প্রয়োজন দ্রম্নত তিসত্মার পানি চুক্তি স্বদেশ রায়

পর পর দু'দিনে দুটি সাংবাদিক সম্মেলন দেশের মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রথমেই সাংবাদিক সম্মেলন দুটি একই দিনে হবে বলে জানানো হয়েছিল। বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলন হবার কথা ছিল শনিবার বিকেল তিনটা ৩০ মিনিটে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাংবাদিক সম্মেলন বিকেল চারটায়।
শনিবার বিকেল নাগাদ জানানো হয়, বেগম জিয়া তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন একদিন পিছিয়ে দিয়েছেন। বেগম জিয়ার এই সাংবাদিক সম্মেলন পিছিয়ে দেয়ার পরে অনেকে তাৎণিক মনত্মব্য করেন, বেগম জিয়া একদিন অপো করছেন মূলত শেখ হাসিনার বক্তব্যর উত্তর দেবার জন্য। তবে বেগম জিয়া বা তাঁর দল থেকে বলা হয়নি কেন সাংবাদিক সম্মেলনটি পিছিয়ে দেয়া হলো। এ ছাড়া দুই দলের কেউই বলেননি এই সাংবাদিক সম্মেলন কী উপল।ে তবে দেশের মানুষ বা বিশেষ করে সচেতন সকলে ধরে নিয়েছিলেন, এই সাংবাদিক সম্মেলন হবে শেখ হাসিনার সামপ্রতিক ভারত সফরকে কেন্দ্র করে।
শেখ হাসিনা গত ১০ থেকে ১৩ জানুয়ারি ভারত সফর করেন। এই সফরটির দুটি অংশ ছিল_ এক, ভারত সরকারের সঙ্গে দু' দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে কথা বলা। দুই, শেখ হাসিনার ইন্দিরা গান্ধী শানত্মি পুরস্কার গ্রহণ। কিন্তু সফরের বেশ কয়েকদিন আগে থেকে প্রথমে ভারতীয় কিছু সংবাদপত্র পড়ে ভারত ও বাংলাদেশের সংবাদপত্র এমনভাবে লেখালেখি শুরম্ন করে- যা দ্রম্নত দৃশ্যপট বদলে দেয়। ভারত ও বাংলাদেশে ক্রমেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠতে থাকে যে, শেখ হাসিনার এই সফর এই দু' দেশের ভিতরের এ যাবতকালের সব থেকে গুরম্নত্বপূর্ণ সফর। শেখ হাসিনার এ সফর এ যাবতকালের ভিতর দু' দেশের ভিতরের সব থেকে গুরম্নত্বপূর্ণ সফর না হলেও সামপ্রতিক কালের সব থেকে গুরম্নত্বপূর্ণ সফর তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কারণ দীর্ঘদিন পরে ভারত ও বাংলাদেশের দুই সরকারপ্রধানের দেখা হয়, যে দুই সরকারপ্রধানের রয়েছে অনেক বড় জন-ম্যান্ডেট এবং দুই দেশেরই মতাসীন দুটি দল প্রগতিশীল গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তা ছাড়া সামপ্রতিক বিশ্বের অন্যতম বড় সমস্যা সন্ত্রাসবাদের বিরম্নদ্ধে এ দুটি মতাসীন দলের রাজনৈতিক অবস্থান একই সমতলে। তাই দু'দেশের ভিতরে এতদিনে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস দানা বেঁধে উঠেছিল সেটার বরফ অনেক সহজে গলা সম্ভব বর্তমানে। দু'দেশের মিডিয়ার দায়িত্বশীল অংশ এটাই প্রকাশ করেছিল। মিডিয়ার এই প্রচারে শেখ হাসিনার ইন্দিরা গান্ধী শানত্মি পুরস্কার গ্রহণের বিষয়টি পিছে পড়ে যায়। অনেক বেশি সামনে চলে আসে শেখ হাসিনার এই সফর এ দু'দেশের সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যাবে?
বর্তমানের যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তাই এ সফরের প্রায় সব কিছুই দু'দেশের জনগণ জানতে পেরেছে প্রতিমুহূর্তে। এ নিয়ে নতুন করে খুব কিছু জানানো এবং সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে কোন দলের কোন প্রতিক্রিয়া দেবার বেশি অবকাশ ছিল না। তারপরও সাংবাদিক সম্মেলন দুটি আহ্বান করার পরে সকলে বলতে শুরম্ন করেন এ সাংবাদিক সম্মেলন শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করে এবং সেটা যে আমাদের সাংবাদিকদের চিনত্মার ভিতরেও তার প্রকাশ ঘটে শেখ হাসিনার সাংবাদিক সম্মেলনে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে লিখিত বক্তব্য সাংবাদিক সম্মেলনে পড়েন সেটা থেকে কিন্তু স্পষ্ট হয়, শেখ হাসিনার এ সাংবাদিক সম্মেলনের উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর সরকার গত এক বছরে পররাষ্ট্র েেত্র কি কি করেছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পারস্পরিক অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক কতটুকু উন্নত করতে পেরেছে। শেখ হাসিনার বক্তব্যে এক বছরজুড়ে তাঁর সরকারের পররাষ্ট্র েেত্রর কর্মকা-ে থাকলেও সাংবাদিকরা কিন্তু সেটার গুরম্নত্ব দেননি। তাঁরা প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়েই কিন্তু প্রশ্ন করতে থাকেন শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে। কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলনের দেনা-পাওনা বা আমাদের সৌদি শ্রমবাজার নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেননি। সকলেরই প্রশ্ন, ভারত সফরের ভিতর সীমাবদ্ধ ছিল। এর অর্থ এমনই দাঁড়িয়েছিল, শেখ হাসিনা যতই তাঁর সাংবাদিক সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্যকে এক বছরের পররাষ্ট্র েেত্রর সাফল্য সম্পর্কে অভিহিত করায় নিয়ে যেতে চান না কেন, আমরা সাংবাদিকরা সেটাকে ভারত সফরউত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে পরিণত করতে সমর্থ হই। বিষয়বস্তু ভারত সফরের ভিতর সীমাবদ্ধ করে ফেলতে সমর্থ হই। অন্যদিকে বেগম জিয়া পরদিন যে সাংবাদিক সম্মেলন করেন, সেখানেও বেগম জিয়া লিখিত বক্তব্য পড়েন শেখ হাসিনার মতো। তবে ওই লিখিত বক্তব্যে, বেগম জিয়া শেখ হাসিনার সরকারের এক বছরের পররাষ্ট্র নীতির ব্যর্থতা তুলে ধরেননি। বা জবার দেননি শেখ হাসিনার এক বছরের সফলতার দাবির। এমনকি শেখ হাসিনা সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রমবাজার টিকিয়ে রাখতে সমর্থ হয়েছেন, না ব্যর্থ হয়েছেন_ এ নিয়েও তিনি কোন কথা বলেননি। তিনি শুধু ভারত সফরে শেখ হাসিনা বা তাঁর সরকার কতটা ব্যর্থ হয়েছে, সেটা তুলে ধরেন। এমনকি বেগম জিয়ার বক্তব্য আরও একটু বিশেস্নষণ করে কেউ যদি বলেন, বেগম জিয়ার বক্তব্যের মূল উদ্দেশ্য ভারত কতটা আগ্রাসী বাংলাদেশের প্রতি সেটা তুলে ধরা_ তাও সত্য মনে হবে।
তাই দেখা যাচ্ছে, শেখ হাসিনা সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর সরকারের এক বছরের পররাষ্ট্র েেত্র অর্জিত সাফল্য তুলে ধরার চেষ্টা করলেও সাংবাদিকরা সেটাকে ভারত সফরউত্তর সাংবাদিক সম্মেলনে পরিণত করেন। অন্যদিকে বেগম জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনটি করেন শেখ হাসিনার ভারত সফরকে ঘিরে। এমনকি বেগম জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে যে বক্তব্য রেখেছেন তাতে এটাও স্পষ্ট হয়েছে, বেগম জিয়া শেখ হাসিনার এই ভারত সফরকে তাঁর রাজনৈতিক ইসু্যতে পরিণত করতে চাচ্ছেন। তিনি পাকিসত্মান আমলের মতো বা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরবর্তী রাজনীতির মতো রাজনীতিতে ভারতবিরোধিতা আমদানি করতে চাচ্ছেন। এ কাজে বেগম জিয়া কতটা সফল হবেন, সেটা অনেক পরের বিষয়। তবে এটা ঠিক যে, বেগম জিয়ার দল বা বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠী যদি ভারতবিরোধিতাই তাদের রাজনীতির মূল করতে চান, সেটা তাদের জন্য ভুল হবে। এটা বিএনপির শিতি উদার অংশকেও খুশি করবে না। কারণ বিএনপির শিতি উদার অংশের সঙ্গে কথা বলে এটা জানা যায় যে, তাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের প্রতিপ ভারত নয়, আওয়ামী লীগ। এবং দুটোই বাসত্মবতা। বিএনপিকে যেমন মানতে হবে ভারত তাদের প্রতিবেশী, তাকে তারা অস্বীকার করতে পারবে না। তেমনি আওয়ামী লীগও বাংলাদেশের সব থেকে বড় প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তি। তাই রণশীল বা ডানপন্থী দল হিসেবে বিএনপির প্রতিপ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত নয়। '৪৯-এর পরে মুসলীম লীগও একই ভুল করে। তারা কমিউনিস্ট পার্টি ও আওয়ামী লীগকে তাদের প্রতিপ মনে না করে ভারতকে তাদের প্রতিপ মনে করে। এবং ভারতবিরোধী রাজনীতি দিয়ে তারা আওয়ামী লীগ বা কমিউনিস্ট পার্টিকে মোকাবেলা করতে গিয়ে জনসমর্থন হারিয়ে ফেলে। এ েেত্র আওয়ামী লীগকে প্রতিপ মনে না করে ভারতকে প্রতিপ মনে করলে বিএনপি ছায়ার দিকে দৌড়াবে। এক পর্যায়ে মানুষের সমর্থন হারাবে। বেগম জিয়া সাংবাদিক সম্মেলনে দেয়া লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে যেভাবে ভারতকে প্রতিপ করেছেন তাতে এটা স্পষ্ট, বিএনপি রাজনৈতিক ইসু্য খুঁজে পাবার জন্য এখন ছায়ার পিছনে দৌড়াচ্ছে।
রাজনীতিতে কোন কোন দল এমন ছায়ার পিছনে অনেক সময় দৌড়ায়। বিশেষ করে নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচী ছাড়া যদি কোন গোষ্ঠী রাজনীতি করতে যায় তারা এমন ছায়ার পিছনে মাঝে মাঝে দৌড়ায়। কখনও কখনও তারা মানুষকে ছায়া দেখিয়ে ভুল বোঝাতে সম হয়। কিন্তু বার বার পারে না। যেমন ভারতে রামের রথযাত্রা করে আদভানিরা মতায় গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর সে রথে চাকা নেই। বাংলাদেশেও ভারতবিরোধিতার বেলুন এখন আর খুব বেশি ফুলবে না। তাতে খুব বেশি বাতাস ঢোকানো সম্ভব হবে না। তাই শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরে তাঁর সফরের নিট ফল বাদ দিয়ে যতই দুই সাংবাদিক সম্মেলন সামনে আসুক না কেন, এর গুরম্নত্ব খুবই কম। বরং এখন বাংলাদেশের জন্য সব থেকে গুরম্নত্বপূর্ণ হলো, দু'দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী যে সমঝোতায় এসেছে সেগুলো বাসত্মবে কীভাবে এবং কত দ্রম্নত রূপ নেবে। ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকার যে ৫০ দফা সমঝোতা স্মারকে সই করেছে এর বাসত্মবে রূপ দেয়ার দায়িত্ব দু'দেশের ওপর পড়লেও এখানে বড় ভূমিকা ভারতের। যেমন এই যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে, সেখানে দুটো বিষয় ভারতের দিক থেকে বড় পরিবর্তন বলে ধরা পড়েছে। ভারত অনেকখানি হলেও গুজরাল ডকট্রিনের প্রকাশ ঘটিয়েছে। অর্থাৎ ভারতের যে স্বাভাবিক পররাষ্ট্রনীতি ছিল প্রতিবেশী ছোট দেশগুলোকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করা, সেখান থেকে গুজরালের আমলে যে মর্যাদাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটেছিল এবার আবার সেটা ঘটেছে। প্রতিবেশীকে মর্যাদা দিয়ে তার সমস্যা ভারত উপলব্ধি করেছে_ এমন প্রকাশ ঘটেছে এই সমঝোতা স্মারকে। শুধু তাই নয়, একটি বড়মাপের ঋণ দিয়ে ভারত এটাও প্রকাশ করল যে, তারা এখন একটি আঞ্চলিক বড় অর্থনৈতিক দেশ। ভারতের এই আঞ্চলিক বড় অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর তার সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনীতি যা হবার দরকার সেটা কিন্তু বাংলাদেশ সঠিক পথে করেছে। বলা যেতে পারে, হাসিনা-দীপু মনির কূটনীতি যে অর্থনৈতিক কূটনীতি সেটার যথার্থ প্রয়োগ বাংলাদেশ করেছে। বাংলাদেশে অবশ্য এই অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রবক্তা শেখ হাসিনা-সামাদ আজাদ। ১৯৯৬ সালে যখন এটা শুরম্ন হয়, সেই থেকে এটা এগিয়ে নিতে পারলে এতদিনে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আরও বড় জায়গায় থাকত। মাঝখানের সাত বছরের বিচ্ছিন্নতা ও জঙ্গীবাদ বাংলাদেশকে সেখান থেকে পিছিয়ে দিয়ে গেছে অনেক। যা হোক, সেই কালো অতীত কাটিয়ে এগিয়ে যাবার জন্য দেশের কূটনীতিতে সব থেকে বড় যে প্রয়োজনটি ছিল, সেটা হচ্ছে যোগসূত্র গড়ে তোলা হওয়া। বাংলাদেশকে যেমন প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক যোগসূত্র তৈরি করতে হবে, তেমনি তাকে যোগসূত্র তৈরি করতে হবে নিকট সব প্রতিবেশীর সঙ্গে। সমঝোতা স্মারকে ভুটান ও নেপালকে ভারতের ভিতর দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেবার ভিতর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ যোগসূত্রতায় অনেকখানি এগিয়েছে। বাংলাদেশকে এখন যেমন মিয়ানমারের ভিতর দিয়ে চীনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে, তেমনি ভারতের ভিতর দিয়ে নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে। এমনকি তাকে আফগানিসত্মানের সঙ্গেও যুক্ত হতে হবে। বিশ্বায়নের এই অর্থনীতিতে এ ছাড়া দ্বিতীয় কোন পথ খোলা নেই। হাসিনা-মনমোহন সমঝোতায় এর ইঙ্গিত আছে এবং ইচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে। এখন একে বাসত্মবে রূপ দেবার জন্য ত্রে প্রস্তুত করতে হবে, পথ তৈরি করতে হবে। এই পথ প্রস্তুত করার েেত্র এখন বল কিন্তু ভারতের কোটে। কারণ বাংলাদেশের সামনে এখন দুটি সমস্যা বড়। প্রথমত পরিবেশগত যে ঝুঁকিতে বাংলাদেশ পড়েছে এই ঝুঁকি কাটিয়ে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে। আবার বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ এখন যে পরিবেশগত ঝুঁকিতে পড়েছে এর সবটুকু মানুষের সৃষ্টি। বাংলাদেশের দণি অঞ্চল এখন সমুদ্রের পানির ঝুঁকিতে। একদিকে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে পৃথিবীর সব থেকে বেশি সংখ্যক মানুষ বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হবে শুধু নয়, ইতোমধ্যে হতে শুরম্ন করেছে। অন্যদিকে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে সমুদ্রের পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়া ও সেই লবণ প্রবেশ করায় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল হারাচ্ছে, বন, ফসল, প্রাণী সব। আবার এর বিপরীতে মানুষের তৈরি পরিবেশগত সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকা মরম্নভূমির ঝুঁকিতে পড়েছে। এর বড় কারণ, ভারত তিসত্মার পানি প্রত্যাহার করছি। তিসত্মার অতি সামান্য পানি বাংলাদেশ পায়। নায্য হিস্যা অনুযায়ী পানি যে বাংলাদেশ পায় না, এ নিয়ে কোন দ্বিমত কারও নেই। তাই বাংলাদেশ-ভারত যে সহযোগিতার ভিতর দিয়ে এগিয়ে যেতে চায়, এর প্রকাশ ঘটাতে গেলে ভারতকে দ্রম্নত এই তিসত্মার পানি সমস্যার সমাধান করতে হবে। যদি সত্যি সত্যিই সমঝোতা স্মারক দুই সরকারপ্রধানের ইচ্ছার বহির্প্রকাশ হয়, তাহলে কিন্তু এখন আর তিসত্মা পানি বণ্টন খুব বড় সমস্যা নয়। কারণ যে হাইড্রোলিক জরিপের কথা বলা হচ্ছে, ১৫ বছরের তথ্যউপাত্ত নিয়ে সেটা খুব কঠিন কাজ নয়। ভারত ও বাংলাদেশে অনেক বিশেষজ্ঞ আছেন যাঁরা দীর্ঘদিন এ নিয়ে কাজ করছেন তাঁদের সহযোগিতা নিলে অতি দ্রম্নতই এ কাজ সম্ভব। এখন এখানে একটি ভয় সকলের ভিতর কাজ করছে। কারণ, অতীতের অভিজ্ঞতা বলে ভারতের বু্যরোক্রেসির আঙ্গুলের ফাঁক গলিয়ে কখনই পানি আসে না। এই বু্যরোক্রেসি কি ব্যবহার করবে। অতীতের মতো যদি তিসত্মার পানি বু্যরোক্রেসির প্যাঁচে পড়ে যায়, তাহলে এই সদিচ্ছার প্রকাশ_ এই সঠিক সমঝোতায় পেঁৗছানো আসলে অর্থহীন হয়ে পড়বে। তবে এটাও ঠিক, বু্যরোক্রেসি সব সময় পানির মতো। যখন যে পাত্রে রাখবে ওই পাত্রের আকার ধারণ করবে। এর ব্যতিক্রমের সংখ্যা ও উদাহরণ কম। সাদ্দামের বু্যরোক্রেসি দিয়েই কিন্তু এখন আমেরিকা ব্যাকড সরকার চলছে। তাই তিসত্মার পানি নিয়ে ভারতের বু্যরোক্রেসি কি ব্যবহার করবে, সেটা নির্ভর করছে ওই দেশের সরকারের রাজনৈতিক ইচ্ছার ওপরে। ভারত ও বাংলাদেশ সরকারপ্রধান যে সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন এর বাসত্মবতা যে সুন্দর পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবে_ এটা বোঝাতে হলে ভারতকে অবিলম্বে তাই বু্যরোক্রেসির বেড়াজাল ভেঙ্গে রাজনৈতিক ইচ্ছা দিয়ে তিসত্মার পানি বণ্টন চুক্তি করতে হবে। আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগেই যাতে এ চুক্তি হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সমঝোতা স্মারকে আছে_ এ বছরের প্রথম তিন মাসের ভিতর মন্ত্রীপর্যায়ে বৈঠক হবে। অর্থাৎ আগামী মার্চ মাসের ভিতর এ বৈঠক হবে। বাংলাদেশের পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী ছিলেন। তিনি ফিরে এসে বলেছেন, আগামী ফেব্রম্নয়ারি মাসেই এ বৈঠক হবে।
এখন দুই দেশকে এটা নিশ্চিত করতে হবে, এ বৈঠক যেন আরও একটি বৈঠক করার প্রস্তুতি বৈঠক না হয়। মন্ত্রীপর্যায়ে বৈঠক যেন তিসত্মার পানি চুক্তির জন্যই হয়। তাই আগামী ফেব্রম্নয়ারি মাসে মন্ত্রীপর্যায়ে এ বৈঠক হবার আগেই দুই দেশের মিলিত উদ্যোগে যাতে তিসত্মার হাইড্রোলিক জরিপ শেষ হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সেভাবেই দ্রম্নতগতিতে কাজ করতে হবে। দ্রম্নতগতিতে কাজ করে যদি ফেব্রম্নয়ারির মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠকে তিসত্মার পানির একটি যথাযথ চুক্তি করা সম্ভব হয়, তাহলে দেখা যাবে পরিবেশ দ্রম্নত বদলে গেছে। অন্যান্য সমঝোতা তখন দ্রম্নত হবে, তেমনি এ এলাকার মানুষ বিশ্বাস করতে শুরম্ন করবে ভারত আসলে বড় শক্তি, তার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগসূত্র প্রয়োজন।
অনেকে হয়ত মনে করতে পারেন, কূটনীতিতে কখনও একের জন্য দুই বসে থাকে না। একের দেরি হলে এক বসে থাকে, দুই এগিয়ে যায়। সে হিসেবে বাংলাদেশ এখন যে আঞ্চলিক সহযোগিতার পথে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে তিসত্মার পানি সমস্যা মেটাতে যদি কিছুটা দেরি হয় তা হোক, অন্য সমস্যার সমাধান এগিয়ে চলুক। এগিয়ে চলুক নেপাল বা ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য। কূটনীতির বিজ্ঞানে এর যৌক্তিকতা আছে। কিন্তু এটাও সত্য, রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটালে তিসত্মার পানি সমস্যার সমাধান শক্ত কিছু নয়। আগামী শুস্ক মৌসুমে এই সমস্যার সমাধান যদি রাজনৈতিক সদ্দিচ্ছার দ্বারা হয়, তাহলে এটাও প্রমানিত হবে যে, রাজনৈতিক সদ্দিচ্ছাই সব থেকে বড় শক্তি। রাজনৈতিক সদ্দিচ্ছা মানেই কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি। রাজনৈতিক শক্তি যে সব থেকে মতাবান দনি এশিয়ার উন্নয়নের জন্যে এ সত্য প্রতিষ্ঠিত করা সবার আগে জরম্নরী।
ংধিফবংযৎড়ু@মসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.