ভোক্তাদের স্বার্থরক্ষায় এ আইন সংশোধন করতে হবে -সংরক্ষণের নামে অধিকার হরণ

অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল শিশুখাদ্য বা নকল ওষুধ বিক্রি করবেন, তা খেয়ে মারা যাবে কোলের শিশু, মা-বাবা বুকফাটা আর্তনাদ করবেন; কিন্তু কোনো প্রতিকার চাইতে পারবেন না, আদালতে মামলা করতে পারবেন না। কার্যত এমনই বিধান রাখা হয়েছে সম্প্রতি প্রণীত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের নামে এ আইনে আসলে ভোক্তার অধিকার হরণ করা হয়েছে।
সোমবারের প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুধু শিশুখাদ্য বা খাদ্যপণ্য নয়, বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাবে না। কোনো বিক্রেতা পণ্যের উত্পাদনপ্রক্রিয়ায় জড়িত না থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। সরাসরি কারও বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন না ভোক্তা; ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করতে হবে। কিন্তু অভিযোগ দায়েরের ৯০ দিনের মধ্যে যদি অভিযোগপত্র দাখিল করা না হয়, তাহলে সে মামলা আদালতে আমলযোগ্য হবে না। ফলে বহুলপ্রতীক্ষিত আইনটি প্রণয়নের দুই মাসের মধ্যেই এটি সংশোধনের জোর দাবি উঠেছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের নামে অধিকার হরণের এ প্রহসন কেন? এ আইনে যেভাবে ভোক্তাদের অধিকার কেড়ে নিয়ে অসত্ উত্পাদনকারী ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে, তাতে ব্যবসায়িক অসততা ও ভেজালকেই উত্সাহিত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল এ আইন না করাই বরং ভালো ছিল। তাহলে সরকারের পবিত্র দায়িত্ব কোনটি? ভোক্তাদের অধিকার দেখা, নাকি অসত্ ব্যবসায়ীদের রক্ষা করা? আইনের ৭২ ধারায় ওষুধবিষয়ক বিশেষ বিধান-(১) শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘ঔষধে ভেজাল মিশ্রণ বা নকল ঔষধ প্রস্তুত করা হইতেছে কি না, অনুসন্ধান করিয়া উহা উদ্ঘাটন করিবার ক্ষমতা ও দায়িত্ব মহাপরিচালকের থাকিলেও উহাদের বিষয়ে এই আইনের অধীন কোনো বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম গ্রহণ বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করা যাইবে না।’ অবাক ব্যাপার, কোনো রাষ্ট্র কীভাবে পারে তার নাগরিকের ন্যায়সংগত বিচার পাওয়ার অধিকার এভাবে কেড়ে নিতে? সম্প্রতি রিড ফার্মার প্যারাসিটামল সিরাপে বিষাক্ত উপাদান পাওয়া গেছে। সেই সিরাপ খেয়ে ২৫ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কিডনি নষ্ট হয়ে অনেক শিশুর জীবন এখনো সংকটাপন্ন। এসব শিশুর মা-বাবারা কি তাঁদের শিশুহত্যার বিচার দাবি করতে পারবেন না? কোনো ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন না?
ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা জাতির সঙ্গে প্রতারণারই নামান্তর। তাই আইনটি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে; তা না হলে জাতির সঙ্গে প্রতারণার ভয়াবহ পরিণতি দেখার জন্য সবাইকে প্রস্তুত হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.