রের কাছে আর এই দ্বীপপুঞ্জ ফিরিয়ে দেয়নি ব্রিটেন।
কিরচনার ১৯৬৫ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া একটি প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, এতে ফকল্যান্ডস সমস্যা সমাধানে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার কথা বলা হয়েছে। জাতিসংঘের এ প্রস্তাব মেনে নিয়ে আলোচনার জন্য ব্রিটেনের প্রতি আহ্বান জানানোর মধ্যে দিয়ে চিঠিটি শেষ করেন কিরচনার।
তবে কিরচনারের এ চিঠির ব্যাপারে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ক্যামেরনের এক মুখপাত্র বলেন, ফকল্যান্ডসবাসী 'স্পষ্টভাবে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবেই থাকতে চায়'। তারা চায়, তাদের স্বার্থরক্ষিত হোক। আর্জেন্টিনার উচিত তাদের আত্মপরিচয় নির্ধারণের অধিকারকে সম্মান জানানো। তিনি আরো বলেন, ফকল্যান্ডসবাসীর স্বার্থরক্ষায় সম্ভব সব কিছুই করবেন ক্যামেরন। প্রসঙ্গত আগামী মার্চে দ্বীপপুঞ্জের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ গণভোটের ফল মেনে নেওয়ার জন্য আর্জেন্টিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একই মনোভাবের কথা জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, 'এই বিবাদের তিনটি পক্ষ রয়েছে।
ব্রিটেন, আর্জেন্টিনা ও ফকল্যান্ডসবাসী। আর্জেন্টিনার দাবি অনুসারে, পক্ষ মাত্র দুটি নয়। পুরো বিষয় থেকে দ্বীপবাসীদের একেবারে মুছে ফেলা যায় না।'
সামরিক গোয়েন্দাবিষয়ক মাসিক সাময়িকী জেনস ইন্টেলিজেন্স রিভিউয়ের উপসম্পাদক রবার্ট মঙ্কস বলেন, 'কিচরনারের এ ধরনের চিঠি নতুন কিছু নয়। গত বছরও প্রায় একই ধরনের বিজ্ঞাপন দিয়েছিল তারা। ২০০৩ সালে আর্জেন্টিনায় কিরচনারের স্বামী নেস্তর কিরচনার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ব্রিটেনের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। বর্তমানে এ সম্পর্ক সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে। সশস্ত্র সংঘাত শুরুর মতো পরিস্থিতি না হলেও নব্বইয়ের দশকের পর থেকে আর্জেন্টিনা দুই দেশের মধ্যে সই হওয়া বেশ কয়েকটি চুক্তি থেকে বের হয়ে গেছে।' সূত্র : বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.