অভিমত ভিন্নমত

গৌরবের পথে বাংলাদেশের ক্রিকেট
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিজয় সত্যিই রূপকথার মতো। আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে কখনোই রচিত হয়নি এমন গৌরবময় উপাখ্যান। ২-০ তে টেস্ট সিরিজ এবং ৩-০ তে ওয়ান ডে সিরিজ জয়। বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো সাফল্যের গৌরব।
১৯৯৭ সালে বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে কেনিয়ার বিপক্ষে জয়লাভের পর সারা দেশের মানুষ আনন্দের জোয়ারে ভেসেছিল। সেদিন সমগ্র জাতি এক হয়ে রাস্তায় নেমেছিল বিজয়ের আনন্দ উপভোগ করতে। সর্বস্তরের মানুষ সেদিন নেচে-গেয়ে আর রং মেখে প্রকাশ করেছিল উচ্ছ্বাস। টাইগাররা বিশ্বকাপের প্রথম আসরে খেলতে নেমেই শক্তিশালী পাকিস্তানকে হারিয়ে নিজেদের আগমনি বার্তা জানান দিয়েছিল। কিন্তু এই জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। পরবর্তী সময়ে সাফল্য এসেছে ধীরে ধীরে। জয় এসেছে কালেভদ্রে। কিন্তু ধারাবাহিক সাফল্য দেখা দিল এই প্রথমবারের মতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর মাধ্যমে একদিনের ক্রিকেটে ইংল্যান্ড ছাড়া সব দলকেই হারাতে সক্ষম হলো বাংলাদেশ।
একমাত্র টি টোয়েন্টি ছাড়া সব ম্যাচ জিতেছে ধারাবাহিকভাবে, অর্জন করেছে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জয়ের দুর্লভ সম্মান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইট ওয়াশ করে নতুন এক ইতিহাস গড়েছে টাইগাররা। দলের এই সাফল্য নতুন করে উদ্দীপ্ত করেছে জাতিকে। এর চেয়ে বড় আনন্দের আর কি হতে পারে!
বাংলাদেশ দল নিয়ে সমর্থকদের আশাভঙ্গের বেদনা দীর্ঘদিনের। শুধু জয় নয়, ভালো খেলার ক্ষেত্রেও দলের ঘাটতি লক্ষ করা যেত। অতীতের বিভিন্ন ম্যাচ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বাজে বল খেলে আউট হওয়া, প্রতিপক্ষকে অকারণে উইকেট বিলিয়ে দেওয়া, বারবার একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করা টাইগারদের নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দলের এই বেহাল দশাকে অনেকেই রসিকতা করে বলতেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইনস্ট্যান্ট নুডলস্ তৈরির কারখানা, ‘যাওয়া-আসা মাত্র দুই মিনিট’। সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে এমন একটা বিজয়গাথা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছিল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পুরো সময়টাতেই টাইগারদের মধ্যে ছিল প্রবল আত্মবিশ্বাস। প্রতিটা ম্যাচেই ছিল তাঁদের লড়াকু মনোভাবের পরিচয়। বোলিং বা ব্যাটিং, কোনোটাতেই সুবিধা করতে দেননি ওয়েন্ট ইন্ডিজ দলকে। ধারাবাহিক সাফল্যের এই জয়যাত্রা দেশের মানুষকে যেমন আনন্দ দিয়েছে, তেমনি প্রত্যাশাও বাড়িয়েছে অনেক। নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করতে শুরু করেছে ক্রিকেটপ্রেমী সমর্থকেরা। তবে রাতারাতি খুব বড় কোনো পরিবর্তন আশা করা ঠিক হবে না। দলের এই বিজয় ইতিবাচক একটা পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে, যা আমাদের ক্রিকেটের অস্তিত্বের স্বার্থেই খুব প্রয়োজন ছিল।
ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন ব্যাটিং, বোলিং এবং ফিল্ডিং তিনটি বিষয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। তিনটির যেকোনো একটির দুর্বলতা দলের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। এই সফরের বেশির ভাগ ম্যাচেই টপ অর্ডার ব্যাটস্ম্যানরা ভালো করতে পারেননি। কিন্তু বোলাররা অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন সঠিকভাবে। ধারাবাহিক সাফল্য পেতে বোলারদের পাশাপাশি ব্যাটসম্যানদেরও ভালো পারফরম্যানস করতে হবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের কাছে শোচনীয় পরাজয়ে দারুণভাবে হতাশ হয়েছিল দেশবাসী। তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছিল ক্রিকেট আঙিনায়। মোহাম্মদ আশরাফুল অধিনায়কত্ব হারান।
বেশ কিছু দিন ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রশ্ন উঠেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের মান নিয়ে। বলতে দ্বিধা নেই, অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছিল টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। এবার তার উচিৎ জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এখন প্রয়োজন সাফল্যকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ। একটি বিজয়ের আনন্দে গা না ভাসিয়ে ভবিষ্যতে কীভাবে আরও ভালো করা যায়, সেদিকে মনোনিবেশ করা দরকার। বিগত দিনের ভুলগুলো সংশোধন করে প্রতিটা ম্যাচে নিজের সেরা খেলাটা উপহার দিতে হবে খেলোয়াড়দের। আর সেই দৃঢ় প্রত্যয়ের হাত ধরেই আসবে ধারাবাহিক বিজয়।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে প্রত্যেক ক্রিকেটার উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে। তবে বিশেষ করে বলতে হয় অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের কথা। শেষ ওয়ানডে ম্যাচটি ছাড়া পুরো সফরে অলরাউন্ড নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছেন বিশ্বের এক নম্বর অল রাউন্ডার। পুরো সফরেই তিনি ছিলেন নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বলে। মাশরাফির অসুস্থতায় পাওয়া অধিনায়কত্বের চাপ তাঁকে ভারাক্রান্ত করতে পারেনি, বরং এনে দিয়েছে অনেক ভারত্ব। দলকে প্রতিটি ম্যাচেই নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। দীর্ঘ রান-খরা কাটিয়ে আশরাফুলের রানে ফেরা ছিল এই সিরিজ থেকে আমাদের বড় পাওয়া। তামিম ইকবাল টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন। তার পরও ব্যাটিংয়ে ঘাটতি রয়েই গেছে।
‘নিষিদ্ধ’ ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগ (আইসিএল) ফেরত ক্রিকেটারদের বিসিবি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে। তাহলে এখন তো তাদের জাতীয় দলে খেলতে আর কোনো বাধা নেই। ব্যাটিং সাইডকে শক্তিশালী করতে হলে হাবিবুল বাশার, শাহরিয়ার নাফীস, আফতাব বা অলক কাপালির মতো পরীক্ষিত খেলোয়াড়দের মধ্য থেকে একাধিক খেলোয়াড়কে অতিসত্বর দলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি নির্বাচকেরা ভাববেন বলেই আশা করি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে দলে যে গতি এসেছে, তা ধরে রাখতে না পারলে আবারও হোঁচট খেতে পারে আমাদের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। তাই সাফল্যের জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে নতুন প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সংমিশ্রণ খুবই জরুরি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষ করেই ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলতে জিম্বাবুয়ে যাচ্ছেন টাইগাররা। আমরা আশা করি, সেখান থেকেও তাঁরা সিরিজ জয় করে দেশে ফিরবেন। দলের বিজয় যেমন জাতিকে আনন্দ দেয়, ঠিক তেমনি দায়িত্ববোধও বাড়িয়ে দেয় খেলোয়াড়দের। দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আশরাফুল তো বলেই বসলেন, ‘জয় একটা অভ্যাসের ব্যাপার।’ সত্যিই তাই। আমরাও বিশ্বাস করতে চাই, আমরা যেন প্রায়ই জয়ের দেখা পাই। জয় যেন সত্যি সত্যিই অভ্যাসে পরিণত হয়।
সফলতা ধরে রাখার দায়িত্ব শুধু খেলোয়াড়দের একার নয়। ভালো ফল পেতে ভালো খেলোয়াড়ের পাশাপাশি প্রয়োজন সুদক্ষ ব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও (বিসিবি) একটা বড় দায়িত্ব রয়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিভার অনুসন্ধান করতে বিসিবিকে আরও মনোযোগী হতে হবে। বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরি করতে হলে পেশাদারি ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দিতে হবে দেশের ছোট্ট শহরগুলোয়ও।
তারেক মাহমুদ, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
tareq.mahamud@gmail.com
মাতৃত্বকালীন ছুটি
আগস্টের ১ তারিখ থেকে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ উদ্যাপিত হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি জাতীয় অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কর্মজীবী নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাসের স্থলে ছয় মাস করার পরিকল্পনা আছে। শুনে ভালো লেগেছে। এ জন্য সরকারকে অভিনন্দন। কিন্তু ওই ঘোষণায় বলা হয়েছে, এর মধ্যে চার মাস সবেতন ও দুই মাস বিনা বেতনে ছুটির কথা।
আমাদের আবেদন, সবেতন ছুটি অন্তত পাঁচ মাস করা হোক। বাকি এক মাস বিনা বেতনে করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে নবজাতকের বাবা যদি সরকারি চাকরিজীবী হন, তাহলে তাঁকে অন্তত দুই সপ্তাহের পিতৃত্বকালীন ছুটির ব্যবস্থা করা হোক। কারণ, অনেক স্বামী-স্ত্রী আছেন, যাঁরা এককভাবে শহরে বসবাস করেন। অথচ শহরে তেমন আত্মীয়স্বজন নেই। এ ক্ষেত্রে স্বামীকেই স্ত্রী ও সন্তানের সেবাযত্নসহ আনুষঙ্গিক সব কাজ করতে হয়। স্বামী চাকরিজীবী হলে তাঁর জন্য একই সঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে। সামপ্রতিককালে দেখা যাচ্ছে, কর্মজীবী নারীদের অধিকাংশেরই নবজাতক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে জন্মলাভ করছে, যা ব্যয়বহুল। এ ক্ষেত্রে সীমিত আয়ের মানুষ হিসেবে ছয় মাসই সবেতন ছুটি হওয়া তাঁদের জন্য স্বস্তিদায়ক।
অন্যদিকে একজন মা সীমাহীন কষ্টের পর সন্তান জন্ম দিয়ে জাতিকে ভবিষ্যৎ নাগরিক উপহার দিচ্ছেন। সেই সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তার মৌলিক চাহিদা পূরণ করা অত্যাবশ্যক। এ ক্ষেত্রে শিশুর প্রথম ও প্রধান মৌলিক চাহিদা হচ্ছে মায়ের দুধ পান করার অধিকার। আমরা জানি, মায়ের সঙ্গে শিশুর রয়েছে গভীর সম্পর্ক, শিশুর সুস্বাস্থ্য ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি, সর্বোপরি শিশু মেধাবী হওয়ার জন্য মায়ের দুধ পান করার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু মা কর্মজীবী হলে শিশু এই অধিকার থেকে অনেক ক্ষেত্রেই বঞ্চিত হয়। শিশুর এই অধিকার রক্ষায় কর্মজীবী মায়েদের বিষয়টি তাই সরকারকেই ভাবতে হবে।
তাসনীম চৌধুরী
কাগাবলা, মৌলভীবাজার।
ভিক্টোরিয়া কলেজের ফলবিপর্যয় কেন
এবারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ফল ভালো হয়নি। কলেজটিতে পাসের হারের সঙ্গে সঙ্গে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যাও কমেছে। এমনকি পাসের হারের দিক থেকে কলেজের অবস্থান কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৫১তম। খবরটি চাউর হওয়ার পর কুমিল্লাজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ কলেজে শত শত জিপিএ-৫ (এসএসসিতে) পাওয়া শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়, কিন্তু ওরা বছর ঘুরেই হারিয়ে যায়। ওদের ফলাফলে ছন্দপতন ঘটে কেন? সবার একটাই প্রশ্ন, কী করে এ কলেজের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়া যাবে?
গত কয়েক বছরের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এসএসসিতে ভালো ফল করে এখানে ভর্তি হওয়ার পর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী আগের ফল ধরে রাখতে পারে না। ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ৫৬৩ জন এ কলেজে ভর্তি হয়ে এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১৫৮ জন। ২০০৬-২০০৭ শিক্ষাবর্ষে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ৬৭৭ জন ভর্তি হয়। এর মধ্যে ২৪০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। কত কয়েক বছর ধরেই উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল খারাপ হচ্ছে। এর কারণ খতিয়ে দেখা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে জিপিএ-৫ পাওয়ার হিসাবটা কোনো অবস্থাতেই মেনে নিচ্ছে না শিক্ষাসংশ্লিষ্ট মহল। তারা বলেছে, গৃহশিক্ষামুখী প্রবণতা, কোচিং-নির্ভরতা, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাসের প্রতি অনীহা, ভর্তিবাণিজ্য, প্রয়োজনীয়-সংখ্যক ক্লাসে উপস্থিতি না থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক চাপে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া, নির্বাচনী (টেস্ট) পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণদের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া, কলেজ চলাকালে প্রাইভেট পড়ানো, ছাত্র সংগঠনগুলোর অপতৎপরতা, বখাটেপনা, মাদকসেবীদের আড্ডা, অভিভাবকদের অসচেনতা ও শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলার প্রতি ঢিমেতাল ভাবের কারণে উচ্চমাধ্যমিকে ওই ফল বিপর্যয় হয়েছে।
মনে পড়ে, ‘আমরা যখন এ কলেজের শিক্ষার্থী ছিলাম, তখন ক্লাসমুখী প্রবণতা ছিল। উপস্থিতি নিশ্চিত করার বিষয়টিও ছিল চোখে পড়ার মতো। একই সঙ্গে সহশিক্ষা কার্যক্রমও ছিল। এখন দল বেঁধে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট আর কোচিং করতে যায়। শ্রেণীকক্ষগুলো আক্ষরিক অর্থে ফাঁকা থাকে। প্রাণহীন থাকে শ্রেণীকক্ষ।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উচ্চমাধ্যমিক শাখায় শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হলে বেশ কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। এগুলো হলো, অভিভাবকদের তাঁদের সন্তান কলেজে যাচ্ছে কি না তা তদারক করতে হবে; শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস নিতে হবে; সাপ্তাহিক, মাসিক পরীক্ষা ও মডেল টেস্ট নিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পর্যাপ্তসংখ্যক ক্লাসে উপস্থিতি ছাড়া চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া যাবে না; উচ্চমাধ্যমিক শাখাকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করে তা যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে; কলেজ কর্তৃপক্ষকে মনিটরিং সেল তৈরি করে পাঠদানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে; ভর্তিবাণিজ্য ঠেকানো ও শিক্ষাবর্ষের মাঝামাঝি যাতায়াত-সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী (বদলি হয়ে আসা) ভর্তি নেওয়া চলবে না। সংস্কৃতিচর্চার পরিবেশ তৈরি করে পাঠদান উজ্জীবিত করতে হবে। সর্বোপরি অধ্যক্ষের নেতৃত্বে শিক্ষকদের যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
তাই আসুন, সবাই মিলে কলেজটিকে বাঁচাই। কুমিল্লা অঞ্চলের সর্ববৃহৎ এ প্রতিষ্ঠান বাঁচলে মেধাবীরা ভালো করে উচ্চশিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে স্থান করে নিতে পারবে।
গাজীউল হক, সাংবাদিক ও সাবেক শিক্ষার্থী,
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ।
gajiulhoqsohag@gmail.com
আলোকিত মানুষের সন্ধান
প্রথম আলোর ১০ জুলাই সংখ্যায় প্রয়াত দেশপ্রেমী শামসুদ্দীন মোল্লার ওপর তমাল তাহসীনের লেখাটির জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।
অনেক দেরিতে হলেও আমরা, তাঁর সন্তানেরা, শামসুদ্দীন মোল্লা স্মারক গ্রন্থ প্রকাশ করতে চলেছি। কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। যাঁরা বাবার সম্পর্কে সবচেয়ে ভালো বলতে পারতেন, তাঁরা অনেক আগেই দেশের শত্রুদের হাতে নিহত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেই, নেই তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতা, যাঁদের কাতারে থেকে তিনি আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন। তবুও গেল দুটো বছর আমরা, বিশেষভাবে আমাদের অগ্রজ শাহরিয়ার রুমী অক্লান্ত পরিশ্রম করে সাক্ষাত্কারগুলো নিয়েছেন। শুধু বাবার রাজনৈতিক, সামাজিক সহকর্মী নন, গাজীউল হকের কথার মতো তাঁকে যাঁরা চিনতেন, সেই ছোটবেলা থেকে, সেই সব মানুষকেও আমরা শামিল করেছি এই স্মৃতিগ্রন্থে। আমরা ছয় ভাই, ছয় বোন যার যার পেশাগত দায়িত্ব পালন করার পরও বাবার আদর্শের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি। স্মারক গ্রন্থটি সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারলে আমরা পরিবার থেকে একটি সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে পারব বলেই বিশ্বাস করি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি অনেক ছোট, তবু স্মৃতিতে অম্লান কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি স্মারক গ্রন্থে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর যে নির্যাতন নেমে আসে আমাদের পরিবারের ওপর, সেটা একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সংবিধান রচয়িতাদের অন্যতম, গণতন্ত্রের একনিষ্ঠ কর্মীর পরিবার স্বাধীন দেশে প্রত্যাশা করে না। দীর্ঘ ছয় মাস আমাদের ফরিদপুরের বাড়ি ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। এর পর তিন বছর আমরা ঢাকায় শাহজাহানপুরের একটি বাসায় আত্মগোপন করেছিলাম। বাবা বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছেন, আমার বড় ভাই শাহরিয়ার রুমীও তাঁর সঙ্গে। আমার মেজ ভাই জাকারিয়া জামী তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ছাত্র। আট ভাইবোন নিয়ে আমার মায়ের সেই দুর্বিষহ জীবন, আমাদের সেই আতঙ্ক আর উদ্বেগ, তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের এই রূপকারকে নিজের দেশে নির্মম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। কারণ তিনি রাজপথে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার হত্যার বিচার চেয়েছিলেন। ইতিহাসের প্রয়োজনেই শামসুদ্দীন মোল্লাকে জাতি মনে রাখবে। তাঁকে কোনো দিন ভোলা সম্ভব নয়।
ধন্যবাদ প্রথম আলোকে; তাদের আলোকিত মানুষের সন্ধান অব্যাহত থাক। স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের হাতে আমরা গর্ব করে তুলে দিতে চাই একজন আদর্শ ব্যক্তির প্রতিকৃতি।
কামরুজ্জামান কাফী, ঢাকা।
ঢাকার ট্রাইবাল হোস্টেলটির সংস্কার প্রয়োজন
ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত পাহাড়ি ছাত্রদের জন্য সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া একমাত্র হোস্টেলটির সংস্কার করা অতীব জরুরি। সুদূর পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক পাহাড়ি শিক্ষার্থীদের ঢাকায় এসে খুব আবাসন সমস্যায় পড়তে হয়। এই আবাসন সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে তৎকালীন সরকার ঢাকার মোহাম্মদপুরে ’ক’ তালিকাভুক্ত একটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রাবাস হিসেবে বরাদ্দ দেয়। পার্বত্য এলাকার অনেক কৃতী শিক্ষার্থী এই ছা্ত্রাবাসে অবস্থান করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ অন্যান্য নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সুযোগ পেয়েছেন। দেশের অনেক প্রতিষ্ঠিত আদিবাসী ব্যক্তি এই ছাত্রাবাসে বসবাস করে লেখাপড়া করেছেন, যাঁর মধ্যে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা তাঁদের সমমর্যাদার অনেকে ছিলেন। এ থেকেই বোঝা যায়, পাহাড়িদের শিক্ষা বিস্তারে এই ছাত্রাবাসের গুরুত্ব কতটা।
কিন্তু আজ বড়ই দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, এই হোস্টেলটি বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে এবং যেকোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে। আমরা চাই না, এই হোস্টেলটির পরিণতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মতো হোক। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর জগন্নাথ হলের ছাদ ধসে প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর করুণ মৃত্যু হয়।
১৯৮৩ সালে ছাত্রাবাসের বাড়িটি বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত এটির কোনো প্রকার সংস্কার হয়নি। বর্তমানে হোস্টেলটির পয়োনিষ্কাশন ও পানি সরবরাহব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। দরজা-জানালা খুলে খুলে পড়ছে, দেয়ালের আস্তর খসে পড়ছে। বর্ষাকালে ছাদের বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি পড়ে। এ ব্যাপারে পার্বত্য চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে লিখিতভাবে অনেক আবেদন করা সত্ত্বেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। হোস্টেলটি সংস্কার করা তাদের আওতাভুক্ত নয় বলে দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়ার পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বিনীত অনুরোধ, অবিলম্বে ট্রাইবাল হোস্টেলটির সংস্কার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হোক।
মেরিন চাক্মা, অনন্ত বিকাশ ধামাই, ছোটন তঞ্চঙ্গ্যা, ক্যশৈনু মার্মা, জেমসন আমলাই বম
আবাসিক শিক্ষার্থী,
ট্রাইবাল হোস্টেল, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
প্রসঙ্গ জ্বালানি নিরাপত্তা
১৪ জুলাই প্রথম আলোতে অধ্যাপক আবু আহমেদের ‘জ্বালানি নিরাপত্তা: সরকারি উদ্যোগে এত দিনে কয়লা উঠে যেত’ শীর্ষক লেখাটি পড়লাম। এতে তিনি বিদেশি কোম্পানি ও বেসরকারি খাতের বদলে সরকারি সংস্থা ও সরকারি মালিকানার বিষয়টি উচ্চকিত করে তুলেছেন। এটি তাঁর দ্বৈতনীতি বলে মনে হয়।
নিবন্ধের বেশির ভাগ জায়গাজুড়ে আবু আহমেদ বিদেশি জ্বালানি কোম্পানির সঙ্গে দেশি সংস্থা-কোম্পানির চুলচেরা তুলনা করেছেন। ‘বাপেক্সের গ্যাস কেনা হয় প্রতি ইউনিট ২৫ টাকা, যেখানে বিদেশি কোম্পানিগুলো থেকে সেই একই গ্যাস কেনা হয় ২৫০ টাকা করে। বাপেক্স ট্যাক্স দেয়, বিদেশি কোম্পানিগুলো ট্যাক্স দেয় না। বাপেক্স পেমেন্ট পায় দেশীয় টাকায়, বিদেশি কোম্পানিগুলো পেমেন্ট পায় ডলার-ইউরোতে।’ এভাবে তিনি বিদেশি কোম্পানিকে দেশের জন্য ক্ষতিকর ও দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন।
বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের বিনিয়োগনীতির আওতায় ট্যাক্স হলিডেসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদেশি কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য স্বাগত জানানো হয়েছে। খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের মতো বিনিয়োগঘন বাণিজ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বীকৃত উত্পাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি)। ওই চুক্তির অনুকরণে এ দেশে সম্পাদিত মডেল পিএসসি আশির দশক থেকে চলে আসছে। এর মোদ্দা কথা, বিদেশি কোম্পানি নিজ খরচে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলন করবে। আবিষ্কৃত সম্পদের একটি হিস্যা থেকে তারা খরচ উসুল (কস্ট রিকভারি) করবে। বাকি উত্পাদন থেকেও ছোট্ট অংশ একটি পাবে।
সমস্যা হচ্ছে, বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ ভূগর্ভস্থ অনাবিষ্কৃত খনিজ মজুদকেও সম্পদ হিসেবে ধরে নেন। ফলে পিএসসির কস্ট রিকভারির গ্যাস আন্তর্জাতিক দামে কেনাকেও মনে হয় আমাদের গ্যাসই বিদেশিদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনছি। আমাদের যদি অর্থ ও প্রযুক্তি সক্ষমতা থাকত, তাতেও তো আবিষ্কৃত সম্পদ থেকে অনুসন্ধান-উন্নয়ন খরচ বাদ দিতে হতো। উন্নত, অনুন্নত বহু দেশ জাতীয় খরচে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের ঝুঁকি নিতে পারে না বলে বিশেষায়িত কোম্পানির ওপর নির্ভর করে। ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বহু সংগতিসম্পন্ন দেশও দেশি-বিদেশি বেসরকারি কোম্পানির ওপর নির্ভর করে তাদের খনিজ সম্পদ তুলছে। আমাদের দেশের বিনিয়োগনীতিতে দেশি-বিদেশি সব বিনিয়োগের সমানাধিকার নিশ্চিত করার পর ‘বিদেশি খেদাও’ মনোভাব প্রকাশ কতটা যৌক্তিক?
আলোচ্য লেখাটির উপসংহারে আকস্মিকভাবে দেশের কয়লাসম্পদকে জোর করে টেনে আনা হয়েছে। বিদেশি কোম্পানির মাধ্যমে কয়লা তোলার মধ্যে ‘ষড়যন্ত্র’র গন্ধ খুঁজে বলা হয়েছে, ‘সরকারি উদ্যোগে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত হলে ফুলবাড়ীর কয়লা এত দিনে উঠে যেত। উত্তোলনপদ্ধতি নিয়েও এত বিতর্ক হতো না।’
সরকারি উদ্যোগে কয়লা তোলার সিদ্ধান্ত হলে বিতর্ক হতো না—এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? তাহলে উত্তোলনপদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক কি নিছক বিদেশি কোম্পানির জন্য? আর ফুলবাড়ীর কয়লা সরকারি মালিকানায় উঠলেই বা কী হতো? আমরা জানি, সরকারি সংস্থা পেট্রোবাংলা বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা তুলছে। কিন্তু পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে, ‘বড়পুকুরিয়ায় দুই লাখ ৩২ হাজার টন কয়লা খনিতে অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে আছে।’ এই কয়লা তুলতে ভূমিধ্বস ও পরিবেশের সমস্যা নিয়েও এলাকায় অস্থিরতার কমতি নেই।
প্রথম আলোতে ১৯ জুলাই প্রকাশিত ‘জ্বালানি: আমদানি বনাম অবিক্রীত দেশি কয়লা’ শীর্ষক লেখায় ড. মুশফিকুর রহমান বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, মেঘালয়ের কয়লা দেশে উত্পাদিত কয়লার চেয়ে দামে সস্তা। বড়পুকুরিয়ার কয়লার মূল্য যেখানে ৯৭ মার্কিন ডলার, সেখানে মেঘালয়ের কয়লা আমদানি করা হচ্ছে টনপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকায়। ‘নিম্নমানের আমদানি করা কয়লা পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে কি না তা উচ্চমূল্যের দেশি কয়লার কাছে গৌণ হয়ে যাচ্ছে। সরকার, আমদানিকারক ও ক্রেতা সম্মিলিতভাবেই সস্তা কয়লা চাইছে। ...সরকারি মালিকানায় বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা অবিক্রীত থাকা সত্ত্বেও নিম্নমানের কয়লা আমদানির ফলে খনির অর্থনৈতিকভাবে টিকে থাকা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। পরিবেশ বা সরকারি মালিকানার খনি প্রসঙ্গটি ভোক্তার জন্য সামান্যই অর্থ বহন করে, যদি উত্পাদিত কয়লা বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে।’ এখানে বাজারকেই মুখ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশি মালিকানা ও দেশি কোম্পানির টিকে থাকাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশি কোম্পানি ও মালিকানার প্রশ্নে যারা উচ্চকিত, তাদের এই বাজার বাস্তবতা স্বীকার না করে উপায় নেই।
অধ্যাপক আবু আহমেদ বরাবর বেসরকারি খাতে ব্যবসা পরিচালনার ওপর জোর দিয়ে আসছেন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর এই বিপরীত অবস্থান কেন?
চম্পক চৌধুরী, ঢাকা।
champaok_chowdhury@yahoo.com
তিনটি ছবি: অতঃপর...
ছবি তিনটি দুর্লভ কোনো ছবি নয়। এক মুক্তিযোদ্ধা অভাবের তাড়নায় তাঁর বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ হওয়ার পদক বিক্রি করতে চান। বুকের কাছে সেই পদকের স্মারক তুলে ধরা ছবি। অন্যটি তাঁতীবাজারের একটি বিদ্যালয়কক্ষের ছাদের একাংশ খসে পড়া অবস্থায় শিক্ষার্থীদের ছবি। তৃতীয় ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সপরিবারে প্রধানমন্ত্রীর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ছবির নিচে শিরোনামে লেখা, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার বিধান। ছবিগুলো সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হয়নি সাংবাদিকদের। কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ছাপা হয়েছে বলেও মনে হয় না। ছবিগুলো ছাপা হয়েছে গত ৭ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে।
তিনটি ছবি একই পাতায় ছাপা হওয়ায় চোখের জলের আর হতাশার পাশাপাশি প্রাপ্তির হাসি বড্ড চোখে লাগছিল। আমরা যদি বাংলাদেশকে একটি পরিবার ভাবি, তবে বিপুল ভোটে বিজয়ী শেখ হাসিনাই সেই পরিবারের অভিভাবক। ১৫ কোটি সন্তান তাকিয়ে থাকে তাঁর দিকে। আর যদি সেই সন্তান হয় সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা, যাঁদের বদৌলতে এ দেশে স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র এসেছে; তাঁদের আদর মা তথা অভিভাবকের কাছে তো একটু বেশিই হওয়ার কথা। কিন্তু একি! মায়ের সন্তানেরা কি ভালো আছে? মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাক আহমেদ অভাবের তাড়নায় বিক্রি করতে চান তাঁর অর্জিত বর্ষসেরা অ্যাথলেট হওয়ার পদক। আর অন্য ছবিটিতে জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের মাথায় ভেঙে পড়েছে অর্ধশত বছরের পুরোনো বিদ্যালয়ের ছাদ। তাতে আহত হয়েছে সাত শিশু।
ছবি তিনটি যেন বাংলাদেশের প্রতীকী চিত্র।
শাহানা আক্তার, মহাখালী, ঢাকা।

No comments

Powered by Blogger.