কামালের বক্তব্যে ক্রিকেটারদের ক্ষোভ

পুরস্কার নিতে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে কে জানত! গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে সিরিজের সাফল্যের জন্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার পূর্বঘোষিত পুরস্কার তুলে দিতে পরশু জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ডেকেছিলেন সোনারগাঁও হোটেলে। সেখানেই মুখোমুখি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল ও জাতীয় দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বোর্ড সভাপতি প্রশ্ন তুললেন খেলার প্রতি দলের ক্রিকেটারদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে। মাইক্রোফোন হাতে সাকিব পাল্টা জবাব দিলেন, ক্রিকেটারদের নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। তাঁরা শতভাগ উজাড় করে দিতেই মাঠে নামেন। এ ব্যাপারে কারও সন্দেহ থাকলে সেটা ভুল।
কাল বাংলাদেশ-ভারত দ্বিতীয় টেস্টের আগের দিনটা মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পার করল সাকিব বনাম বোর্ড সভাপতির দ্বৈরথের আলোচনা দিয়েই। জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটারই ক্ষুব্ধ বোর্ড সভাপতির বক্তব্যে। অনেকে আবার মনে করেন, এসব কথা কানে তোলাই উচিত না। সব মিলিয়ে মোস্তফা কামালের বক্তব্য প্রত্যাখ্যানই করলেন তাঁরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের এক সিনিয়র ক্রিকেটার বললেন, ‘পুরস্কার দিতে ডেকে এমন অপমান করার কোনো মানে হয় না। তা ছাড়া এর এক দিন আগে তো বোর্ড সভাপতিও প্রথম টেস্টে ভালো খেলার জন্য পাঁচ ক্রিকেটারকে পুরস্কৃত করলেন। আমরা যদি কিছু না-ই পারি তো আমাদের পুরস্কার দেওয়া কেন? আমরা তো পুরস্কার চাইনি কারও কাছ থেকে।’ অনুশীলনের ফাঁকে সভাপতির বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে দলের আরেক ক্রিকেটারের কণ্ঠে রসিকতা, ‘বিশ্বাস করেন, আমি ওনার (বোর্ড সভাপতি) কথা কিচ্ছু বুঝি না। উনি কথা শুরু করেন একভাবে, তার পর কোথা থেকে যেন কোথায় চলে যান...আমি ধরতে পারি না। এদিনও উনি কী বলেছেন, আমি আসলে বুঝিনি।’
বোর্ড সভাপতি প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে, ক্রিকেটারদের কেউ কেউ আবার প্রশ্ন তুলতে চান সভাপতি এবং বোর্ডের সামর্থ্য নিয়েই। ‘ওনারা চান প্রতিদিন আমরা ভালো খেলি, সফল হই। বোর্ডও কি সেটা সব সময় পারে? সবকিছু করতে চেয়ে পারে? বোর্ড সভাপতি তো ব্যবসা করেন। উনি কি সব সময় দেশের এক নম্বর ব্যবসায়ী থাকেন?’—বলেছেন জাতীয় দলের এক ক্রিকেটার। তবে ক্রিকেটারদের প্রতিক্রিয়ার উপসংহার হওয়ার মতো কথাটা বললেন দলের আরেকজন, ‘এসব কথা এক কানে শুনে আরেক কানে বের করে দিতে হয়। এটাই নিয়ম।’
বোর্ড সভাপতির বক্তব্যের জবাব সাকিব আল হাসান পরশু পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চেই দিয়েছেন। কাল তাঁর সেই কণ্ঠে একটু যেন পরিবর্তন, ‘আমার মনে হয় ওনার ঠিক এভাবে বলার উদ্দেশ্য ছিল না, যেভাবে তিনি বলেছেন। পরে ওনার সঙ্গে আমার আরও কথা হয়েছে। বক্তৃতায় ওনার বলার ধরনটা হয়তো একটু অন্যরকম ছিল।’ কিন্তু পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চ থেকে কাল দুপুর পর্যন্ত যে ঘটনা অনেক দূর গড়াল! সাকিব নাকি তাঁর বক্তব্যের জন্য পরশু ক্ষমাও চেয়েছেন বোর্ড সভাপতির কাছে! এই গুঞ্জনের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন সাকিব, ‘এটা সম্পূর্ণ ভুল। ক্ষমা চাওয়ার কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমি তো ক্ষমা চাওয়ার মতো কিছু বলিনি। শেষ পর্যন্ত ক্ষমাই যদি চাইব তাহলে তো তখন ওনার কথার প্রতিবাদ করতাম না। অনুষ্ঠান শেষে সভাপতি আমাকে ডেকে দ্বিতীয় টেস্টের দল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। দল পরিচালনায় অধিনায়ক হিসেবে আমার আর কী ধরনের সাহায্য লাগবে সেটা জানতে চেয়েছেন। এ ছাড়া আর কোনো বিষয়ে কথা হয়নি আমাদের।’ বোর্ড সভাপতি মোস্তফা কামালও বলছেন একই কথা, ‘মাপ চাইবে কেন? ও জাতীয় দলের অধিনায়ক, আমি বোর্ড সভাপতি—আমাদের মধ্যে তো মাপ চাওয়ার সম্পর্ক না! আমি ওর কাছে জানতে চেয়েছি, দলের ভালোর জন্য বোর্ড থেকে আর কী ধরনের সাহায্য তাকে করা যায়। সাকিব সেসব আমাকে জানিয়েছে এবং আমরা চেষ্টা করব তার সব দাবি মেটানোর।’ ঘটনাস্থলে উপস্থিত বোর্ডের সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুবুল আনামও বলেছেন, সাকিবের ‘স্যরি’ বলার মতো কিছু ঘটেনি।
সাকিব ‘স্যরি’ বলুন আর না-ই বলুন বোর্ড সভাপতির সঙ্গে তাঁর কথার যুদ্ধ দ্বিতীয় টেস্টের আগেও ফিরিয়ে আনল প্রথম টেস্টের আবহ। প্রথম টেস্টের আগে বাংলাদেশকে ‘অর্ডিনারি’ দল বলে তাতিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের সহ-অধিনায়ক বীরেন্দর শেবাগ। এবার ‘দায়িত্বশীলতা’ নিয়ে নিজেদের বোর্ড থেকে ওঠা প্রশ্নটাও কি সে রকমই কিছু দেখাবে ঢাকা টেস্টে

No comments

Powered by Blogger.