বলিউড আন্তর্জাতিক সুন্দরীদের প্ল্যাটফর্ম

সুন্দরীদের অভয়ারণ্য ভারতবর্ষ। এখান থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সুন্দরী বিশ্ব মাত করে দিয়েছে তাদের শারীরিক সৌন্দর্য এবং প্রখর বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। মিস ওয়ার্ল্ড, মিস ইউনিভার্স, মিস এশিয়া প্যাসিফিক কোন আসরে নেই তারা! সবগুলো আন্তর্জাতিক সুন্দরীর খেতাব তাদের ঝুঁলিতে।

খেতাবপ্রাপ্ত সুন্দরীদের কিছু কাজ করতে হয় যেটা তারা সবাই করতে বাধ্য হয়। প্রতিযোগিতার কৃতকার্য হওয়ার শর্তস্বরূপ তাদের ঘাড়ে এসব কাজের ভার বর্তায়। সেটা সমাজসেবামূলক কিংবা প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট করে দেয়া থাকে। সুন্দরীরাও খুশি মনে সেসব কাজে অংশ নেয়। কিন্তু ভারতের শক্তিশালী ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তাদের হাতছানি দিয়ে ডাকে। এই ইশারায় মুগ্ধ না হয়ে তো উপায় নেই। সুন্দরীর মুকুট মাথায় পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বলিউডে মোটামুটি তাদের আসন পোক্ত হয়ে যায়।
তবে এটাও ঠিক যে, শুধু সুন্দরীর খেতাব তাদেরকে বলিউডের ঘোড়দৌড়ে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারে না। সঙ্গে লাগে অভিনয় দক্ষতা আর বুদ্ধিমত্তা তো অতি অবশ্যই। সুন্দরীর খেতাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বলিউডের বাতাস গায়ে মাখতে উন্মুখ ছিলেন ১৯৯৭ সালের মিস ওয়ার্ল্ড ডায়ানা হেইডেন এবং ১৯৯৯ সালের মিস ওয়ার্ল্ড যুক্তামুখী। কিন্তু বলিউডকে তারা মিস ওয়ার্ল্ডের প্ল্যাটফর্মের মতো ব্যবহার করতে পারেনি। অনেক ঘোরাঘোরি করার পর ক্ষ্যান্ত দিয়েছেন দুজনেই। বলিউড এখন তাদের কাছে আঙ্গুর ফল টকের মতোই।

মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতার দুই চ্যাম্পিয়ন ১৯৯৪ সালের ঐশ্বরিয়া রাই এবং ২০০০ সালের প্রিয়াংকা চোপড়া-এই দুই সুন্দরীতমা বলিউডে সবচেয়ে সফল এবং জনপ্রিয়। তারা দুজনেই চড়াই উৎরাই পার করে নিজেদেরকে বলিউডে রাণীর আসনে বসিয়েছেন। প্রতি বছর বলিউডে তাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ছবি মুক্তি পায়। আর তাদের জনপ্রিয়তাও দিগন্তবিস্তৃত। পৃথিবীময় এই দুই সুন্দরী তাদের রূপের যাদুর জাল ছড়িয়ে রেখেছে। সেই মুগ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসার কারো কোনো উপায় নেই।

ঐশ্বরিয়া রাই যে বছর মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব পান ঠিক সে বছরই ১৯৯৪ সালে বাঙালি সুন্দরী সুস্মিতা সেন অর্জন করেন মিস ইউনিভার্স খেতাব এবং যা হবার তাই হয়। তিনি বলিউডের চোরা পথে নিজেকে সপে দেন। খেয়ালী স্বভাবের সুস্মিতা সেন নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে খুব একটা যত্নবান ছিলেন না কখনোই। বলিউড থেকে যা পেয়েছেন যেন এর চেয়ে বেশি পাওয়ার কোনো দরকার ছিল না তার। কালে-ভদ্রে মনে চাইলে একটি করে ছবি করেন। সুন্দরী সুস্মিতা সেনের যত না ফিল্মের দিকে মনোযোগ তার চেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল বয়ফ্রেন্ড পরিবর্তনের দিকে। তার বিভিন্ন বয়সী বয়ফ্রেন্ডের তালিকা খুব একটা ছোট না। তারপরেও নিপাট বাঙালি সহজাত সৌন্দর্যের অধিকারী এই সুন্দরীর হাসিতে ভুলে যায় বিশ্ব। মিস ইউনিভার্স জয়ী আরেক সুন্দরী লারা দত্তা যিনি ২০০০ সালে ভারতবর্ষকে এনে দেন তার সৌন্দর্যের শ্রেষ্ঠত্ব। লারারও অভিষেক হয় বলিউডে কিন্তু ধোপে টিকতে পারেননি। তার মানে শুধু সৌন্দর্যই জয় করতে পারেনা ভক্ত দর্শকের মন।

১৯৭০ সালে মিস এশিয়া প্যাসিফিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেছিলেন খ্যাতিমান অভিনেত্রী জিনাত আমান। রাফ অ্যান্ড টাফ এই অভিনেত্রী তার অভিনয়ের মাত্রা অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন। যেখানে তার তুলনা শুধু তিনি নিজেই। অনেকেই হয়তো অবাক হবেন যে, তিনি সেই সত্তরের দশকেই ভারতকে এই বিশাল সম্মান এনে দিয়েছিলেন। আবার অনেকে জানেনও না তার এই অর্জনের কথা। আরেক মিস এশিয়া প্যাসিফিক দিয়া মির্জা। দিয়া ২০০০ সালে এই খেতাব অর্জন করেন। এরপর তার কপালে জোটে অবধাবিত ভাগ্য বলিউড। অনেকগুলো ছবি করেছেনও, কিন্তু ওই যে ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি। তার বেশির ভাগ ছবিই ছিল ফ্লপ। এখন আর অভিনয়ে নিয়মিত দেখা যায় না এই মিস প্যাসিফিককে। সর্বশেষ এ বছর ২০১২তে মিস এশিয়া প্যাসিফিক হয়েছেন হিমাঙ্গিনী সিং যাদু। নিঃসন্দেহে বলিউড লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছে এই সুন্দরীর জন্য।

ভারতবর্ষের আরেক সুন্দরী রিতা ফারিয়া যিনি পর্দার আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। রিতা ফারিয়া ১৯৬৬ সালে মিস ওয়ার্ল্ড খেতাব জয় করেছিলেন। তিনি প্রথম ভারতবর্ষীয় নারী যিনি মিস ওয়ার্ল্ড জয় করেছেন। রিতা সে সময় মেডিক্যাল সায়েন্সে পড়তেন। সুন্দরী খেতাব পেয়েও বলিউডের দুর্দমনীয় হাতছানি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন। নিজের পেশাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। সাধারণ মানুষের নজরের একেবারে বাইরে থাকার কারণে হয়তো কেউ তাকে চেনেন না। তবে আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় রিতা বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকেন। প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতবর্ষকে।

No comments

Powered by Blogger.