শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া-আলোচনাতেই সমাধান চাই

দাবি-দাওয়া আদায়ে শ্রেণীকক্ষ ছেড়ে শিক্ষকদের রাজপথে নেমে আসা কতটা সমর্থনযোগ্য_ এ প্রশ্ন অনেক দেশেই ওঠে। বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। এখানে আরও একটি কঠিন বাস্তব_ স্কুল ও কলেজ শিক্ষকরা গত চার-পাঁচ দশকে যেসব দাবি আদায় করেছেন তার পেছনে রাজপথের আন্দোলনের ভূমিকা রয়েছে।


কোনো কোনো আমলে সরকার শিক্ষকদের চাওয়া-পাওয়াকে সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করেছে। আবার কখনও কখনও শিক্ষকরা হয়েছে রূঢ় আচরণের শিকার। স্বাধীনতার পরপরই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে শিক্ষক ও কর্মচারীদের সরকারি তহবিল থেকে বেতন প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ক্রমে বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন প্রদানের দায়িত্বও সরকারের ওপর বর্তায়। 'এমপিও' শব্দটি এভাবেই বহুল ব্যবহৃত হয়ে উঠেছে। দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটছে এবং নতুন যেসব শিক্ষক-কর্মচারী এগুলোতে নিয়োগ পাচ্ছেন, তাদের দাবি সরকারি তহবিল থেকে বেতন-ভাতার। এর সঙ্গে আরও দাবি বেতন-ভাতার পরিমাণ বাড়ানো। দুটি কারণে এ দাবি উঠছে_ দ্রব্যমূল্যের চাপ সামলানো এবং শিক্ষকতার পেশাকে আকর্ষণীয় করা। আমরা মনে করি, মেধাবীদের মানুষ গড়ার কারিগরের পেশায় আকৃষ্ট করতে হলে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবি যথার্থ। বর্তমান মহাজোট সরকারের সাফল্যের তালিকার শীর্ষে রয়েছে শিক্ষা খাত। সঙ্গত কারণেই শিক্ষকদের প্রত্যাশা এ সরকারের কাছে বেশি। নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করা, উৎসব ভাতা ও বাড়ি ভাড়ার পরিমাণ বাড়ানো_ এসব দাবি এখন সামনে এসেছে। মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিও গুরুত্ব পাচ্ছে। সোমবার সমকালে 'রাজপথে নামছে সব শিক্ষক সংগঠন' শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে টানা ধর্মঘট পালনে সরকার ও সরকারবিরোধী সব সংগঠন একাট্টা। এরপর দাবি আদায় না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে রাজধানীর মহাসমাবেশ থেকে। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকরা নিয়মতান্ত্রিক পথেই আন্দোলন করতে চাইছেন। তবে কোনো কোনো সংগঠন অবিরাম ধর্মঘট কর্মসূচির পক্ষে। স্কুল-কলেজের শিক্ষা কার্যক্রমে এখন বার্ষিক ক্যালেন্ডার চালু রয়েছে। প্রতি বছর ১ জানুয়ারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয় এবং তার আগেই শিক্ষার্থীদের হাতে পেঁৗছায় বিনামূল্যের নতুন বই। ডিসেম্বর শেষ হতে না হতেই সব স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়ে যায়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে যদি শিক্ষকরা দাবি আদায়ে রাজপথে থাকেন তাহলে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ হবে কীভাবে? পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশেরই-বা কী হবে? শিক্ষক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সরকার, সব পক্ষকেই এ বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। শিক্ষকদের দাবির ন্যায্যতা কমবেশি সবাই স্বীকার করবেন। আবার সরকারের সামর্থ্যও বিবেচনায় রাখতে হবে। শিক্ষা বাজেট বর্তমানের তুলনায় অনেক বাড়ানো উচিত এবং সরকারের এমন কিছু খাত রয়েছে যেখানে অপচয়-দুর্নীতি রোধ করে অর্থ বাঁচানো সম্ভব বলেই আমরা মনে করি। এ জন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা চাই। শিক্ষকরা একটানা ধর্মঘটের পথে গেলেই এ লক্ষ্য অর্জন হয়ে যাবে, এমন ধারণা ঠিক নয়। এ জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐকমত্যের প্রয়োজন রয়েছে। শিক্ষকদের দাবি সরকার আন্তরিকতার সঙ্গে বিচার করবে এবং সম্ভাব্য সব সুবিধা প্রদান করবে, এটাই চাইব। কিন্তু একই সঙ্গে শিক্ষকদের প্রতিও অনুরোধ, কোনো অবস্থাতেই যেন শিক্ষা কার্যক্রম ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা না হয়।
 

No comments

Powered by Blogger.