করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতের তাগিদ
আদায় বাড়াতে করবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন বড় করদাতারা। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তারা বলেন, করদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে এখনও অনেক দূরত্ব রয়েছে। এ ব্যবধান ঘোচাতে না পারলে আয়কর আদায়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। এ জন্য বিদ্যমান আইন আরও সহজ করার তাগিদ দেন তারা। গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিরা এসব কথা
\বলেন। বড় কোম্পানি করদাতাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে এনবিআর।
সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন আহমেদ। এতে বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) সভাপতি পারভীন মাহমুদ, কর্মসংস্থান ব্যাংকের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান খন্দকার, এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল আমিন, ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, ইসলামী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিবুর রহমান ভূঁইয়া, মোবাইল অপারেটর কোম্পানি এয়ারটেল প্রতিনিধি এসকে মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এ সময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, চার্টার্ড অ্যকাউন্টেন্ট, আয়কর আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত সদস্য আমিনুর রহমান। এ ছাড়া আইসিএবির সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসেন কোম্পানি কর সংক্রান্ত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান তার প্রবন্ধে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জানান, প্রতি বছর অর্ধেকের কিছু বেশি কোম্পানি বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী এনবিআরে দাখিল করে। সারাদেশে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বর্তমানে এক লাখ চার হাজার ৩০০ কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজার ১৫৮টি বা ৫৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ কোম্পানির কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) আছে। অর্থাৎ এসব কোম্পানি প্রতি বছর আয়কর বিবরণী জমা দেয়। এতে বলা হয়, সারাদেশে প্রাইভেট কোম্পানি রয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৪১১টি, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির সংখ্যা এক হাজার ৭২৭ এবং বিদেশি কোম্পানি ১৬২টি। এসব কোম্পানির কাছ থেকে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা পাওয়া গেছে। সে বছর আয়কর খাত থেকে ১৭ হাজার ৪২ কোটি টাকা আদায় হয়েছে। তার প্রবন্ধে বলা হয়, মোট করদাতার মাত্র এক দশমিক ৮৪ শতাংশ কোম্পানি করদাতা। সংখ্যায় কম হলেও মোট আয়করের প্রায় ৫৬ শতাংশ আসে কোম্পানি আয়কর থেকে। এগুলো বড় করদাতা হিসেবে পরিচিত।
অন্যদিকে আইসিএবির সহ-সভাপতির মূল প্রবন্ধে বলা হয়, এনবিআর প্রতিটি কোম্পানির ২০ শতাংশ মোট লাভ ধরে করযোগ্য বলে বিবেচনা করে। কিন্তু প্রতিবছর প্রতিটি কোম্পানি ২০ শতাংশ লাভ করবে_ এটি সম্ভব নয়। আয়-ব্যয়ের হিসাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে এমন সব কাগজপত্র চায় এনবিআর যা বাস্তবসম্মত নয়। রাজস্ব আয় বাড়াতে বড় কোম্পানিকে আস্থায় আনতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দীন আহমেদ বলেন, কর সংক্রান্ত আপত্তি নিরসণে জানুয়ারি থেকে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। এতে এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা থাকবেন না। প্রস্তাবিত আইন কার্যকর হলে হয়রানি অনেকাংশে কমে যাবে। তিনি অভিমত দেন, এখনও প্রত্যক্ষ কর আদায় কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে নেই। ভবিষ্যতে আয়করই হবে রাজস্ব আদায়ের প্রধান উৎস। এ জন্য আয়কর বিভাগকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। তবে এর মানে এই নয় যে, জবরদস্তি করে আয়কর আদায় করতে হবে। আয়কর আদায় বাড়াতে হয়রানিমুক্ত করবান্ধব পরিবেশে নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, 'প্রত্যক্ষ কর আইন ২০১১ কার্যকরের মধ্য দিয়ে আয়কর খাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, এর ফলে করদাতাদের আস্থা বাড়বে।' জবরদস্তি করে কর আদায় নয় মন্তব্য করে তিনি জানান, করদাতারা স্বেচ্ছায় যাতে কর দেন_ এ দর্শনে আয়কর বিভাগ চলছে।
বড় কোম্পানিগুলোকে আস্থায় আনার পরামর্শ দিয়ে আইসিএবির সভাপতি পারভীন মাহমুদ বলেন, করবান্ধব সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এখানে চাওয়া-পাওয়ার ব্যবধান রয়েছে। করদাতা ও কর আদায়কারীর মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি না করে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। মনিরুজ্জামান খন্দকার অভিমত দেন, কোনো কোম্পানির পরিচালক ক্ষমতাধর হলে তাদের ধরা হয় না। এ সংস্কৃতি পরিহার করতে হবে। তিনি বলেন, সিএ ফার্মগুলো কী সত্যিই জানেন, সংশ্লিষ্ট কোম্পানির পরিচালক কেমন জীবন যাপন করেন? তারা কী ধরনের দামি গাড়ি চালান? হিসাব-নিকাশের সময় এসব বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। নুরুল আমিন বলেন, 'কর কর্মকর্তাদের দেখলে মনে হয়, আমরা এবারই শেষবারের মতো কর দিচ্ছি। পরে আমাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। অথচ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি সম্ভব হলেও কোম্পানির ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়।' তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের (সিএসআর) পরিধি বিস্তৃত করার আহ্বান জানান।
No comments